সিরিয়া অভিযানে ক্যামেরনকে বিমুখ করলেন এমপিরা

সিরিয়ায় সামরিক অভিযান পরিচালনার ব্যাপারে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের প্রস্তাবে সায় দেয়নি দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্স।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে আইনপ্রণেতাদের (এমপি) ২৮৫-২৭২ ভোটে প্রস্তাবটি নাকচ হয়ে যায় বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে জানানো হয়েছে।
১৭৮২ সালের পর ডেভিড ক্যামেরনই প্রথম ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী, যাঁর সামরিক প্রস্তাব পার্লামেন্টের অনুমোদন পেতে ব্যর্থ হলো। এতে  সিরিয়ায় অভিযান চালাতে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এ ছাড়া এই অবমাননাকর ঘটনা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্যামেরনের নির্বাচিত হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভোটের পর আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন বলেন, পার্লামেন্টের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে তিনি কিছু করবেন না। তিনি বলেন, ‘ব্রিটিশ জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে। জনগণ চায় না ব্রিটিশ সামরিক বাহিনী সিরিয়ায় কোনো অভিযানে যুক্ত হোক। আমি এটি বুঝতে পেরেছি এবং সরকার সেভাবেই যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।’
ভোটাভুটির পর ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড বলেন, যুক্তরাজ্যের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র এ কারণে হতাশ হবে।
অবশ্য মিত্রদের সহযোগিতা না পেলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা একাই সিরিয়া অভিযানের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা। তবে এখনো যুক্তরাষ্ট্র এ ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।

সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহারের ঘটনায় বিশ্ববাসীর অলসভাবে বসে থাকা উচিত নয় বলে মন্তব্য করার পর বিরোধী দল লেবার পার্টি, এমনকি নিজ দলের আইনপ্রণেতাদেরও তোপের মুখে পড়েছিলেন ক্যামেরন। তাঁরা সামরিক হামলার আগে সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্রের নিশ্চিত ব্যবহার হয়েছে, এমন প্রমাণ চেয়ে বসেন প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরনের কাছে। তিনি এমন কিছু হাজির করতে ব্যর্থ হওয়ায় শেষ পর্যন্ত আইনপ্রণেতারা তাঁকে অভিযান চালানোর ব্যাপারে অনুমোদন দেননি।

যুক্তরাজ্য গত সপ্তাহে সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার-সংক্রান্ত গোয়েন্দা তথ্য প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, নিঃসন্দেহে সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে এবং শত শত লোককে হামলার উদ্দেশে ওই অস্ত্রের ব্যবহারের পেছনে সিরিয়ার সরকারের হাত আছে।

তবে বিরোধীরা সিরিয়ায় হামলা চালাতে ক্যামেরনের এসব পদক্ষেপকে এক দশক আগে ইরাক আক্রমণে যুক্তরাষ্ট্রকে সাহায্য করে যুক্তরাজ্য যে ভুল করেছিল, তারই প্রতিফলন হিসেবে চিহ্নিত করে।

দামেস্কে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে কয়েক শ মানুষকে হত্যার জন্য সিরিয়ার বাশার আল আসাদ সরকারকে দায়ী করে এই সেনা অভিযান চালাতে চায় পশ্চিমা দেশগুলো। এ বিষয়ে যুক্তরাজ্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব দেয় গত বুধবার। সিরিয়ার মিত্র রাশিয়া ও চীন বলছে, সিরিয়া সরকারই গ্যাস হামলার জন্য দায়ী কি না, তা প্রমাণ হওয়ার আগেই অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না।

No comments

Powered by Blogger.