কে জানাবে সিরিয়ার প্রকৃত চিত্র?

ইরাক-আফগানিস্তানের মতো সম্ভবত আরেকটি যুদ্ধের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বিশ্ববাসী। বরাবরের মতো এবারও আলোচনায় মিডিয়া।
প্রশ্ন উঠেছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি সিরিয়ায় হামলা চালায়, তবে দামেস্ক থেকে প্রতিবেদন পাঠাবেন কে? কারণ, খুব অল্প সংখ্যক মিডিয়া কর্মীদের সেখানে প্রবেশাধিকার রয়েছে। আর মিডিয়া কর্মীর সংখ্যা অপ্রতুল হলে প্রকৃত যুদ্ধাবস্থার সঠিক চিত্র বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছানো নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

এ নিয়ে বুধবার বিশ্বের জনপ্রিয় অনলাইন হাফিংটন পোস্ট ‘সিরিয়া মাস্ট বি রিপোর্টেড বাট বাই হু’ শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘটনাস্থল থেকে সিরিয়ার প্রকৃত চিত্রধারণ সত্যিই দুষ্কর হয়ে পড়েছে। কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট নামের একটি সংগঠন জানিয়েছে, ২০১২ সালে সিরিয়ায় ২৮ জন সংবাদিক প্রাণ হারান। আর অপহরণ দেশটিতে একটি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে।

আল-কায়েদার সঙ্গে সংযুক্ত বিদ্রোহীদের হাতে অপহণের ভয় নিত্যদিন সাংবদিকদের তাড়া করে ফেরে। এ বিষয়ে নিউইয়র্ক টাইমস শুক্রবার এক মার্কিন আলোকচিত্রীকে অপহরণ বিষয়ক একটি প্রতিবেদন ছাপে। ওই আলোকচিত্রী সাত বছরের বন্দিদশা থেকে কোনোমতে পালিয়ে আসতে সক্ষম হন।

এনবিসি’র সংবাদকর্মী রিচার্ড এনজেলকে অপহরণ করা হয়েছিল। ডিসেম্বরে মুক্তি পেয়ে তিনি তুরস্ক সীমান্ত দিয়ে আবার সিরিয়ায় প্রবেশ করেন।

এছাড়াও রয়েছে ভিসা জটিলতা। দুই-একটা গণমাধ্যমকে ভিসা দেওয়া হলেও তা আবার বিভিন্ন শর্তে মোড়ানো এবং ক্ষণস্থায়ী। ওয়াশিংটন পোস্টের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ডগলাস জেল এক বছরের বেশি সময় চেষ্টা করেও একটি ভিসা জোগাড় করতে পারেননি।  

নিউইয়র্ক টাইমসের পররাষ্ট্র সম্পাদক জো খান বলেছেন, অনেক চেষ্টা করার পরও ভিসা না পাওয়ায় দামেস্কে আমাদের কোনো স্টাফ রিপোর্টার নেই। কিন্তু বিশ্বস্ত সূত্র থেকে আমরা প্রতিবেদন তৈরি করে যাচ্ছি।

অন্যদিকে টাইমসের কিছু প্রতিবেদক ও আলোকচিত্রী দামেস্কে থাকা সত্ত্বেও তারা তাদের চাহিদামতো স্থানে যেতে পারছেন না। ভিসা থাকা সত্ত্বেও রিপোর্টারদের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। কেবলমাত্র সরকারি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থেকেই ছবি তোলা বা ভিডিও ধারণ করা সম্ভব।

প্লেটজেন বলেছেন, সামরিক বাহিনীর অধীনে থেকে ছবি বা  ভিডিও ধারণ সত্যিই হতাশাজনক। এই মুহুর্তে দামেস্কের জনগণ বিভিন্ন বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চান, তাদের মনের কথা জানাতে চান। কিন্তু বিদ্রোহীদের খবরদারির কারণে তা সম্ভব হয়ে উঠছে না।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সাংবাদিকরা ভিসা পাওয়ায় ব্যর্থ হলেও অন্য উপায়ে  সংবাদ সংগ্রহ করতে পারেন। লেবাননের বৈরুত বা সিরিয়ান সীমান্ত থেকে অথবা অবৈধভাবে দেশটিতে প্রবেশ করে তারা রিপোর্ট করতে পারেন। আর এর সবকিছুই হতে পারে বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে। এভাবেই কিছু অবিশ্বাস্য রকমের ভালো প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে।

