চরাচর-হারিয়ে যাচ্ছে সোনালি আঁশ by বিশ্বজিৎ পাল বাবু

পাটকে বলা হয় সোনালি আঁশ। বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল। একসময় পাটের তৈরি জিনিসের কদর ছিল বেশ। বিদেশে পাট ও পাটের তৈরি জিনিস রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করত বাংলাদেশ, যা বাংলাদেশের অর্থনীতির সমৃদ্ধির সহায়ক ছিল। দেশে পর্যাপ্ত পাটের চাষ হতো।


পাট চাষ করে জীবিকা নির্বাহ হতো অনেকের। কিন্তু পাটের সেই সুদিন আর নেই। পলিথিনের দাপটে যেন হারিয়ে গেছে পাট। সঠিক মূল্য পান না বলে কৃষকও পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। তবুও মাঝেমধ্যে কিছু এলাকায় পাট চাষ ও উৎপাদনের খবর আমাদের আশান্বিত করে। এমনই একটি আশাজাগানিয়া এলাকা হচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর। মেঘনা তীরবর্তী বাইশ মোজা বাজারে বসে এ পাটের বাজার। সপ্তাহের প্রতি শনি ও মঙ্গলবার এখানে পাট নিয়ে আসেন চাষিরা। এলাকাটি নদীবেষ্টিত হওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে নৌকা দিয়েই পাট নিয়ে আসা হয় এ বাজারে। উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে শুরু করে আশুগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ অন্যান্য জেলা থেকে পাইকাররা এখানে আসেন পাট কিনতে।
খুব সকাল থেকেই জমে ওঠে বাইশ মোজা বাজারের পাট বিকিকিনি। সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে মুখরিত থাকে বাজার। প্রতিদিন কমপক্ষে ৮০০ থেকে এক হাজার মণ পাট বিক্রি হয় এখানে। এর মধ্যে দেশি পাট বিক্রি হয় ৭০০ থেকে ৭৫০, তোষা এক হাজার থেকে এক হাজার ৫০, কেনাফ ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়।
কৃষকরা বলেন, কানিপ্রতি (৩০ শতক) চার-পাঁচ মণ পাট উৎপন্ন হয়। প্রতি কানিতে খরচ পড়ে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। এ ছাড়া নিজেদের শ্রম দিতে হয়। আছে পরিবহন খরচ। এতে খুব একটা লাভ হয় না। পাটচাষিদের মতে, পাটের উৎপাদন প্রতিবছরই কমছে। এ ছাড়া সরকারিভাবে কোনো মূল্য নির্ধারিত না থাকায় চাষিদের বিপাকে পড়তে হয়। উৎপাদনে যে খরচ হয় তা পাট বিক্রি করে উঠে আসে না। তবু জমি পড়ে থাকবে বলে অনেকে পাট চাষ করেন।
ক্রেতা উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের মো. আক্তার হোসেন বেপারী ও মো. বালী মিয়া বেপারী জানান, পাট কিনে আগের মতো লাভবান হওয়া যায় না। এ ছাড়া পাটের চাহিদাও খুব একটা নেই। পলিথিনের প্রভাব কমানো না গেলে পাটের সুদিন আসবে না। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, নবীনগরে এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। উৎপাদনও হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার বেশি। নবীনগরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৩০ হেক্টর, সেখানে ৭৫৮ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। এ ছাড়া জেলার কসবা উপজেলার কুটি ও নাসিরনগরের হরিণবেড়ে পাট বাজার রয়েছে। সোনালি আঁশ হারিয়ে গেলে এসব পাটের বাজার থাকবে না।
বিশ্বজিৎ পাল বাবু

No comments

Powered by Blogger.