শুভঙ্করের ফাঁকি by একরামুল হক শামীম
শুভঙ্করের ফাঁকি কথাটি আমাদের সমাজে বেশ প্রচলিত। এই শব্দগুচ্ছের উৎপত্তির পেছনে আছেন গণিতবিদ শুভঙ্কর। অবশ্য শুরুতেই তার নাম শুভঙ্কর ছিল না। গণিতশাস্ত্র এক সময় সংস্কৃত ভাষায় লেখা হতো। তখন সাধারণ মানুষের জন্য গণিতশাস্ত্র পড়া কঠিন ব্যাপার ছিল।
তখন ভৃগুরাম দাস নামে এক গণিতবিদ সহজ পদাবলির মাধ্যমে গণিতকে প্রকাশ করা শুরু করেন। লোকজনের মধ্যে জনপ্রিয়তা পায় তার এই গণিত বিষয়ক সহজ পদাবলি। লোকের কাছে এই পদাবলিগুলোকে মনে হতে থাকে শুভকর অর্থাৎ উপকারী। শুভকর থেকে ভৃগুরাম দাসের নাম হয় শুভঙ্কর। শুভঙ্কর গণিতকে যেভাবে কবিতার মতো করে তুলে ধরতেন, শিক্ষার্থীদের কাছে তা মনে হতো কবিতা। এই বিষয়টিই 'শুভঙ্করের ফাঁকি' নামে পরিচিতি পায়। শুরুতে বিষয়টির সঙ্গে ইতিবাচক বিষয় জড়িত ছিল, কঠিন গণিতকে সহজ করে তুলে ধরার ব্যাপার ছিল। কিন্তু কালক্রমে ব্যবহারে ব্যবহারে এই শব্দগুচ্ছের অর্থ পাল্টে যেতে থাকে। এখন নেতিবাচক অর্থেই এটি বেশি ব্যবহৃত হয়। শব্দের ব্যবহার নেতিবাচক অর্থে হওয়ার পেছনে বোধ হয় 'ফাঁকি' শব্দটির ভূমিকা হয়েছে। ফাঁকি মানে প্রতারণা বা ছলনা। বাংলা একাডেমী প্রকাশিত ব্যবহারিক বাংলা অভিধান জানাচ্ছে, ফাঁকির অর্থ প্রতারণা, ছলনা, বঞ্চনা, ঠকামি, চাতুরী, ধাপ্পা, ধোঁকা। শুভঙ্করের ফাঁকি কিংবা কেবল 'ফাঁকি' নিয়ে শুরুতেই এতগুলো কথার অবতারণার কারণ ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।
সম্প্রতি ব্যক্তিগত কাজে গিয়েছিলাম নীলক্ষেতে। সেখানকার একটি দোকান থেকে ছবির কাজ করাচ্ছিলাম। তখন লক্ষ্য করলাম দুই কলেজপড়ূয়া তরুণ দোকানির সঙ্গে কিছু একটা নিয়ে দরদাম করছে। জানতে পারলাম, তারা এসেছে কলেজের টাকা জমা নেওয়ার রসিদের নকল কপি বের করার জন্য। পুরনো একটি ব্যবহৃত রসিদ স্ক্যান করার পর ফটোশপের মাধ্যমে নতুন অব্যবহৃত রসিদ তৈরি করা হবে। সেই রসিদ ব্যবহার করে 'প্রতারণার' কাজ সারবে তারা। বিষয়টি দেখে বেশ অবাক হলাম। এই দুই শিক্ষার্থী ঠিক কাদের ফাঁকি দিচ্ছে? তাদের অভিভাবক কষ্ট করে উপার্জন করা টাকা তুলে দিচ্ছেন সন্তানের হাতে। কলেজের বেতন ও অন্যান্য ফি সেই টাকা থেকেই সন্তান পরিশোধ করবে_ এমনটাই প্রত্যাশা তাদের। কিন্তু সেই সন্তান যখন নিয়মমতো টাকা পরিশোধ না করে জাল রসিদ বানিয়ে বাবা-মায়ের সামনে হাজির করে তখন বিষয়টি কেমন ধরনের ফাঁকি হয়? পরবর্তী সময় হয়তো সেই সন্তান অন্য কোনো বাহানা করে বাবা-মায়ের কাছ থেকে আবারও টাকা আদায় করে নেবে। বাংলা একাডেমীর ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে ফাঁকি শব্দটি নিয়ে যে বাক্য রচনা রয়েছে তা হলো_ 'ফাঁকি দিয়ে টাকাগুলো নিয়ে গেল।' সন্তান যখন বাবা-মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়েও নির্দিষ্ট কাজে ব্যবহার করে না তখন সেটি কেমন ফাঁকি হয়? 'ফাঁকি দিয়ে টাকাগুলো নিয়ে গেল'_ এমন কথা কি বাবা-মা অন্য কাউকে বলতে পারেন?
