চট্টগ্রামে হকার-দোকান মালিক ফের সংঘর্ষ পুলিশের গুলি, টিয়ার শেল- আহত অর্ধ শতাধিক ১৪৪ ধারা জারি

চট্টগ্রাম অফিস ফুটপাথ দখলকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের স্টেশন রোডে হকার-দোকান মালিকের মধ্যে বৃহস্পতিবার আবারও মারাত্মক সংঘর্ষে রণৰেত্র হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি কখনও টানা কখনও থেমে থেমে সংঘর্ষের ঘটনা চলার পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আবারও সংঘর্ষ শুরম্ন হয়ে যায়।
সন্ধ্যা পর্যনত্ম এ সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় ১শ' রাউন্ড গুলি ও অর্ধ শতাধিক রাউন্ড টিয়ারশেল নিৰেপ করেছে। এতে আহত হয়েছে অর্ধ শতাধিক। এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানায় পুলিশ ও ব্যবসায়ী সমিতির পৰ থেকে পৃথক ৩টি মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় প্রায় ২ হাজার অজ্ঞাতনামাকে আসামি করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং লুটপাটসহ অপ্রীতিকর অবস্থা রোধে সিএমপি প্রশাসন সন্ধ্যা ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেছে।
অভিযোগ উঠেছে, পুলিশী বাণিজ্যের কারণে দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর ধরে রেয়াজুদ্দিন বাজার ওভারব্রিজ থেকে আমতল পর্যনত্ম ফুটপাথ থেকে হকারদের উচ্ছেদ করা যাচ্ছিল না। বিভিন্ন সময়ে পুলিশের বিভিন্ন কর্ণধাররা বিশেষ করে সিএমপি কমিশনাররা রদবদল হলেও ফুটপাত উচ্ছেদের ডাক দিয়ে পরে আন্ডারহ্যান্ড বাণিজ্যের মাধ্যমে ভেসত্মে গেছে তাদের উদ্যোগ। এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে রেয়াজুদ্দিন বাজার বনিক সমিতির সদস্যদের পৰ থেকেও। ফুটপাথ হকারদের কারণে দোকান ব্যবসায়ীরা পণ্যের বেচাকেনায় সুবিধা করে আসতে পারছিল না। বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়ে ব্যবসায়ীরা এসব হকারদের উচ্ছেদ করতে পারেনি। বরং হকাররা সমিতি গঠনের মধ্য দিয়ে প্রশাসনে চাঁদা প্রদান অব্যাহত রাখার কারণেই হকারদের আধিপত্য রয়ে গেছে ফুটপাথকেন্দ্রিক ভাসমান দোকানগুলোতে। একশ্রেণীর হকার নেতারা ব্যবসা না করেও হকারদের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে চাঁদা তুলে ভাসমান এসব ব্যবসায়ীকে ফুটপাথে টিকিয়ে রাখতে সৰম হয়েছে।
বুধবার রেয়াজুদ্দিন বাজারে একটি পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশকে কেন্দ্র করে হকারদের সঙ্গে ট্রাক চালকের বিরোধের জের ধরে রেয়াজুদ্দিন বাজার ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় । এরই জের ধরে উভয় গ্রম্নপের মধ্যে সংঘর্ষ বুধবার থেকে শুরম্ন হয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যনত্ম থেমে থেমে অব্যাহত ছিল। সংঘর্ষের তীব্রতা বেড়ে গেলে পুলিশ বুধবার গভীর রাত থেকে নিরাপত্তা জোরদারের মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। এদিকে, ফুটপাথ হকার সমিতির পৰ থেকে জানা গেছে, রাতে রেয়াজুদ্দিন বাজার ব্যবসায়ী সমিতির লোকজন হকারদের প্রায় ২০ লাখ টাকার মালামাল লুটে নিয়েছে। এছাড়াও ৫০ লাখ টাকার মালামাল আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে বলে দাবি জানিয়েছে। হকাররা আরও জানায়, রেয়াজুদ্দিন বাজার বণিক সমিতির জামায়াতপন্থী নেতা মাহমুদুল হক ও শামসুল হকের উস্কানির কারণেই হকারদের ওপর প্রথমে নিরাপত্তা রৰীদের লেলিয়ে দেয়া হয়। এরপর নিজেরাই ফুটপাথ দখল করতে রাসত্মায় নেমে আসে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট নিউমার্কেটকেন্দ্রিক হকাররা যেমন জোটবদ্ধ হয়েছে, তেমনি ব্যবসায়ীরা হকার উচ্ছেদে মাঠে নামে। ফলে উভয়ের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ শুরম্ন হয়। এ সংঘর্ষের জের ধরে সনি্নহিত বিসত্মীর্ণ এলাকজুড়ে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনার কারণে নগরব্যাপী যানজটসহ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দুপুরে র্যাব-পুলিশের প্রায় ৮শ' সদস্য মাঠে নামে । এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রায় ১শ' রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও অর্ধ শতাধিক টিয়ারশেল নিৰেপ করা হয়। এ ঘটনায় সংঘর্ষের তীব্রতা বেড়ে গেলে নগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত মুসলিম হাই সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় আকস্মিকভাবে ছুটি ঘোষণা করা হয়। এতে করে শিৰাথর্ীরা এ সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে বাসায় ফিরে যেতে এবং আগত অভিভাবকরা নিজেদের সনত্মানদের নিয়ে ভীতিকর ও ভোগানত্মির মধ্যে পড়ে। এক পর্যায়ে এ স্কুলের শিৰাথর্ীদের চট্টগ্রাম আদালতের পাহাড় বেয়ে বাসায় ফিরতে দেখা গেছে। ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনায় নিহতের ঘটনা না ঘটলেও উভয়পৰের বেশকিছু আহতের খবর পাওয়া গেছে। বিভিন্ন সূত্রে এ সংখ্যা অর্ধ শতাধিক বলে জানানো হয়েছে। এদিকে, কোতোয়ালি থানা সূত্রে জানা গেছে, বুধ ও বৃহস্পতিবারের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের পৰ থেকে একটি ও উভয় বণিক সমিতির পৰ থেকে আরও দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। তিনটি মামলায় প্রায় আড়াই হাজার অজ্ঞাতনামাকে আসামি করে মামলা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.