প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ-মূল সংকট এড়িয়ে গেলে চলবে না

সরকারের চার বছর পূর্ণ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে এই চার বছরে তাঁর সরকারের সাফল্যগুলো তুলে ধরেছেন। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার স্বার্থে আগামী নির্বাচনেও তাঁর দলকে বিজয়ী করার আহ্বান জানিয়েছেন।
কিন্তু জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে অতি প্রত্যাশিত কিছু বিষয়ের উল্লেখ না থাকায় অনেকেই হতাশা প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে আগামী নির্বাচন কোন ধরনের সরকার ব্যবস্থায় অনুষ্ঠিত হবে, সে ব্যাপারে এ ভাষণে একটি ইঙ্গিত করা হতে পারে বলে অনেকেই আশা করেছিলেন।
প্রধান বিরোধী দলসহ ১৮ দলীয় জোট স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছে, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া আগামী নির্বাচনে তারা অংশ নেবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে দেশে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম চলছে। হরতাল-অবরোধে বারবার দেশ অচল হয়ে পড়ছে। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সামগ্রিক অর্থনীতির বিপুল ক্ষতি হচ্ছে। জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে আসছে। রাজনীতি ক্রমেই সংঘাতময় হয়ে উঠছে। স্বাভাবিকভাবেই দেশের মানুষ এ পরিস্থিতির একটি যৌক্তিক সমাধান আশা করছে। এ রকম একটি পরিস্থিতিতে জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে এ ব্যাপারে কোনো উল্লেখই না থাকায় মানুষ হোঁচট খেয়েছে। সে কারণে তাদের মনে দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কা আরো বেড়েছে। শুধু তাই নয়, কিছুদিন আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বিএনপিকে আলোচনায় বসার যে আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং যা মানুষকে কিছুটা হলেও আশ্বস্ত করেছিল, সেই আলোচনা-সংলাপের ব্যাপারেও প্রধানমন্ত্রী কোনো কথাই উল্লেখ করেননি। স্বাভাবিকভাবেই এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই নীরবতায় দেশের মানুষ সন্তুষ্ট হতে পারেনি।
প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের যে তালিকা দিয়েছেন, তা আমরা অস্বীকার করছি না; যদিও এসব উন্নয়নের কৃতিত্ব দাবি করা নিয়ে অনেক দ্বিমত আছে। তার পরও এটি অনস্বীকার্য যে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে কোনো উন্নয়নই স্থায়ী হয় না, গতি পায় না। সেই অর্থে দেশের উন্নয়ন কতটা স্থায়ী প্রকৃতির, কতটা প্রকৃত- তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। উন্নয়নের জন্য যেমন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন সুশাসন, গণতন্ত্রের সঠিক চর্চা, পারস্পরিক সহনশীলতা ও আস্থার সম্পর্ক। এ বিষয়গুলোতে গত চার বছরে বাংলাদেশের অর্জন নেই বললেই চলে। আর সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন বা উন্নয়ন কতটুকু স্থায়ী ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা সহজেই অনুমেয়। কাজেই প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে এই গুরুত্বপূর্ণ দিকটির যথার্থ উল্লেখ ও বিদ্যমান পরিস্থিতির উন্নয়নে তাঁদের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর উল্লেখ থাকা একান্ত প্রয়োজনীয় ছিল, কারণ লব্ধ উন্নয়নকে স্থায়ী ভিত্তি দেওয়ার প্রধান দায়িত্ব সরকারকেই পালন করতে হয়।
আমরা চাই, স্থায়ী উন্নয়নের পথে দেশ এগিয়ে যাক। ব্যক্তি বা দলবিশেষের ইচ্ছা-অনিচ্ছা এখানে সব কিছুর নিয়ন্ত্রক হতে পারে না। দেশের স্বার্থের কথাই সর্বাগ্রে ভাবতে হবে। সেই বিবেচনা থেকে আমরা আশা করব, সরকারি ও বিরোধী দল বিদ্যমান সব বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খুঁজে নিতে সর্বোচ্চ সদিচ্ছার পরিচয় দেবে। সংঘাত নয়, সমঝোতার পথই বেছে নেবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সব বিরোধের অবসান হবে, দেশ গণতান্ত্রিক উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে যাবে- সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.