বিশ্বের প্রথম এভারেস্টজয়ী নারী বাংলাদেশে by রুহিনা তাসকিন

৭৩ বছর বয়সে কেওক্রাডংয়ে উঠলেন। এটা কি চ্যালেঞ্জিং ছিল? দোভাষীর মাধ্যমে প্রশ্নটা শুনে হেসে ফেললেন জুনকো তাবেই। চ্যালেঞ্জ নয়, সহজভাবেই নিয়েছেন ব্যাপারটা, হেসে জানালেন।
এই প্রশ্নটা বোধ হয় করাই ঠিক হয়নি। হিমালয়ে ওঠা প্রথম নারী তিনি। এমন একটা সময়ে পাহাড়ে চড়া শুরু করেছেন, যখন জাপানের মেয়েরা ঘর ছেড়ে বাইরে বের হবে সেটাই ভাবা যেত না। সেটা ১৯৭৫ সালের কথা। সেই সময়ের কঠিন চ্যালেঞ্জটাকে তুচ্ছ করেই তো বিজয়ী হয়েছিলেন। এভারেস্ট বিজয় হয়েছে, প্রথম নারীহিসেবে সেভেন সামিটও (সাত মহাদেশের সাতটি সর্বোচ্চ পর্বতচূড়া জয়) হয়েছে ১৯৯২ সালে। এখন লক্ষ্য সারা বিশ্বের সব দেশের সর্বোচ্চ পর্বতে ওঠা।
একই তালে এগোচ্ছেন। এক এক করে জয় করছেন নানা দেশের সর্বোচ্চ পর্বত। ৬১তম দেশ হিসেবে এলেন বাংলাদেশে।
৫ জানুয়ারি ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে সাক্ষাৎকার দিলেন জুনকো।
১২ দিনের বাংলাদেশ সফরে ঘুরেছেন সুন্দরবন, চূড়ায় উঠেছেন কেওক্রাডংয়ের। পরদিনই ফিরে যাওয়ার কথা জাপান। বলছিলেন পাহাড়ে ওঠার শুরুর দিনের কথাগুলো।
কত দিনের চেষ্টার পর হাতে পেলেন সেই কাঙ্ক্ষিত কাগজটা। এভারেস্ট অভিযানে যেতে পারবেন জুনকো ও তাঁর দল। তবে তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও তিন বছর। তখন এক বছরে একটামাত্র দলকেই অনুমতি দেওয়া হতো এই অভিযানের। ১৯৭৫ সাল, জুনকোর মেয়েটার বয়স তখন মাত্র তিন বছর পাঁচ মাস। এই মেয়েকে রেখে হিমালয়ে যাবেন? বড় বোন আর স্বামী অভয় দিলেন। তাঁরা তো আছেন। ঘরের চিন্তা না করে জুনকো যেন শুধু অভিযান নিয়েই ভাবেন। জুনকোর স্বামী মাসানোবু তাবেইও পাহাড়ে চড়তেন।
তবে সেই হিমালয় অভিযানই হতে পারত জুনকোর শেষ অভিযান। ‘তুষারধসের মধ্যে পড়েছিলাম আমরা। তাঁবু ডুবে গেল বরফে। তবে সৌভাগ্যের বিষয়, আমরা সবাই অক্ষত ছিলাম। কিন্তু দলের অনেকের মনোবল ভেঙে যায়। সঙ্গে থাকা অনেকেই বলছিলেন ফিরে যেতে। কিন্তু আমি ভাবলাম, বেঁচে যখন আছি চূড়ায় ওঠার চেষ্টা করবই। শেষে শুধু আমি আর আমার শেরপা চূড়ায় উঠেছিলাম।’ বলেন তিনি।
সেটা যেন এই সেদিনের কথা বলেই মনে হয় জুনকোর। ‘চূড়ায় উঠেই মনে হয়েছিল এরপর আর কোথাও উঠতে হবে না আমাকে। এটাই তো সবচেয়ে বড় সেই পর্বত।’ বলেন তিনি। তবে একটু পরই মাথায় আসে প্রমাণের জন্য ছবি তোলা আর নিরাপদে আবার নামার ভাবনা।
বাংলাদেশে এসে সাকা হাফংয়েই ওঠার কথা ছিল জুনকোর। এটা এখন এ দেশের সবচেয়ে উঁচু স্থান হিসেবে পরিচিত। কিন্তু অনুমতি না পাওয়ায় সেখানে যেতে পারেননি জুনকো। তাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বত তিনি জয় করেছেন এমন বলাটা ঠিক হবে কি না, তা নিয়েও একটু সংশয়ে আছেন তিনি।
বাংলাদেশের দুজন নারী নিশাত মজুমদার আর ওয়াসফিয়া নাজরীনের এভারেস্ট জয়কে খুব চমৎকার ঘটনা বলেই মানেন জুনকো। সমতলের মেয়ে হয়েও তাঁরা পাহাড়ে ওঠার স্বপ্ন দেখেছেন। সে লক্ষ্যে সফলও হয়েছেন। এটা বড় অর্জন। বলেছেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.