সংসদে শাম্মী একি বললেন?হতবাক বিএনপি এমপিরাও

জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির সংসদ সদস্য মোছাম্মৎ শাম্মী আক্তারের বক্তব্যে অবাক হলেন খোদ বিরোধীদলীয় সদস্যরা।
আর সরকারদলীয় সদস্য তাঁর বক্তব্য চলাকালে হই-হট্টগোল করার পাশাপাশি বক্তৃতা শেষ করার পর ছিঃ ছিঃ, শেম শেম ও ধিক্ ধিক্ বলে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। আর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী তাঁকে বারবার সতর্ক করার পাশাপাশি একবার মাইক বন্ধ করে দেন।
গতকাল বুধবার রাতে আলোচনা করতে গিয়ে শাম্মী আক্তার সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতাদের কঠোর সমালোচনা করতে গিয়ে অসংসদীয় ভাষাও ব্যবহার করেন। একপর্যায়ে সরকারের উদ্দেশে তিনি কবি হেলাল হাফিজের একটি কবিতা পড়ে শোনান। কবিতার শেষে ছিল- 'আমিও গেরামের পোলা, চুতমারানি গাল দিতে জানি।' এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে অধিবেশন কক্ষে তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরা সম্মিলিতভাবে টেবিল চাপড়ে হই হই করে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। তাঁরা ছিঃ ছিঃ, শেম, শেম ও ধিক্ ধিক্ বলে তাঁকে ভর্ৎসনা করতে থাকেন। এ সময় বিএনপির সদস্যদেরও চোখেমুখে ছিল বিস্ময়ভাব। এর একপর্যায়ে শাম্মী আক্তার অধিবেশন কক্ষ থেকে দ্রুত বেরিয়ে যান। আর স্পিকার শাম্মী আক্তারের অসংসদীয় সব ভাষা এক্সপাঞ্জের ঘোষণা দেন।
এর আগে স্পিকার অসংসদীয় ভাষা ব্যবহার থেকে বিরত থাকার জন্য সতর্ক করার পাশাপাশি বাজেটের ওপর আলোচনার আহ্বান জানালে শাম্মী আক্তার বলেন, সরকারি দলের সদস্যরা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে নারীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনেছেন। এ ক্ষেত্রে কারা শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন- শাম্মী আক্তার মহলবিশেষের প্রতি ইঙ্গিত করে তা জানতে চান।
প্রস্তাবিত বাজেটকে 'লোপাটের' বাজেট আখ্যায়িত করে শাম্মী আক্তার বলেন, গণতন্ত্রের জন্য বর্তমান সরকারের আর কত রক্ত চাই? সরকারের বিরুদ্ধে লিখলেই মিডিয়া বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। কিসের এত ভয় সরকারের? তারেক রহমান আগামী দিনের রাষ্ট্রনায়ক। তারেক রহমানের একটি বক্তব্যে সরকারের মধ্যে ভূমিকম্প শুরু হয়েছে। অবশ্যই দেশে ফিরে দেশের জনগণের জন্য রাজনীতি করবেন। চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকারকে জনগণ ঝেঁটিয়ে বিদায় করে দিয়েছে। আগামী নির্বাচনেও একই অবস্থা হবে ভেবেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিচ্ছে না। তিনি দ্রুত ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন দাবি করেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার বীর উত্তম বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট মোটেই অস্বাভাবিক বা উচ্চাভিলাষী নয়, বরং বাজেটের আকার আরো বড় হওয়া প্রয়োজন ছিল। আমাদের দেশে কর আদায়ের প্রক্রিয়া খুব জটিল, মানুষ প্রায়ই হয়রানির শিকার হন। এই প্রক্রিয়া আরো সহজ করতে হবে। তিনি বলেন, সরকারের দক্ষ পদক্ষেপের কারণে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে রাখা সম্ভব হয়েছে। দরিদ্রতার হার উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে দলমত নির্বিশেষে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। সবাইকে জনবান্ধব হতে হবে। হরতাল-অবরোধ-ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের পথ পরিহার করলে প্রস্তাবিত বাজেট শত ভাগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
বিএনপির আশরাফ উদ্দিন নিজাম সরকারের সমালোচনা করে বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোটকে দমন করতেই সন্ত্রাসবিরোধী আইন করা হয়েছে। যত বড় বাজেটই দিন না কেন, আগামী নির্বাচনে দেশের জনগণ আর আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে না। সিটি করপোরেশনে জনগণ রায় দিয়ে দিয়েছে। কোথায় পালাবেন সেটাই চিন্তা করুন। তারেক রহমান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই লোককে সরকারের কেন এত ভয়। একদিন না একদিন তারেক জিয়া ঢাকার বিমানবন্দরে নামবেন, তখন মহাজোট সরকারের ডিজিটাল স্বপ্ন ভেঙে খান খান হয়ে যাবে।
সরকারি দলের সানজিদা খানম বলেন, হাওয়া ভবনে বসে তারেক রহমানের দুর্নীতি-দুঃশাসন, দেশের সম্পদ লুণ্ঠন ও বিদেশে অর্থ পাচারের কথা দেশের মানুষ জানে। দুর্নীতির কারণে রাজনীতি না করার মুচলেকা দিয়ে বিদেশে পালিয়ে গেছেন তিনি। তাঁকে নিয়ে বিএনপির বড় কথা মানায় না।
সরকারি দলের আবদুল আওয়াল সাইদুর রহমান বলেন, সংসদে বিএনপির একজন মহিলা সংসদ সদস্য যে অশ্লীল ভাষায় বক্তব্য দিলেন তার জবাব দেওয়ার রুচি আমাদের নেই। চিৎকার ও অশ্লীল বক্তব্য দিয়ে বিরোধী দল সত্যকে আড়াল করতে পারবে না। ক্ষমতায় থেকে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে হয়ে হাওয়া ভবন খুলে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটকারী তারেক রহমান কখনো রাজনীতিবিদ হতে পারেন না। জনগণ তাঁকে ঘৃণা জানায়।
এই আলোচনায় আরো অংশ নেন সরকারি দলের প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন, নুরুল মজিদ হুমায়ুন, হাবিবুর রহমান, নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন, রফিকুল ইসলাম, এ বি এম আনোয়ারুল হক, হাফিজ আহমেদ মজুমদার, জাতীয় পার্টির এ কে এম মাঈদুল ইসলাম প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.