সংসদে শোকরানা মোনাজাত, কর্মসূচী স্থগিত

 জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনীদের ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ায় সনত্মোষ প্রকাশ করে জাতীয় সংসদে শোকরানা মোনাজাত করা হয়েছে। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সংসদের দৈনন্দিন সকল কার্যসূচী স্থগিত করে বৃহস্পতিবার সংসদ মুলতবি করা হয়।
আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে সংসদে বিসত্মারিত আলোচনা হবে। সংসদ মুলতবি ঘোষণার আগে স্পীকার এ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসি হয়েছে। এখন মরে গেলেও আফসোস থাকবে না। বৃহস্পতিবার ছিল সংসদের বেসরকারী দিবস। স্পীকারের সভাপতিত্বে ৪৫ মিনিট বিলম্বে বিকেল পৌনে ৪টায় অধিবেশন শুরম্ন হয়। মাত্র ২০ মিনিটের সংসদের কার্যক্রমে অধিবেশন কৰ ছিল থমথমে। সর্বত্র পিনপতন নীরবতা। অধিবেশনের শুরম্নতেই বঙ্গবন্ধু, সংবিধান এবং জাতীয় সংসদ নিয়ে মর্মস্পশর্ী বক্তব্য রাখেন স্পীকার এ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ। এ সময় অধিবেশন ক েপিনপতন নীরবতা বিরাজ করছিল।
এরপর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শাহাদাতবরণকারী বঙ্গবন্ধুসহ সকলের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ আসনের সামনে দাঁড়িয়ে এক মিনিটের নীরবতা পালন করেন। এরপর শোকরানা মোনাজাতে অংশ নেন সবাই। মোনাজাত পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্য এ কে এম এ আউয়াল (সাইদুর রহমান)। এ সময় বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীসহ সামনের সারির অধিকাংশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
স্পীকার তাঁর আবেগময় বক্তৃতায় বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ন্যায় বিচারের মাধ্যমে ফাঁসি হওয়ায় এখন আমার জীবনের চাওয়া পাওয়ার আর কিছু অবশিষ্ট নেই। স্পীকারের দায়িত্ব বা সংসদ সদস্যপদ না থাকলেও এমনকি মারা গেলেও আমার আর কোন আফসোস থাকবে না। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় কার্যকর হওয়ার মাধ্যমে দীর্ঘ সময় পর জাতি আজ কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। তিনি বলেন, গত ৩৪ বছরে বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার দাবি করে নানা সময়ে আমিসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নানাভাবে অপমানিত ও নিগ্রহের শিকার হতে হয়েছে। অনেকে আবার জেল-জুলুম খেটেছেন; এমনকি নিহতও হয়েছেন। এর পরেও বিচার পাওয়া সম্ভব হয়নি। সে কারণেও মনের মধ্যে একটা দাগ ছিল।
স্পীকার বলেন, সংবিধান অনুসারে সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী হলেও পরিতাপের বিষয় যে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী এবং তার পরিবারের সদস্যরা নিহত হওয়ার পর সংবিধানের এ গ্যারান্টি বাসত্মবায়নের পথ রম্নদ্ধ করে দেয়া হয়। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, জাতির পিতা একজন সাধারণ নাগরিকের সুযোগ সুবিধাও পাবেন না এমন আইন যারা করেছিলেন, তারা কি কখনও ভেবেছিলেন যে ইতিহাস এমন ঘৃণ্য কাজের দায়দায়িত্ব কোনদিনই কাঁধে নেবে না। সেই ছোটবেলা থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করার স্মৃতি রোমন্থন করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর অকাল প্রয়াণে জাতির যে অপূরণীয় তি হয়েছে তা আজ গভীরভাবে উপলব্ধি করার সময় এসেছে।
খুনীদের ফাঁসির বিষয়ে সংসদে আলোচনা হবে
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা এবং বিচারের রায় কার্যকর হওয়ার বিষয়ে জাতীয় সংসদে একটি পূর্ণ দিবস আলোচনা হবে। তবে আলোচনার দিনণ এখনও চূড়ানত্ম হয়নি। বৃহস্পতিবার বিকেলে সংসদ বসার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পীকার, ডেপুটি স্পীকার, সংসদের উপনেতা, প্রধান হুইপ, হুইপ এবং সিনিয়র পার্লামেন্টারিয়ানদের নিয়ে এক সংৰিপ্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আলোচনা শেষে এ সিদ্ধানত্ম হয়। তা ছাড়া ওই বৈঠকে দ্রম্নততম সময়ের মধ্যে স্পীকারের বক্তৃতার মাধ্যমে দিনের কর্মসূচী মুলতবি করার সিদ্ধানত্ম হয়। তবে মহাজোটের সদস্যদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনার পর সিদ্ধানত্ম হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান হুইপ উপাধ্য আবদুস শহীদ।
সংসদে সোহেল তাজ
৬১ কার্যদিবস পর বৃহস্পতিবার সংসদ অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ (সোহেল তাজ)। বিরোধী দলের বাইরে সরকারী দলের একমাত্র তিনিই টানা সবচেয়ে বেশি দিন সংসদের বাইরে ছিলেন। বেলা পৌনে চারটায় সংসদ অধিবেশন শুরম্ন হওয়ার আগেই সোহেল তাজ অধিবেশন কৰে প্রবেশ করলে আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের সংসদ সদস্যরা তাঁর সঙ্গে হাত মিলিয়ে কুশল বিনিময় করেন। সোহেল তাজও সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এ সময় তাঁকে বেশ উৎফুলস্ন দেখাচ্ছিল। গত বুধবার সাত মাস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাটিয়ে দেশে ফেরেন পদত্যাগী এই প্রতিমন্ত্রী। তবে দেশে ফেরার পর থেকেই মুখে কুলুপ এঁটেছেন তিনি। বৃহস্পতিবারও অধিবেশন শেষে সাংবাদিকরা তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সোহেল তাজ কোন মনত্মব্য করতে রাজি হননি। উলেস্নখ্য, গাজীপুর-৪ আসনের এই সংসদ সদস্য সর্বশেষ গত বছরের জুন মাসে অনুষ্ঠিত বাজেট অধিবেশনের শুরম্নর দিকে সংসদে উপস্থিত হয়েছিলেন।
, কর্মজীবী নারী, সম্মিলিত নাগরিক আন্দোলন, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড শ্রমিক কর্মচারী লীগ, কর্মচারী ইউনিয়ন, বাংলাদেশ টিএ্যান্ডটি শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন ইউনিয়ন, প্রশিকা, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), ইনস্টিটিউশন অব ডিপেস্নামা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ, '৭৫ ঘাতক দালাল নিমর্ূল কমিটি, বিশ্ব বাঙালী সম্মেলন, প্রজন্ম বাংলাদেশ, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, শ্রী শ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, নূর হোসেন ক্রীড়া চক্র, বাংলাদেশ খ্রীস্টান এ্যাসোসিয়েশন, সিটিজেন রাইটস মুভমেন্ট, বাংলাদেশ ফেৎনা প্রতিরোধ কমিটি, জেনারেল ওসমানী ফউন্ডেশন, বাংলাদেশ মক্তিযোদ্ধা ও প্রজন্ম রিক্রিয়েশন কাব নেতৃবৃন্দ পৃথক পৃথক বিবৃতিতে রায়ে সনত্মোষ প্রকাশ করেছেন।

No comments

Powered by Blogger.