পুলিশের হাতে অবৈধ গোলাবারুদ-অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য হুমকি

বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর দুই সদস্য যথাক্রমে নায়েক জেনাল চাকমা ও প্রেম চাকমার কাছ থেকে অবৈধ ৫০০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে পুলিশ। গুলিগুলো বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানার তৈরি। পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা কেবল বৈধ অস্ত্র ও গুলি বহন করতে পারেন।


তাদের কোনো সদস্যের হাতে এভাবে অবৈধ অস্ত্র কিংবা গোলাবারুদ থাকাটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। শুধু তা-ই নয়, এই দুই পুলিশ সদস্যের মাধ্যমে গুলিগুলো পার্বত্য অঞ্চলে সরবরাহ করার যে পরিকল্পনার কথা প্রকাশ পেয়েছে, তা এই উদ্বেগ আরো বাড়িয়ে দেয়। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তাদের এই গুলি পাওয়ার উৎস সম্পর্কেও। যেহেতু পুলিশ বাহিনী বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানা থেকে তৈরি গুলি ব্যবহার করে থাকে, তাই মনে করা হতে পারে, তারা পুলিশের সংগ্রহশালা থেকেও গুলি সংগ্রহ করে থাকতে পারে। কিন্তু এত গুলি কিভাবে পুলিশ বাহিনীর সংগ্রহশালা থেকে তাদের হাতে চলে গেছে, তা অবশ্যই খতিয়ে দেখতে হবে। তাহলে কি পুলিশের অস্ত্র ও গুলি সংরক্ষণে যথাযথ নিরাপত্তা বিধান করা হয় না? নাকি তারা এসব গুলি অন্য কোথাও থেকে সংগ্রহ করেছে! তাই যে পুলিশ বাহিনী নিজ সদস্যদেরই অবৈধ গুলি রাখার তথ্যগুলো বের করতে পেরেছে, তারাই সংগ্রহসূত্রও বের করতে পারবে_এমন প্রত্যাশা সংগত।
আটক দুই পুলিশ সদস্যের সঙ্গে পার্বত্য অঞ্চলে শান্তিবিঘ্নকারী সংগঠনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তারা বলতে পারছে না ইতিপূর্বে কী পরিমাণ গুলি কিংবা অস্ত্র এই দুই সদস্যের মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের হাতে চলে গেছে। পুলিশের উচিত হবে অতি দ্রুত সেই তথ্য উদ্ধার করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা। পার্বত্য শান্তিচুক্তির আওতায় জনসংহতি সমিতির সদস্যদের পুনর্বাসনের অংশ হিসেবে পুলিশ বাহিনীতে আত্তীকরণ করা হয়। কিন্তু প্রকাশ্যে তারা জনসংহতি সমিতির সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে ফেললেও কার্যত তারা সন্ত্রাসী পরিকল্পনা বাস্তবায়নেই কাজ করছিল। দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর লোকজনই যদি এহেন কাজে লিপ্ত থাকে, তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টি যে কতটা নাজুক অবস্থায় রয়েছে, তা সহজেই অনুমেয়। পুলিশের অনেক গোপন তথ্য সন্ত্রাসীদের আগাম জেনে ফেলার যে অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে, এই দুই সদস্যের গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনা থেকে তারও যোগসূত্র পাওয়া যায়। এ মুহূর্তে জনসংহতি সমিতির যেসব সাবেক সদস্য নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীতে চাকরি করছেন, তাঁদের বিষয়টিও সন্দেহের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। অনাকাঙ্ক্ষিত হলেও এতে অনেক নির্দোষ সদস্যদের ওপরও নজরদারি বেড়ে যাবে। ফলে নির্দোষ কর্মীদের মানসিক অশান্তি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে। এই দুই পুলিশ যে কাজটি করেছে, তা নিজেদের সম্প্রদায়ের মানুষের জন্যও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। সর্বোপরি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে এ ধরনের কাজ যাতে ভবিষ্যতে আর না হয়, সেদিকে পুলিশ বাহিনীসহ নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। এই ঘটনা থেকে অন্যান্য বাহিনীরও শিক্ষা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে আমরা মনে করি।

No comments

Powered by Blogger.