অপহৃত পরাগের ভাগ্যে কি ঘটেছে?

কেরানীগঞ্জে অপহৃত স্কুলছাত্র পরাগের ভাগ্যে কি ঘটেছে? অপহরণের দীর্ঘ সময় পার হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার কোন সন্ধান পায়নি। এমনকি অপহরণকারীরা মুক্তিপণ চেয়েও কোন যোগাযোগ করেনি। এ অবস্থায় পরাগের ভাগ্যে কি ঘটেছে- এ প্রশ্ন এখন সর্বত্র।

গতকাল সরজমিন ঘটনাস্থলে গেলে দেখা যায় সর্বত্র আতঙ্ক। পরাগের বোন পিয়ালী মণ্ডল বলেন, আমার সামনে থেকে ওরা আমাদের ভাইকে অস্ত্র উঁচিয়ে অপহরণ করেছে। মা, বোন ও ড্রাইভার চাচ্চুকে গুলি করেছে। আপনারা আমার ভাইকে খুঁজে এনে দিন। গুলিবিদ্ধ মা হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায়, আহত বড় বোন হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছে। আজ দু’দিন হলো আমার ভাই নেই। ভাইয়ের অপহরণ হওয়ার বর্ণনা দিতে গিয়ে সে মূর্ছা যাচ্ছিল বারবার। রোববার সকালে রাজধানীর কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা পশ্চিমপাড়ার মা, বোন ও গাড়ির চালককে গুলি করে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী বিমল মণ্ডলের একমাত্র পুত্র স্কুলছাত্র পরাগ মণ্ডল (৬)-কে অপহরণ করে মুখোশধারী ৪ সন্ত্রাসী। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সন্ত্রাসীরা এসেছিল দু’টি মোটরসাইকেলে।
ওই ঘটনায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় ব্যবসায়ী বিমল মণ্ডলের মা সাবিত্রী মণ্ডল বাদী হয়ে সোমবার অজ্ঞাতনামা ৪ জনকে আসামি করে অপহরণ মামলা করেছেন। পুলিশের এডিশনাল ডিআইজি মিজানুর রহমান, ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান, এএসপি সার্কেল শহিদুল ইসলাম গতকাল সকালে বিমল মণ্ডলের বাড়ি পরিদর্শন করেছেন। ডিআইজি মিজানুর রহমান উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে ঘটনাটি একটি বিশেষ মামলার গুরুত্ব দিয়ে পুলিশ তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। পুলিশের পাশাপাশি তিনটি গোয়েন্দা সংস্থা এবং র‌্যাবের বিশেষ টিম শিশু পরাগকে উদ্ধারসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপহরণকারী চক্রকে শনাক্তকরণ ও গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। পুলিশ বিমল মণ্ডলের সঙ্গে জমিজমা-সংক্রান্ত বিরোধ, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব ও পারিবারিক বিরোধ- তিনটি ক্লু নিয়ে মাঠে নেমেছে বলে তিনি জানান। তবে ঘটনার তদন্তে পুলিশের বেশ অগ্রগতি এবং শিগগিরই ভাল ফল পাওয়ার আশা ব্যক্ত করেছেন ঢাকা জেলার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মো. ফারুক হোসেন। গতকাল সরজমিন বিমল মণ্ডলের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে গোটা পরিবারের মধ্যে এক অজানা আতঙ্ক। পুলিশের আশার বাণীতে কোন আস্থা আনতে পারছে না মণ্ডল পরিবার। এমনকি স্থানীয় জনগণও। এলাকায় বিমল মণ্ডল একজন পরোপকারী মানুষ হিসেবে পরিচিত। তার সঙ্গে কারও শত্রুতা বা বিরোধ রয়েছে এমনটি ভাবতেও পারেন না কেউ। শুভাঢ্যা পশ্চিমপাড়ার মণ্ডলবাড়ী এলাকাবাসীর কাছে বহুদিন ধরে ভাল মানুষের বাড়ি বলে পরিচিত। কি কারণে সেই পরিবারের ওপর এই ঘটনা, তা অনেকটা ভাবিয়ে তুলেছে এলাকাবাসীকে। ব্যবসায়ী মণ্ডল পরিবারের দাবি, যে কোন কিছুর বিনিময়ে তাদের একমাত্র পুত্র সন্তানকে তারা ফেরত পেতে চান। বিমল মণ্ডল জানান, আমার সঙ্গে কারও এমন কোন বিরোধ নেই যার ফলে শিশু পুত্রকে অপহরণ করতে পারে। তবে কিছুদিন আগে শুভাঢ্যা এলাকার জনৈক ব্যক্তির সঙ্গে তার জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। কিন্তু সেটা মিটে গেছে। বিমল মণ্ডলের প্রতিবেশী জয়দেব চন্দ্র জানান, কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ ভূমিদস্যুদের পক্ষে কাজ করে আসছে। হিন্দু সমপ্রদায়ের জমি পুলিশ দিয়ে দখল করে নিলেও পিছু ক্ষতির আশঙ্কায় সবাইকে নীরব থাকতে হচ্ছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ- পরিদর্শক আফজাল হোসেন জানান, আসামি ধরার চেয়ে পুলিশ পরাগকে উদ্ধার করাটাকে জরুরি মনে করছে । তদন্তের স্বার্থে তেমন কোন কিছু বলা যাচ্ছে না বলে তিনি জানান। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিমত, বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কায় রহস্যজনক কারণে মণ্ডল পরিবার নিশ্চুপ। এদিকে ধনাঢ্য এই ব্যবসায়ীর একমাত্র পুত্র অপহরণের পর থেকে বাড়ির লোকজন মুখে কুলুপ দিয়ে রেখেছে। সবার মুখে এক কথা- এর পেছনে কি রয়েছে কেউ জানে না।
প্রকাশ্যে মোটরসাইকেলযোগে অস্ত্রধারী ৪ সন্ত্রাসী মায়ের কোল থেকে তার একমাত্র পুত্রকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় গোটা এলাকা জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে চরম আতঙ্ক। নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে অন্যান্য পরিবার। পুলিশ আদৌ স্কুলছাত্র পরাগ মণ্ডলকে উদ্ধার করতে পারবে কিনা তা নিয়েও সংশয় এলাকাবাসীর। অন্য অভিভাবকরা তাদের স্কুলগামী শিশুদের নিয়ে উদ্বিগ্ন। রাজধানীর এক সময়ের সন্ত্রাসীদের অভয়াশ্রম হিসেবে পরিচিত কেরানীগঞ্জ কি আবার অশান্ত হয়ে উঠছে- এমন প্রশ্ন এলাকাবাসীর। আইডিয়াল কিন্ডারগার্টেনের অভিভাবক রুমা জানান, পরাগ মণ্ডলের অপহরণ ঘটনার পর থেকে এলাকার সব বিদ্যালয়ের অভিভাবক মহল এখন উদ্বিগ্ন।
এদিকে আমাদের কেরানীঞ্জ প্রতিনিধি জানান, অপহৃত পরাগ মণ্ডলের পরিবারটির মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়ায় তাদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য পশ্চিম শুভাঢ্যা এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার বিকালে পশ্চিমপাড়া এলাকায় এক প্রতিবাদ সভার ডাক দিয়েছে এলাকাবাসী। অপহৃত পরাগের মা লিপি রানী মণ্ডল বক্ষব্যাধি হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায় বিশেষ পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। গুলিবিদ্ধ বোন পিণাকি মণ্ডলকে বাড়িতে আনা হয়েছে। ড্রাইভার নজরুল মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.