কাক কুকুরের ডাকও শোনা যায় ন খুনীর বাড়ি

নিজস্ব সংবাদদাতা, গলাচিপা, ২৯ জানুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ফাঁসিতে মৃতু্যবরণকারী ল্যান্সার মহিউদ্দিন দুই যুগেরও আগে গলাচিপা উপজেলা শহরে শখ করে বাংলো প্যাটার্নে একটি বাড়ি নির্মাণ করেছিল।
আশা ছিল অবসর জীবনটা এ বাড়িতেই কাটাবে। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। পাপ তার পিছু ছাড়েনি। একদিনের জন্যও সে বাড়িটিতে বাস করতে পারেনি। পারেনি স্ত্রী-সনত্মান নিয়ে রাত কাটাতে। বরং জনতার রূদ্ররোষে মাস দুয়েক আগে বাড়িটার অনেকটাই ধ্বংস হয়ে গেছে। সেই পোড়া বাড়িটা এখন ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। একটা কাক-কুকুরের ডাকও শোনা যায় না বাড়িটার ভেতর থেকে। এলাকাবাসী বলছে, বাড়িটা এখন অভিশপ্ত পুরীতে পরিণত হয়েছে। পাশ দিয়ে যাওয়ার আসার পথে মানুষ আঙ্গুল তুলে বলছে ঐটি খুনীর বাড়ি। এভাবেই একটি সখের বাড়ি এখন খুনীর বাড়িতে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধুর খুনীদের অন্যতম লে. কর্নেল (অব) একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার) এরশাদ জমানায় ১৯৮৪-৮৫ সালে গলাচিপা পৌর এলাকার শেরে বাংলা সড়কে বাংলো প্যাটার্নে বাড়িটি নির্মাণ করে। জমিটি কেনে তারও আগে। ঐ সময়ে গলাচিপা উপজেলা সদরে যে ক'টি দৃষ্টিনন্দন বাড়ি ছিল, মহিউদ্দিনের এ বাড়িটি তার অন্যতম। প্রতিদিন অনেক মানুষ এ বাড়িটি দেখতে যেত। চারদিকে সবুজ ধানেেতর মধ্যে নির্মিত বাড়িটির নির্মাণকাজ সে নিজেই তদারক করত। এজন্য মাঝে মধ্যেই সে গলাচিপা সদরে আসত। নির্মাণের পর বেশ কয়েক বছর বাড়িটি খালি পড়ে ছিল। জনরোষ কিংবা সমালোচনার মুখে পড়ার আশঙ্কায় কেউ ভাড়াও নিতে চায়নি। সে সময়টাতেও সে চাকরিরত ছিল। ১৯৯১-এ খালেদা জিয়া মতায় এলে প্রথম ঐ বাড়িটিতে ভাড়াটিয়া আসে। ১৯৯৬-এ আওয়ামী লীগ মতায় এলে মহিউদ্দিন আহমেদ ও তার স্বজনরা বাড়িটিকে বিুব্ধ জনতার রূদ্ররোষ থেকে বাঁচাতে কৌশলের পথ গ্রহণ করে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতাকে বিনা ভাড়ায় বাড়িটিতে বাস করার সুযোগ দেয়া হয়। যে কারণে ঐ সময়ে বাড়িটি রা পায়। ২০০১-এ খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চারদলীয় জোট মতায় এলে মহিউদ্দিন আহমেদ ও তার স্বজনরা স্বমূর্তি ধারণ করে। আওয়ামী লীগ নেতাকে বাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়া হয়। বাড়িটি ভাড়া দেয়া হয় জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা জাসাসের উপজেলা সভাপতি ও গলাচিপা ডিগ্রী কলেজের কম্পিউটার বিষয়ের প্রভাষক রোকনুজ্জামান খানের কাছে।
রোকনুজ্জামান খান জানিয়েছেন, তিনি ছাড়াও কিছু দিন ধরে আরও একজন ভাড়াটিয়া এ বাড়িতে থাকতেন। প্রতিমাসে তারা তিন হাজার টাকা ভাড়া দিতেন। ভাড়ার টাকা মহিউদ্দিন আহমেদের ছোট ভাই রাঙ্গাবালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আবদুল হাই তালুকদার নিজে এসে নিতেন অথবা তার ব্যাংক হিসেবে জমা দেয়া হতো।
এদিকে, গত বছর ১৯ নবেম্বর আপীল আদালতে রায়ের পর পরই বিুব্ধ জনতার হামলার আশঙ্কায় রোকনুজ্জামান খান তড়িঘড়ি করে বাড়িটি ছেড়ে দেন। রাত নয়টার দিকে কয়েক শ' বিুব্ধ মানুষ একযোগে হামলা চালায় খুনী মহিউদ্দিনের বহুল আলোচিত বাড়িটিতে। বিুব্ধরা আগুন জ্বালিয়ে দেয় বাড়ির ভেতরে। এরপর থেকেই বাড়িটি পরিত্যক্ত।
মহিউদ্দিন আহমেদের পারিবারিক একটি সূত্র জানায়, বাড়িটি ঘিরে মহিউদ্দিনের নিজস্ব কিছু পরিকল্পনা ছিল। অবসর জীবনটা সে এখানে কাটাতে চেয়েছিল। বাড়িটি সেভাবেই তৈরি করা হয়। বাড়ির মধ্যে বেশ বড় একটা পুকুর কাটা হয়। লাগানো হয় অনেক গাছপালা। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস বাড়িটিতে সে একটি রাতও কাটাতে পারেনি। মহিউদ্দিনের সখের বাড়িটি এখন মানুষের কাছে খুনীর বাড়ি। রাসত্মা দিয়ে যাতায়াতের সময় মানুষ আঙ্গুল তুলে বলে ঐটি খুনীর বাড়ি। এটাই বাড়িটির একমাত্র পরিচিতি।

No comments

Powered by Blogger.