বিশ্লেষণ- এবার কি অটল থাকতে পারবেন মনমোহন?
দেশের অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে গত সপ্তাহে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সরকার। গত বছরও মনমোহন এ রকম পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তবে বিক্ষোভ দমাতে শেষ পর্যন্ত পিছু হটেন তিনি। এবার আর হয়তো তিনি পিছপা হবেন না—এমনটিই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণের ২৪ ঘণ্টার মাথায় মনমোহন ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি দুই দশক আগে ভারতের অর্থনীতিকে উদারীকরণের জন্য বিভিন্ন সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন। আজও তিনি সংস্কারের ক্ষেত্রে সেই বিজয়ীর বেশেই রয়েছেন।
অক্সফোর্ডে পড়াশোনা করা এই অর্থনীতিবিদের একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলেন, লোকজন খুবই খুশি। যদিও সরকারি দপ্তরগুলোতে এই সংস্কার কর্মসূচি নিয়ে উচ্চবাচ্য নেই। তবে সবাই খুব সন্তুষ্ট।
২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বিতর্কিত বেসামরিক পারমাণবিক চুক্তির পর বেকায়দায় পড়েছিলেন মনমোহন। এরপর গত বছর তিন দফা গুরুত্বপূর্ণ কিছু অর্থনৈতিক নীতি বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েও তিনি শেষমেশ বিক্ষোভের মুখে পিছু হটেন। এ ছাড়া একের পর এক দুর্নীতির কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে মনমোহনের সরকার। এ অবস্থায় নতুন এই সংস্কার কর্মসূচি নিয়ে সরকার রাজনৈতিকভাবে বড় ধরনের ধাক্কা খাবে—এটা আগে থেকেই আন্দাজ করা হচ্ছিল।
তবে ধাক্কা যাই আসুক, এবার হয়তো আর মনমোহন পিছু হটবেন না বলেই মনে হচ্ছে। এর বড় কারণ হয়তো এটাই যে, তাঁর সামনে বিকল্প সব পথই বন্ধ। গত শনিবার সরকারি অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে বৈঠককালে মনমোহন বলেন, ‘সংস্কার কর্মসূচির জন্য মনোবল দরকার এবং কিছু ঝুঁকিও নিতে হয়। এটি যেন সফল হয়, সে জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে।’
মনমোহনের দল কংগ্রেসও এবারের পদক্ষেপ টিকে যাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। দলের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীসহ বেশ কিছু নেতা ও সরকারি কর্মকর্তার মূল্যায়ন হচ্ছে, এই পদক্ষেপের কারণে জোটের শরিক হারানোর ঝুঁকি রয়েছে। সেটি হলে দেশে আগাম নির্বাচন দিতে হতে পারে। তার পরও তাঁরা নিজেদের অবস্থানকে নিরাপদ মনে করছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক নিরজা চৌধুরী বলেন, ‘হিসাবটা এমন, লোকজন এ নিয়ে চেঁচামেচি করবে। তবে কেউই এটিকে প্রতিরোধ করতে ঢাল-তলোয়ার হাতে মাঠে নামবে না।’
মনমোহনের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে প্রচুর ভর্তুকি দেওয়া অব্যাহত রাখা সরকারের জন্য কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই গত বুধবার কংগ্রেস দলের কোর কমিটির সর্বশেষ যে বৈঠক হয়, সেখানে ‘চলো, সবকিছুর সঙ্গে এগিয়ে যাই’ নীতি গৃহীত হয়।
নতুন সংস্কার কর্মসূচির প্রতিবাদে এরই মধ্যে বিক্ষোভ করেছে ইউপিএর শরিক তৃণমূল কংগ্রেস এবং শিবসেনাসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। বিশ্লেষকদের মতে, আগামী কয়েক দিনের রাজনৈতিক ডামাডোলের প্রেক্ষাপটে উদ্ভূত পরিস্থিতিই বাতলে দেবে যে সংস্কারের সিদ্ধান্তটি ঐতিহাসিক; নাকি মনমোহনের শুধুই একটি পাদটীকা। রয়টার্স।
No comments