চাকরিরত অবস্থায় মারা গেলে পাঁচ লাখ টাকা অনুদান by আশরাফুল হক রাজীব

চাকরিরত অবস্থায় মারা গেলে সরকারি কর্মচারীদের পরিবারের সদস্যরা পাঁচ লাখ টাকা অনুদান পাবে। গুরুতর আহত হয়ে স্থায়ীভাবে অক্ষম হয়ে গেলে দেওয়া হবে দুই লাখ টাকা। দাফন-কাফনের টাকা পাঁচ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে গতকাল বুধবার তা বিজি প্রেসে পাঠানো হয়েছে। সরকারের সাড়ে ১২ লাখ কর্মচারী চাকরিরত অবস্থায় মারা গেলে তাঁদের পরিবারের সদস্যরা এই আর্থিক সুবিধা পাবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ করা টাকা থেকে এ ব্যয় মেটানো হবে। স্থায়ীভাবে অক্ষম বলতে কী বোঝাবে এবং এ ব্যয় কিভাবে নির্বাহ হবে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য একটি নীতিমালা হবে। সরকারি কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মতামত দেওয়া-সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি এ নীতিমালা প্রণয়ন করবে। আর দাফন-কাফন বাবদ পাঁচ হাজার টাকার পরিবর্তে ২৫ হাজার টাকা পুনর্নির্ধারণের বিষয়টি বাস্তবায়ন করবে সরকারি কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড।
চাকরিরত অবস্থায় মারা গেলে সরকারি কর্মচারীদের পরিবারের সদস্যদের একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অনুদান দেওয়ার দাবি দীর্ঘদিনের। সরকার নানা অজুহাতে এত দিন এ দাবিটি পাশ কাটিয়ে গেছে। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের প্রত্যাশিত মহার্ঘ ভাতা না দিয়ে স্থায়ী বেতন কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে। মহার্ঘ ভাতা না পেয়ে কর্মচারীরা সরকারের ওপর অসন্তুষ্ট হন। তাঁদের ক্ষোভ দূর করার জন্যই এই বিশেষ অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া কর্মরত অবস্থায় মারা গেলে সরকারি কর্মচারীর পরিবারটি বিপন্ন হয়ে পড়ে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ওই পরিবারটির ভরণ-পোষণের কোনো ব্যবস্থা থাকে না। চাকরির নির্দিষ্ট মেয়াদ পার না করলে তারা পেনশন থেকেও বঞ্চিত হয়। গত ১৭ এপ্রিল সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের একান্ত সচিব (পিএস) টাইগার জাম্বিল সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন। পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসকরা তাঁকে অন্য হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। জাম্বিলকে একটি খ্যাতনামা বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুর্ঘটনার এক মাস পর গত ১৭ মে তিনি মারা যান। বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা বিল আসে ১৭ লাখ টাকা। যা দেওয়ার মতো অবস্থা ছিল না টাইগার জাম্বিলের পরিবারের। যথাসময়ে বিল পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় হাসপাতালের সঙ্গে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। শেষ পর্যন্ত তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা চাঁদা তুলে আড়াই লাখ টাকা তাঁর পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেন। অবশিষ্ট টাকা আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধার করে হাসপাতালের বিল মেটানো হয়। টাইগার জাম্বিলের পরিবার বর্তমান নিঃস্ব অবস্থায় রয়েছে বলে একজন সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এ ছাড়া বর্তমান সরকারের শুরুতেই একজন সচিব হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। তাঁর বিল পরিশোধেও অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়।
সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভুঁইয়া মিলন কালের কণ্ঠকে বলেন, চাকরিরত অবস্থায় একজন সরকারি কর্মচারী যেখানেই মারা যান, তাঁর পরিবারের সদস্যরা এ অনুদান পাবে। সরকারি কর্মচারীরা চাকরির বয়স ২০ বছর না হলে পেনশন পান না। এই অবস্থায় কারো মৃত্যু হলে সেই পরিবারটিকে পথে বসতে হয়।

No comments

Powered by Blogger.