জাল সনদ তৈরির অভিযোগ অনেক আগে থেকেই রয়েছে। নীলক্ষেতের মতো কিছু মার্কেটের দোকানদাররা টাকার বিনিময়ে এসব জাল সনদ তৈরি করে দিচ্ছে। এসব জাল সনদ ব্যবহার করে চাকরি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির মতো কাজগুলো হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। জাল সনদ তৈরির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের ধরার জন্য নানা সময় অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি। উপরন্তু সমস্যা হিসেবে যুক্ত হয়েছে টাকা জমা দেওয়ার রসিদ নকল করার বিষয়টি। এসব সমস্যা সমাধানের ভালো একটি উপায় হতে পারে ডিজিটাল প্রক্রিয়ার অধিক ব্যবহার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে পদ্ধতিতে বর্তমানে ভর্তি প্রক্রিয়া চালাচ্ছে তাতে জাল সনদ ব্যবহার করে কেউ আবেদন করতে পারবে না। কারণ শিক্ষার্থীর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার তথ্য নেওয়া হয় শিক্ষা বোর্ডের ডাটাবেজ থেকে। এভাবে বিভিন্ন জায়গায় ডিজিটাল প্রক্রিয়া চালু করতে পারলে হয়তো জাল সনদ ও রসিদ তৈরির দৌরাত্ম্য কমানো সম্ভব হবে।
সম্প্রতি ব্যক্তিগত কাজে গিয়েছিলাম নীলক্ষেতে। সেখানকার একটি দোকান থেকে ছবির কাজ করাচ্ছিলাম। তখন লক্ষ্য করলাম দুই কলেজপড়ূয়া তরুণ দোকানির সঙ্গে কিছু একটা নিয়ে দরদাম করছে। জানতে পারলাম, তারা এসেছে কলেজের টাকা জমা নেওয়ার রসিদের নকল কপি বের করার জন্য। পুরনো একটি ব্যবহৃত রসিদ স্ক্যান করার পর ফটোশপের মাধ্যমে নতুন অব্যবহৃত রসিদ তৈরি করা হবে। সেই রসিদ ব্যবহার করে 'প্রতারণার' কাজ সারবে তারা। বিষয়টি দেখে বেশ অবাক হলাম। এই দুই শিক্ষার্থী ঠিক কাদের ফাঁকি দিচ্ছে? তাদের অভিভাবক কষ্ট করে উপার্জন করা টাকা তুলে দিচ্ছেন সন্তানের হাতে। কলেজের বেতন ও অন্যান্য ফি সেই টাকা থেকেই সন্তান পরিশোধ করবে_ এমনটাই প্রত্যাশা তাদের। কিন্তু সেই সন্তান যখন নিয়মমতো টাকা পরিশোধ না করে জাল রসিদ বানিয়ে বাবা-মায়ের সামনে হাজির করে তখন বিষয়টি কেমন ধরনের ফাঁকি হয়? পরবর্তী সময় হয়তো সেই সন্তান অন্য কোনো বাহানা করে বাবা-মায়ের কাছ থেকে আবারও টাকা আদায় করে নেবে। বাংলা একাডেমীর ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে ফাঁকি শব্দটি নিয়ে যে বাক্য রচনা রয়েছে তা হলো_ 'ফাঁকি দিয়ে টাকাগুলো নিয়ে গেল।' সন্তান যখন বাবা-মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়েও নির্দিষ্ট কাজে ব্যবহার করে না তখন সেটি কেমন ফাঁকি হয়? 'ফাঁকি দিয়ে টাকাগুলো নিয়ে গেল'_ এমন কথা কি বাবা-মা অন্য কাউকে বলতে পারেন?
জাল সনদ তৈরির অভিযোগ অনেক আগে থেকেই রয়েছে। নীলক্ষেতের মতো কিছু মার্কেটের দোকানদাররা টাকার বিনিময়ে এসব জাল সনদ তৈরি করে দিচ্ছে। এসব জাল সনদ ব্যবহার করে চাকরি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির মতো কাজগুলো হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। জাল সনদ তৈরির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের ধরার জন্য নানা সময় অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি। উপরন্তু সমস্যা হিসেবে যুক্ত হয়েছে টাকা জমা দেওয়ার রসিদ নকল করার বিষয়টি। এসব সমস্যা সমাধানের ভালো একটি উপায় হতে পারে ডিজিটাল প্রক্রিয়ার অধিক ব্যবহার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে পদ্ধতিতে বর্তমানে ভর্তি প্রক্রিয়া চালাচ্ছে তাতে জাল সনদ ব্যবহার করে কেউ আবেদন করতে পারবে না। কারণ শিক্ষার্থীর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার তথ্য নেওয়া হয় শিক্ষা বোর্ডের ডাটাবেজ থেকে। এভাবে বিভিন্ন জায়গায় ডিজিটাল প্রক্রিয়া চালু করতে পারলে হয়তো জাল সনদ ও রসিদ তৈরির দৌরাত্ম্য কমানো সম্ভব হবে।
No comments