পলাতক ছয় খুনীকেও দ্রম্নত ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ- ৪৬ মিশনকে নির্দেশ পাঠিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, রেড এ্যালার্ট জারি ইন্টারপোলে

সোহেল রহমান পাঁচ খুনীর মৃতুদ- কার্যকরের পর পলাতক ছয় খুনীকেও দু্রত দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিদেশে অবস্থারত খুনীদের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
সরকারের নীতিনিধর্ারকরা জানিয়েছেন, পালিয়ে থাকলেও দ-প্রাপ্ত খুনীরা আইনের হাত থেকে রা পাবে না। তাদের দু্রত দেশে ফিরিয়ে এনে ফাসির মুখোমুখি করা হবে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, পালিয়ে থাকা খুনীদেরও দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি দেয়া হবে। বৃহস্পতিবার দুপুরে সিরডাপ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে সমাপনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দ-প্রাপ্তরা আইনের হাত থেকে রা পাবে না। তাদের ফিরিয়ে আনা হবেই। সৈয়দ আশরাফ বঙ্গবন্ধুর খুনীদের রার চেষ্টার জন্য সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান খুনীদের শুধু দায় থেকে রাই করেনি, পাশাপাশি বিভিন্ন দূতাবাসে তাদের চাকরি দিয়ে পুনর্বাসিত করেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হউক যারা চায়নি, তারা ইনডেমনিটি(দায়মুক্তি) অধ্যাদেশ জারি করে খুনীদের বিচারের আওতার বাইরে রেখেছিল। তারা আজ খুশি নয়। কিন্তু সমগ্র জাতি আজ আনন্দিত। রায় কার্যকরের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, অন্যায় কখনও মুছে যায় না। যারা অন্যায় করবে তাদের বিচার হবে। পাচ খুনীর মৃতু্যদ-াদেশ কার্যকরের মাধ্যমেই প্রমাণিত হয়েছে দেশে আইনের শাসন আছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী পালিয়ে থাকা খুনীদের দেশে ফেরানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন যমুনায় বৃহস্পতিবার সকালে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যারা বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছে, সে সব দেশ তাদের ফেরত পাঠাবে বলে আশা করি।
বিদেশে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর অন্য খুনীদের তথ্য সরকারে কাছে রয়েছে জানিয়ে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, তাদের দু্রত দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকার কাজ করছে। তিনি বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, পলাতকদের বিষয়ে আমাদের কাছে মোটামুটি সুনির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে। পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় এদের ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে। ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড এলার্ট জারি রয়েছে। কানাডায় পালিয়ে থাকা খুনী নুর চৌধুরীকে ফেরাতে সে দেশের সরকার সহায়তা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন কানাডা সরকার একটি আইনী প্রক্রিয়া বাকি রয়েছে। আইনমন্ত্রী বলেন, পলাতক আসামিরা ফিরলে আপীলের সুযোগ পাবেন। তবে নির্দিষ্ট সময় পার হলে বিলম্বের প্রতিদিনের কারন ব্যাখ্যা করতে হবে আদালতে কাছে। সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যায় আদালত সন্তুষ্ট হলেই তা আদালত গ্রহণ করবে, তা না হলে নয়। বিভিন্ন দেশে খুনীদের রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়ার প্রবণতার সমালোচনা করে তিনি বলেন, আত্মস্বীকৃত খুনীদের রাজনৈতিক আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়া উচিত নয়। এ ধরনের প্রশ্রয় পেলে খুন-হত্যাকা- বাড়বে। পাঁচ খুনীর দ- কার্যকরের প্রতিক্রিয়ামন্ত্রী বলেন, ইতিহাসের জঘন্য এই হত্যাকা-ের বিচার অনেক আগেই হওয়ার দরকার ছিল। এ বিচারের মাধ্যমে আইনের শাসনের পথ সুগম হলো। আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এবং সবাইকে সম্পূর্ণ সুযোগ দিয়েই দ-াদেশ কার্যকর করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীদের মধ্যে যারা এখনও পালিয়ে আছেন তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী কর্নেল(অব) ফারম্নক খান। তিনি বলেন আনত্মর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধুর খুনীদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে। পালিয়ে থাকা খুনীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন দেশ আমাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসি দেয়া হবে। তিনি বলেন, স্বচ্ছ বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যে খুনীদের ফাসির রায় হয়েছে এবং তা কার্যকর করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দেশে আইনের শাসন, গনতন্ত্র ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে।
খুনীদের ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশিস্নষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার মৃতুদ-প্রাপ্ত পলাতক ছয় খুনীকে খুজে বের করতে বিশেষ মিশন নিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। খুনীদের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে বিদেশে বাংলাদেশের ৪৬ মিশনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি সংবেদনশীল হওয়ার কারণে এ মুহূর্তে সতর্কতা অবলম্বন করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর আগে পলাতক খুনীদের বিরম্নদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে হুলিয়া জারি করা হয়।
মন্ত্রণালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, পলাতক খুনীরা বর্তমানের কোথায় অবস্থান করছে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে তথ্য সংগ্রহ করতে বিদেশে বাংলাদেশের সব মিশনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। খুনীদের অবস্থান নিশ্চিত করার পাশাপাশি কিভাবে দেশে ফিরিয়ে এনে তাদের আইনের মুখোমুখি করা সে ব্যাপারেও প্রয়োজনীয় পদপে গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে একাধিক খুনীর অবস্থান সম্পর্কর্ে নিশ্চিত হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে বার বার খুনীদের অবস্থান পরিবর্তনসহ নানা কৌশলের কারণে পুরো বিষয়টি সম্পর্কে কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পররাষ্ট্রসচিব মিজারম্নল কায়েস কয়েক দিন আগে জনকণ্ঠকে জানিয়েছে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পলাতক খুনীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে অনেক বিলম্ব হয়েছে। আমরা আর দেরি করতে চাই না। বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিষয়টি অনেক বেশি সংবেদনশীল। পলাতক খুনীদের দেশে এনে কিভাবে দু্রত তাদের আইনে মুখোমুখি করা যায়, আমরা সে বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। গোটা বিষয়টি সংবেদনশীল হওয়ার কারণে কিছুটা গোপনীয়তার সঙ্গে সামগ্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
পলাতক খুনীরা কোথায় বর্তমান সরকার মতা গ্রহণের পর বিদেশে পলাতক খুনীদের গ্রেফতারে ইন্টারপোলের মাধ্যমে পুনরায় গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হয়। এর আগে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ইন্টারপোলের গ্রেফতারী পরোয়ানা প্রত্যাহার করে নেয় হয়। সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পলাতক ছয় খুনীর মধ্যে নুর চৌধুরী কানাডায় রয়েছেন। অবৈধভাবে কানাডায় অবস্থানের কারণে গত ডিসেম্বর মাসে দেশটির সরকার তার পাসপোর্ট জব্দ করে বাংলাদেশ হাইকমিশনে জমা দেয়। কানাডার প্রচলিত আইন অনুযায়ী তিনি আরেক দফা আপীলের সুযোগ পাবেন। সে আপীল খারিজ হলে এই খুনীকে বাংলাদেশে হসত্মানত্মর করা হবে বলে জানা গেছে। এর আগে ২০০৭ সালের জুন মাসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার মৃতু্যদ-প্রাপ্ত খুনী মহিউদ্দিন আহমেদকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। অবৈধভাবে অবস্থানের কারণে দেশটির হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সার্ভিস প্রথমে তাকে আটক ও পরে বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়। সে সময় মহিউদ্দিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেও প্রত্যাখ্যাত হন। বুধবার রাতে অন্য চার খুনীর সঙ্গে মহিউদ্দিনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
শরিফুল হক ডালিম কখনও পাকিসত্মান আবার কখনও হংকংয়ে অবস্থান করছেন। এই খুনী বর্তমানে পাকিসত্মানের পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশে যাতায়াত করছে। আব্দুল মাজেদ চৌধুরী ও রিসালদার মোসলেমউদ্দিন ভারতে অবস্থান করছেন। দুই খুনী গ্রেফতারের জন্য পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ কয়েকবার অভিযান চালিয়েও ব্যর্থ হয়। আব্দুর রশিদ লিবিয়া ও বেলজিয়ামে অবস্থান করছেন। তবে পাকিসত্মান ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে তার অবাধ যাতায়াত রয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের প্রায় পুরোটা সময় তিনি পাকিসত্মানে ছিলেন বলে জানা গেছে। সূত্র জানিয়েছে, লিবিয়ায় অবস্থানেকালে রশিদ মাদক ও অস্ত্র চোলাচালান ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। সিসিলি দ্বীপের মাফিয়া ডনদের আসত্মানায়ও তার অবাধ যাতায়াত রয়েছে। খুনীদের একজন আজিজ পাশা পলাতক ২০০১ সালে জিম্বাবুইয়ে মারা যান।
গত জুলাই মাসে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার মৃতু্যদ-প্রাপ্ত পলাতক আসামি রাশেদ চৌধুরীর ব্যাপারে ইন্টারপোলের মাধ্যমে বাংলাদেশকে তথ্য জানায় যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে উলেস্নখ্য করা হয়, ওয়াশিংটনে অবস্থানকারী রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন। তার ব্যাপারে বাংলাদেশের অবস্থান জানানোর অনুরোধ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধের জবাবে রাশেদ চৌধুরী অবস্থান নির্ণয় এবং তাকে গ্রেফতারের অনুরোধ করা হয়। পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প থেকে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সার্ভিসের কাছেও একই বার্তা পাঠানো হয়। রাশেদ চৌধুরী এখনও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে কিনা ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের কাছে নিশ্চিত কোন তথ্য নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্রে কোন খুনী অবস্থান করলে তাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দিতে সরকারের উর্ধর্তন পর্যায় থেকে সেদেশের সরকারের কাছে কয়েকবার অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতে দ-াদেশ পাওয়ার পর হাইকোর্ট থেকে অব্যাহতি পাওয়া আহমেদ শরিফুল হোসেন, কিসমত হাসেম, নাজমুল হোসেন আনসারের বিরম্নদ্বে ইন্টাপোলের মাধ্যমে পরোয়ানা বহাল রয়েছে। এদের মধ্যে শরিফুল ও কিসমত কানাডায় অবস্থান করছেন।

No comments

Powered by Blogger.