তৃতীয় ভুবন : তৃতীয় শক্তি ও দিনবদলের সরকার- সিডনির মেলব্যাগ অজয় দাশগুপ্ত

বাংলাদেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নে তিন চালিকা শক্তির একটি প্রবাসী জনগোষ্ঠী। এতে আমরা গর্বিত। কৃষক-শ্রমিকের পাশাপাশি বিদেশের মাটিতে পরিশ্রমরত মেধাবী ও দ বাংলাদেশীদের এই অবদান আজ স্বীকৃতি লাভের পথে।
এখন অবধি রেমিটেন্স পাঠানো ব্যতীত প্রবাসীদের কর্মকাণ্ড ইমোশন্যাল এটাচমেন্ট তথা সংবেদনশীলতায় সীমিত। এ কথা আমরা যেমন জানি, দেশবাসী এবং কতর্ৃপরেও অজানা নয়। কিন্তু এক দিক থেকে কৃষক-শ্রমিকদের মতো প্রবাসীরাও অবহেলা আর উদাসীনতার শিকার। কোন্ সেদিক? তার আগে অস্ট্রেলিয়ার বাস্তবতায় এ দেশ ও সরকার তার প্রবাসী নাগরিকের জন্য কি করে বা কতটা সচেতন সে বিষয়ে আলাপ করা জরুরী। আমরা যারা তৃতীয় বিশ্ব নামে পরিচিত পৃথিবীর উন্নয়নশীল দেশগুলোর নাগরিক অস্ট্রেলিয়া তাদের কাছে স্বর্গতুল্য। অভিবাসন, শিা, চাকরি ভ্রমণ যে কোন ভিসা, যে কোন উপায়ে এ দেশে আসবার জন্য মরিয়া আমরা। আমেরিকা, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এমনকি এশিয়ার উন্নত দেশগুলোর আকর্ষণও তেমনি প্রবল। অথচ অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকরাও নানা কারণে অভিবাসী হতে চান অথবা ব্যবসা, শিা, জীবিকার প্রয়োজনে অন্য দেশে বসবাস করে থাকেন। বলাবাহুল্য এদের পাড়ি দেয়ার কারণ আমাদের বাস্তবতার চাইতে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তবু এরাও প্রবাসী। জিম্বাবুইয়ের কথাই ধরি না কেন। খনি, প্রকৃতি, প্রাকৃতিক সম্পদ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষকে সে দেশে টেনে নিয়ে গেছে। অস্ট্রেলিয়ার ব্যবসায়ী উদ্যোক্তারাও পিছিয়ে নেই। এমনি কয়েকজন অস্ট্রেলিয়ানের সঙ্গে সাাত ও পরিচিত হবার সুযোগ ঘটেছে আমার। ট্যাক্স ভতর্ুকি ব্যবসা-বাণিজ্যে সরকারী কর্মোদ্যোগে এদের মনোভাব দেখেই বোঝা যায় তারা তৃপ্ত। একজন বলছিলেন জিম্বাবুইয়ের এর রাজনৈতিক দুর্দিনে অস্ট্রেলিয়ান দূতাবাসের সৌজন্য আর কর্মকুশলতার গল্প, বেশ কয়েকটি ব্যবসায়ী পরিবার দূতাবাসে রাত কাটিয়েছে। একটি দু'টি নয়, বেশ কয়েক রাত, এই সঙ্গ যত না কূটনৈতিক তার চেয়ে বেশি নিরাপত্তাজনিত। পাসপোর্ট থেকে ভিসা ছাড়পত্র সর্বত্র এদের জন্য রয়েছে আগাম সুবিধা। উপার্জিত অর্থবিত্ত দেশে নিয়ে এসে লগি্ন করার েেত্রও ভাল রিটার্ন। বাড়তি ছাড় আর সুযোগের দ্বার অবারিত থাকায় অর্থের আদানপ্রদানের পাল্লাটি এদিকেই ভারি। আমরা এসব বললেই দু ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখতে পাই। একদল বাঙালি ত্রুটি-বিচু্যতি তথ্য তত্ব আর গলদ খুঁজতে খুঁজতে হয়রান হয়ে ওঠেন। তাদের উদ্দেশ্যে লেখা। লেখক সংবাদপত্রের প্রতি কটা প্রবাসী জনগণের একটি ছোট অংশ এহেন হীনতায় অনেক আগেই মনুষ্যপদবাচ্যের যোগ্যতা হারিয়ে বনসাইতে পরিণত হয়েছেন। যার আর মাথা উঁচু করে বড় হবার কোনই সম্ভাবনা নেই। এদের বাদ দিলে বাকি প্রতিক্রিয়ার উৎস কতর্ৃপ অথবা মতাসীনরা। এদের সিংহ ভাগ দায় দায়িত্ব এড়াতে সচেষ্ট। তারা শুরুতেই বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা বা মধ্যপ্রাচ্যের দেশ নয় বলে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে যান। কিন্তু সে নিদ্রাভঙ্গের করাঘাত এখন দরজায়। আটত্রিশ বছর পর বাংলাদেশ চিহ্নিত করেছে তার তিন পরিশ্রমী শক্তি। প্রবাসীদের প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন ও তাদের মূল স্রোতে নিয়ে আসার কাজটি এ সরকারকেই শুরু করতে হবে। তার আগে কয়েক দফা পর্যালোচনা ও তথ্য সংগ্রহের কাজটি স্থানীয় দূতাবাসকে দিয়ে করিয়ে নেয়াই ভাল। বলাবাহুল্য দূতাবাসগুলোর ভেতরও ঘাপটি মারা ভূতের অভাব নেই। বর্ণ, ধর্ম, আদিবাসী, জেলা, আওয়ামী-বিএনপি-জামাত দ্বন্দ্বে তবিত সমাজের প্রভাব বাঙালী ইহজীবনে এড়াতে পারবে কি না বলা মুশকিল। ফলে দূতাবাসপ্রধানদের প্রত্য নজরদারিতে অভিবাসী ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের ভেতর থেকে উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী, দেশের কাজে লাগতে পারা শ্রমজীবী ও মেধাবী নির্বাচন করা প্রয়োজন। আরেকটি বাধা সরাতেই হবে। এ দায় যে কোন দলের চেয়ে মতাসীন আওয়ামী লীগের অধিক। পৃথিবীর প্রায় সব দেশে একাধিক আওয়ামী লীগের নামে যুদ্ধং দেহিতায় জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা ব্যাহত হচ্ছে। অহর্নিশ বিরোধিতা আর বাণিজ্য চিন্তায় বঙ্গবন্ধুর মতো জাতীয় প্রতীকও খণ্ডিত। একদিকে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ুণ্ন হওয়া, অন্যদিকে নিজেদের বিবাদে অনৈক্য ডেকে আনার দুর্ভাবনা থেকে মুক্ত করতে হবে। প্রবাসীরা বঙ্গবন্ধু পরিষদের মতো আদর্শ ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংগঠন থাকাটাই বাঞ্ছনীয়। বিদেশে দেশজ রাজনৈতিক দলের শাখা থাকার আদৌ কোন যৌক্তিকতা নেই। বিএনপিরও একই হাল। অধিকন্তু এদের নেতৃত্ব আর সংগঠনও নড়বড়ে। আমাদের দেশ ও জাতিকে বলীয়ান ও গৌরবান্বিত করতে হলে দলাদলি বন্ধের বিকল্প দেখি না। মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে দলবাজীর বিরুদ্ধে বলেই জানি। তাহলে কোন্ স্তর থেকে ইন্ধন ও শক্তি আসছে সেটাই কি বিচার্য নয়? দেশ, দল ও নীতি বোধের প্রতি অনুগত বিশ্বস্ত কমর্ী-সংগঠকদের নিয়ে কী ধরনের কল্যাণমূলক সংগঠন গড়ে তোলা যায় সেটাই এখন ভাবার বিষয়। কারণ এসব দলের শীর্ষ পদে ঝুলে থাকা মুখগুলো ব্যতীত বাকিরা সত্যি কিছু করতে আগ্রহী এবং হৃদয় ও চেতনায় আদর্শ লালনে উৎসাহী। এ জায়গাটা পরিষ্কার হলে দেশবাসী তো বটেই অর্থনীতিও উপকৃত হবে। নেতা-নেত্রী আনয়ন, সভা-সমিতির খরচ, ব্যয় সঙ্কোচনে উদ্বৃত্ত অর্থের কিছুটা হলেও দেশে যাবে। ধারণা করি, দিন বদলের সরকার বিগত এক বছরে ঘর গোছানোর কারণে এদিকে মনোযোগী হতে না পারলেও এখন তার সময় এসেছে। বাংলাদেশের উত্থানে প্রবাসীদের ভূমিকা আরও মুখ্য ও শক্তিশালী করতে এসব পদপে গ্রহণ করার বিকল্প নেই। সংশ্লিষ্ট জনেরা নিশ্চয়ই হেলায় সুযোগ হারাবেন না।

No comments

Powered by Blogger.