'সিচুয়েশন আরেক দফা সরকারের বিপক্ষে যাবে'

তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে বেশি চাপাচাপি করলে নির্বাচন হবে না- জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেওয়া প্রয়োজন উল্লেখ করে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাংবাদিক আমানউল্লাহ কবির বলেছেন, এ বিষয়ে রাজনীতিতে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
কেউ বলছেন প্রধানমন্ত্রী এমনভাবে কথা বলেননি, তাঁর বক্তব্য ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আবার কেউ বলছেন, প্রধানমন্ত্রী এমন কথা না বললে মিডিয়া এমন করে লিখল কিভাবে? তাই সরকারের কাছ থেকে এ বিষয়ে একটি ব্যাখ্যা আসা উচিত ছিল। কিন্তু সরকার সে রকম কোনো প্রেসনোট দেয়নি। ব্যাখ্যা না দিলে সিচুয়েশন আরেক দফা সরকারের বিপক্ষে যাবে।
মঙ্গলবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাভিশনের সংবাদ পর্যালোচনাভিত্তিক টক শো নিউজ অ্যান্ড ভিউজ অনুষ্ঠানে আলোচনা করতে গিয়ে আমানউল্লাহ কবির এ কথা বলেন।
সাংবাদিক গোলাম মোর্তোজার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো আলোচনা করেন দৈনিক আমাদের অর্থনীতি পত্রিকার সম্পাদক সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান।
আলোচনার শুরুতে সঞ্চালক গোলাম মোর্তোজা আলোচকদের কাছে জানতে চান, নির্বাচন হবে না- প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যটি হয়তো বিরূপভাবে উপস্থাপিত হয়েছে, কিন্তু এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকেও কোনো প্রেসনোট আসেনি। বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?
জবাবে সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, 'আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে টেলিভিশনে কয়েকবার প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যটি শুনেছি। তাবে আমি নিশ্চিত, তিনি নির্বাচন হবে না- এমন কথা বলেননি।' তিনি বলেন, এ জন্য অনেক পত্রিকা হেডিংয়ে 'নির্বাচন হবে না' বললেও ভেতরে ঠিকই প্রধানমন্ত্রীর সঠিক বক্তব্য তুলে ধরেছে। আবার অনেকে হেডিংয়ে ও ভেতরে সঠিক কথা লিখেছে। তিনি বলেন, 'এর পরও আমার কাছে কেন জানি মনে হয়, সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর এ বিষয়ে একটি বক্তব্য দিলে ভালো হতো।' তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এমন একটি বক্তব্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রেস সেকশন থেকে ক্ল্যারিফাই করা উচিত ছিল। আলোচনার এ পর্যায়ে সঞ্চালক জানতে চান, সদ্য হয়ে যাওয়া দেশের চারটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে নিঃসন্দেহে সরকার ও নির্বাচন কমিশন ব্যাপক প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু এর পরও নির্বাচন না হলে বিদেশি গার্ডিয়ান পত্রিকার রেফারেন্সে বাংলাদেশের পত্রিকাগুলো ব্যাপক কাভারেজ দিয়েছে। তাৎপর্য কী।
জবাবে সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, এটা নতুন কিছু নয়। এর আগেও বাংলাদেশের পত্রপত্রিকাগুলো সরকারের সমালোচনা করা বিদেশি পত্রিকার উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ ছেপেছে। এ ছাড়া পত্রিকাগুলোর অনেকের নিজস্ব এজেন্ডা থাকে। সে থেকেও তারা বিদেশি পত্রিকার সংবাদ ফলো করে থাকে। নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, একটি বিষয় উল্লেখ করা ভালো; আর তা হলো প্রধানমন্ত্রী কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে বারবার বাঘের ভয় দেখান। এমনিতেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নতুনভাবে করতে হবে। এ ছাড়া ভয় তো এক দলের জন্য নয়। অতীতে ওয়ান-ইলেভেনের সময় কোনো এক দলের ওপর ঝামেলা আসেনি। সবাইকেই দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর তো জনগণের ওপর আস্থা আছে, তিনি তো বিরোধী দলকে বলতে পারেন- আসুন, আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় বসি।
আলোচনার এ পর্যায়ে টেলিফোনে অংশ নিয়ে এক দর্শক জানতে চান, 'আমরা জানি, গণতন্ত্র রক্ষায় নির্বাচনের বিকল্প নেই। কিন্তু সম্প্রতি প্রথানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে কি তৃতীয় কোনো শক্তির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা আছে?'
জবাবে সাংবাদিক আমানউল্লাহ কবির বলেন, তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বারবার কেন ভয় পাচ্ছেন জানি না। তিনি কি এতে করে জনমনে কোনো প্রকার ভীতির সঞ্চার করছেন?
আলোচনার এ পর্যায়ে সঞ্চালক জানতে চান, তাহলে কি জনগণ তৃতীয় কোনো শক্তি বলতে বাইরের কোনো শক্তিকে বোঝাচ্ছে? জবাবে আমানউল্লাহ কবির বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের গভর্নমেন্ট তো ছিল মঈনুদ্দীনের গভর্নমেন্ট। এটা তো প্রকাশ্যে ফখরুদ্দীনের গভর্নমেন্ট হলেও মূলত ছিল সেনাপ্রধান মঈনুদ্দীনের গভর্নমেন্ট। এর মানে কি আবারও তৃতীয় কোনো শক্তি, আসলে বাইরের নয়, সেনা সমর্থিত শক্তিই ক্ষমতায় আসতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.