এছাড়া আরও কিছু পথের মাধ্যমে সিরিয়া নিয়ে রিপোর্ট করা যায়।

জেনিন ডি গিওভান্নি নামের একজন প্রখ্যাত যুদ্ধ সাংবাদিক বলেন, সিরিয়ায় সর্বত্র মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। সিরিয়াকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।

সিএনএন পত্রিকার প্লেটজেন হাফিংটন পোস্টকে এক ই-মেইল বার্তায় জানান, দামেস্কের লোকজন চলমান সঙ্কটে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততায় ভীত হয়ে পড়েছেন। এর ফলে সিরিয়ায় আরো বড় ধরনের সহিংসতা ছড়িয়ে পড়বে বলে ধারণা করছেন সিরিয়াবাসী।

তিনি তার বার্তায় জানান, অধিকাংশ লোকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা দেশে স্থিতিশীলতা চান। সরকারি কর্মকর্তারা বুঝতে পারছেন, যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় হামলার বিষয়ে খুবই সিরিয়াস। যদিও হামলা হলে তারা প্রতিরোধের হুমকি দিচ্ছে, কিন্তু তারপরও তাদের সুর এখন বেশ নরম বলেই মনে হচ্ছে।

প্লেটজেন বলেন, আমি মনে করি, যুদ্ধের শুরুতেই মনে হচ্ছে আসাদ ও তার সামরিক বাহিনী জনগণের বিপক্ষে। কিন্তু এখন অনেক লোক আছেন, যারা এ অবস্থা সত্ত্বেও আসাদ সরকারকে সমর্থন করেন। তারা এর বিকল্প কিছুতে ভয় পান। তারা কোন দলের, এটা বড় কথা নয়। তারা যে সিরিয়ার নাগরিক এটাকেই তারা বড় করে দেখেন।  কিন্তু সামাজিক এই সত্যটি ধ্বংস করা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার সিরিয়ায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়ালিদ মুয়ালেম দামেস্কে আন্তর্জাতিক এক সংবাদ সম্মেলনে যখন কথা বলছিলেন, তখন ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিনিধি সাম ডগার রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করেছিলেন।

তামাম যুক্তরাষ্ট্র থেকে একমাত্র রিপোর্টার হিসেবে তিনিই প্রশ্নটি করেছিলেন। শুধু প্রশ্নকর্তাই নয়, দামেস্কে যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র প্রতিনিধিও তিনি।

আর সিএনএনের ফ্রেডিক প্লেটজেন সিরিয়ার তথ্যমন্ত্রী ওমর আল-জুবাইয়েরে একটি এক্সক্লুসিভ সাক্ষাতকারের জন্য গত কয়েকদিন ধরে অপেক্ষা করছিলেন। প্লেটজেন ছিলেন সিরিয়ায় পশ্চিমা দেশগুলো থেকে একমাত্র প্রতিনিধি।

প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, গত কয়েকদিন ধরে গণমাধ্যমে তথ্য পরিবেশনের ধরন দেখে মনে হচ্ছে, তারা প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে সিরিয়ায় রাসায়নিক হামলা করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমগুলোতে হামলা কখন হবে কিংবা এর পরিণতি কি হবে সে বিষয়ে কোনো প্রশ্ন তোলেনি।

আরেকটি সমস্যা হচ্ছে, সিরিয়ার মন্ত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা।  তাদের মধ্যে কোনো মুখপাত্র নেই অথবা মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলবেন, এমন কেউই নেই।

এ বিষয়টাকে সিরিয়ায় স্বচ্ছতার সংস্কৃতি নেই বলে উল্লেখ করেন প্লেটজেন।

No comments

Powered by Blogger.