ওবামার মধ্যপ্রাচ্য সফরের শেষ মুহূর্তের সাফল্য

জর্ডানের প্রাচীন নগরী টেরা পায়ে হেঁটে সফরের মধ্য দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা শনিবার মধ্যপ্রাচ্য সফর শেষ করেছেন। শুক্রবার জর্ডানের উদ্দেশে যাত্রা করার ঠিক আগ মুহূর্তে ইসরাইলকে তুরস্কের কাছে ক্ষমা চাওয়ানোর মধ্য দিয়ে ওবামা কূটনৈতিক বিজয় অর্জন করে নিয়েছেন।
২০১০ সালে গাজামুখী ত্রাণবহরে হামলায় ৯ তুর্কি নাগরিক নিহতের ঘটনায় শুক্রবার তুরস্কের কাছে ক্ষমা চেয়েছে ইসরায়েল। তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রেসেপ এরদোগানের দাবি অনুযায়ী এ ক্ষমা চাওয়ার ফলে মধ্য প্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের দুই সহযোগী রাষ্ট্র ইসরাইল ও তুরস্কের মধ্যকার টানাপড়েনে স্বস্তি আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। তেল আবিব বিমান বন্দরে প্রেসিডেন্ট ওবামার সঙ্গে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানেয়াহুর শেষ আলোচনা করার সময় ফোনকলের মাধ্যমে নেতানিয়াহু এরদোগানের কাছে ক্ষমা চান। জর্ডানের উদ্দেশ্যে এরফোর্স ওয়ানে করে যাত্রা করার ঠিক কয়েক মিনিট আগেই এ ঘটনা ঘটে। প্রেসিডেন্ট ওবামা এ ক্ষমা চাওয়ার ঘটনার প্রশংসা করে বলেছেন, দুই দেশের জন্যই এটি সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। গাজা অবরোধ ভেঙে দিতে সমুদ্রপথে যাত্রা করা ত্রাণবাহী ওই নৌবহরে ইসরাইলের কমান্ডো অভিযানে হতাহতের ঘটনা ঘটেছিল। এ ঘটনায় যে কোন ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। নিহতদের পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যাপারেও তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রেসেপ তায়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে নেতানিয়াহু সমঝোতায় পৌঁছেছেন বলেও এক রিপোর্টে জানা গেছে। ইসরায়েলের সরকারি এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ওই প্রাণহানির ঘটনায় যে কোন ভুলের জন্য ক্ষমা চাইছেন এবং ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে রাজি হয়েছেন। তাছাড়া তুর্কি ত্রাণকর্মী নিহতের ওই ঘটনার পর থেকে তুরস্ক এবং ইসরায়েলের মধ্যকার টানাপড়েনের সম্পর্ক মেরামতেও নেতানিয়াহু এবং এরদোয়ান রাজি হয়েছেন বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। শুক্রবার জর্ডানে বাদশাহ আবদুল্লাহর সঙ্গে আলোচনায় মূল বিষয়বস্তু ছিল প্রতিবেশী সিরিয়ার সহিংসতা। ওই সহিংসতার কারণে ইতিমধ্যেই সিরিয়ার ৪,৬০,০০০ মানুষ শরণার্থী হয়ে জর্ডানে আশ্রয় নিয়েছেন। এ সংখ্যা জর্ডানের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ। বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বছর শেষ নাগাদ এ শরণার্থীর সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুন হবে। ওবামা বলেছেন, সিরিয়ার শরণার্থী সমস্যা মোকাবিলা করতে অতিরিক্ত ২০০ মিলিয়ন ডলার দেয়ার জন্য তিনি কংগ্রেসের সঙ্গে কাজ করছেন। একই সঙ্গে সিরিয়ার বিদ্রোহীদের কোন ধরনের সামরিক সহযোগিতা না দেয়ার ব্যাপারেও তিনি নিজের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন। তবে ওবামা আগের হুঁশিয়ারি পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, সিরিয়া যদি রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে তবে সামরিক হস্তক্ষেপের ব্যাপারে তিনি তার অবস্থান পরিবর্তন করবেন। ইসরাইলের প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরের শেষ পর্যায়ে এসে কূটনৈতিক সফলতা এ সফরকে বেশ সাফল্যমণ্ডিত করে তুলেছে। ইসরাইলে প্রেসিডেন্ট ওবামা তরুণদের প্রতি ফিলিস্তিনের সঙ্গে শান্তিচুক্তির ব্যাপারে তাদের নেতাদের মৌখিক চাপ দেয়ার আহ্বান জানান। তিনি ইসরাইলিদের ফিলিস্তিনের দুঃখ-কষ্টের প্রতি সমব্যর্থী হওয়ার আহ্বান জানান। বিতর্কিত ভূখণ্ডে বসতি স্থাপনের ইসরাইলি নীতির সমালোচনা করার সময় অনেকেই হাততালি দিয়ে তাকে সমর্থন জানিয়েছেন। রামাল্লাতে ফিলিস্তিন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় ওবামা ইসরাইলের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। ওবামা বলেছেন, ফিলিস্তিনের নিজস্ব রাষ্ট্র পাওয়ার অধিকার রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.