জাতীয় নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা-সমঝোতায় আসুন

বর্তমান জাতীয় সংসদের মেয়াদ আছে আর মাত্র চার মাস। এর পরপরই অনুষ্ঠিত হবে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। হাতে সময় নেই। অথচ এখনো নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে সরকারি ও বিরোধী দলের মধ্যে কোনো সমঝোতা হয়নি।
সরকার বলছে, বর্তমান সরকারের অধীনেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর বিরোধী দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে তারা চূড়ান্ত আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলার ঘোষণাও দিয়ে রেখেছে। সেই অর্থে আসন্ন রমজান মাসের পরপর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে, তা নিয়ে দেশের মানুষ রীতিমতো শঙ্কিত। শঙ্কা আছে আন্তর্জাতিক মহলেও। তারই ইঙ্গিত পাওয়া যায় যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনটিতেও বলা হয়েছে, আন্দোলন ও সহিংসতার কারণে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাহত হতে পারে।
বর্তমান বছরের শুরু থেকে যে ধরনের সহিংস আন্দোলন-সংগ্রাম দেশের মানুষ মোকাবিলা করে আসছে, তাতে শুধু নির্বাচন নয়, মানুষ তাদের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বিগ্ন। অর্থনীতিও চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পর থেকেই বিএনপি তা পুনর্বহালের দাবিতে হরতাল, অবরোধ, রোড মার্চসহ নানা ধরনের আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে আসছে। অথচ সরকার বিষয়টি নিয়ে চরম উদাসীনতার পরিচয় দিয়ে চলেছে। সেই আন্দোলনের সঙ্গে যোগ হয় মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের রায় প্রদানকে কেন্দ্র করে জামায়াতের চরম সহিংস কার্যকলাপ। এদিকে রায়ে অপরাধীর শাস্তি পর্যাপ্ত ও জনপ্রত্যাশিত না হওয়ায় অসন্তুষ্ট তরুণদের উদ্যোগে গড়ে ওঠে দেশজুড়ে শাহবাগভিত্তিক গণজাগরণ মঞ্চ। এ পর্যায়ে ব্লগে কথিত ধর্মবিরোধী বক্তব্য প্রদান নিয়ে সারা দেশে শুরু হয় ইসলামপন্থীদের প্রতিবাদ। তারই সূত্র ধরে আসে হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবিতে ঢাকা অবরোধ। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে এক অস্থির রাজনৈতিক অবস্থার সৃষ্টি হয়। রাজনৈকিভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়ে সরকার বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর শুরু করে দমন-পীড়ন, যা পরিস্থিতিকে আরো নাজুক করে তোলে। এই অবস্থায়ও যদি দ্রুততম সময়ে নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে কোনো সমঝোতা না হয়, তাহলে পরিস্থিতি যে আবারও চরমভাবে উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে- এমন আশঙ্কা অমূলক নয়।
আমরা আশা করি, সরকার পরিস্থিতির ভয়াবহতা উপলব্ধি করে বিরোধী দলের সঙ্গে এ ব্যাপারে ত্বরিত একটি সমঝোতায় আসার উদ্যোগ নেবে। তা ছাড়া এ ব্যাপারে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট ও পরিচ্ছন্নভাবে দেশবাসীকে জানাতে হবে। একেক মন্ত্রীর একেক ধরনের কথা জনগণের মধ্যে কেবল বিভ্রান্তিই ছড়ায়। বিরোধী দলকেও স্পষ্ট অবস্থান নিতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে সংসদে প্রস্তাব জমা দিয়েও প্রত্যাহার করে নেওয়ার মতো কৌশল ছেড়ে সমঝোতায় আসার জন্য আন্তরিক হতে হবে। আমরা চাই, দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকুক এবং রাজনীতির সব পক্ষই গণতান্ত্রিক আচরণ করুক।

No comments

Powered by Blogger.