ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের কাজে ধীরগতি by রফিকুল বাহার
বাংলাদেশের অর্থনীতির জীবনরেখা বলা চলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে। দেশের আমদানি-রপ্তানির সিংহভাগ পণ্য আনা-নেওয়ার সড়কটি পরিবহন ও মানুষ চলাচলের চাপ কুলোতে না পারায় এটি চার লেনে উন্নীত করার কাজ শুরু হয় ২০১০-এ।
কিন্তু এ রকম এক গুরুত্বপূর্ণ সড়কের দ্রুত সম্প্রসারণের কাজটি এখন অনেকটা চাপা পড়ে গেছে পদ্মা সেতুসহ নানা বিতর্কের আড়ালে। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কাজ চলছে কিংবা কখনো একেবারেই থেমে যাচ্ছে।
২৬৪ কিলোমিটার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ১৯২ কিলোমিটার হবে চারলেনের। এই কাজ দুই বছরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সময়মতো সেটি হচ্ছে না। এতে খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা। কালের কণ্ঠকে এই তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক প্রকল্পের অতিরিক্ত পরিচালক স্বপন কুমার নাথ।
দেশের প্রধান সামুদ্রিক বন্দর চট্টগ্রাম দিয়ে গত বছর চার কোটি ৯০ লাখ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়েছে। গত বছর চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের শুল্কায়ন বাবদ সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে আনুমানিক ২৩ হাজার কোটি টাকা, আর দেশি-বিদেশি জাহাজ বন্দরে ভেড়াসহ বিভিন্ন চার্জ ও আমদানি-রপ্তানিকৃত পণ্যের বিভিন্ন মাশুল বাবদ বন্দরের রাজস্ব আয় হয়েছে ১৫০৮ কোটি টাকা। প্রতি বছর আমদানি-রপ্তানির প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে চলেছে ১০ থেকে ১২ শতাংশ।
এই মহাসড়কের সম্প্রসারণ কাজের ধীরগতি প্রসঙ্গে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কালের কণ্ঠকে বলেন, 'দরবার, মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক প্রতিষ্ঠানের বিরোধিতা, মামলা ও প্রতিবন্ধকতার কারণে প্রত্যাশিত গতিতে কাজ এগোয়নি। পাহাড়কাটার ব্যাপারে বিধি-নিষেধের কারণে সড়ক সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ মাটিও পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেক দেনদরবার করে এসব ঝামেলা মেটানো হয়েছে, এখন কাজের অগ্রগতি বেশ ভালো। হয়তো আমাদের মেয়াদকালে এই মহাসড়কের সম্প্রসারণের কাজ পুরোপুরি শেষ হবে না। তা ছাড়া বর্ষা মৌসুমে কি নির্মাণ কাজ হয়?'
খাদ্যশস্য, ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল, নির্মাণ শিল্পের কাঁচামাল, শিল্পকারখানার যন্ত্রপাতি, গাড়ি, ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও তৈরি পোশাক শিল্পের যাবতীয় উপাদান রয়েছে এই আমদানি-রপ্তানির পণ্যের তালিকায়। এসব পণ্যের অধিকাংশই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দেশের নানা জেলায় ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানে আনা-নেওয়া করা হয়। শুধু পণ্য পরিবহন নয়, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রয়োজনীয় কাজে গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়ক প্রতিদিন ব্যবহার করে কয়েক লাখ লোক। অর্থাৎ চট্টগ্রাম বন্দরের মতোই 'ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক' ও দেশের অর্থনীতির 'লাইফ লাইন' বলা যায়।
তাই সব মিলিয়ে দেশের অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। কয়েক বছর ধরেই এই মহাসড়কের সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের জন্য সরকারের নীতিনির্ধারক, ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের মধ্যে নানা পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা চললেও কার্যত কাজের কোনো ধরনের অগ্রগতি নেই। এমনকি গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কের চার লেনের চলমান সম্প্রসারণ কাজ দ্রুত শেষ করার বিষয়টিও এক প্রকার ঝিমিয়ে পড়েছে। বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক আলোচনায় ও সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি আলোচনায় আসছে না।
সাধারণ ব্যবহারকারী থেকে শুরু করে দেশের অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও চেম্বার নেতারাও এখন হতাশ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চারলেনের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন কাজ নিয়ে। চট্টগ্রাম চেম্বারের সরকারসমর্থিত সভাপতি মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আগে যেখানে ৫/৬ ঘণ্টায় ঢাকায় পেঁৗছানো যেত, এখন লাগছে ১৫/১৬ ঘণ্টা। গত দেড় বছর ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডে যাতায়াত ছেড়ে দিয়েছি। এত ধীরগতিতে কাজ হচ্ছে যে এতে মানুষের দুর্ভোগের চেয়ে দেশের অর্থনীতিতে বেশি খারাপ প্রভাব পড়ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দেশের অর্থনীতিতে যেখানে ৯৫ শতাংশ ব্যবহার হবে, সেখানে পদ্মা সেতুর ব্যবহারের সম্ভাবনা মাত্র দুই শতাংশ।'
গত শুক্রবার ঢাকা থেকে বাসে ৮ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম পেঁৗছার উদাহরণ দিয়ে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মঈনুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, '৭/৮ বছর আগেও আমি নিজে গাড়ি চালিয়ে ৫ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম এসেছি। অথচ এখন কোনো কোনো সময় ২২ ঘণ্টাও লেগে যায়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চার লেনের কাজ এখন অগ্রাধিকার পাচ্ছে না, অর্থ ছাড়ও ঠিকমতো হচ্ছে না। ঢাকা থেকে আসার সময় দেখেছি বেশির ভাগ জায়গায় দ্রুত কাজ হচ্ছে না, ঝিমিয়ে পড়েছে উন্নয়ন কাজ। বড় কথা হলো অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অথচ সব মনোযোগ ও আলোচনা এখন পদ্মা সেতু নিয়ে। এখানেও রাজনীতি আছে। তবে আমরা পদ্মা সেতুর বিরোধী নই।'
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদের অভিযোগ অস্বীকার করে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কালের কণ্ঠকে বলেন, 'অর্থ ছাড় না করা ও অগ্রাধিকার না দেওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছেন, প্রয়োজনে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ দেবেন এই মহাসড়কের জন্য। তবে এটা ঠিক আমার আগে গত অর্থবছরে এই বিষয়ে কিছুটা দুর্বলতা ছিল।'
পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা থেকে বছরে ৩০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য ও সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানি করে দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপ। এই গ্রুপের কর্ণধার মোস্তফা কামাল কালের কণ্ঠকে বলেন, '১৯৯১ সালের প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান থেকে শুরু করে বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সম্প্রসারণের বিষয়টি উত্থাপন করেছি। আর কত বলব, কিভাবে বলব? আপনারা (সাংবাদিক) বলেন ও লেখেন। এই মহাসড়ক কোনোভাবে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়লে পুরো দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়বে।'
যানজটের কারণে দেশের কী পরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতি হয় সে বিষয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছে 'পরিকল্পিত ফোরাম, চট্টগ্রাম'-বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষ দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এর সঙ্গে যুক্ত। ২০০৮ সালে এই সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি জরিপ চালানো হয় যে, যানজটের কারণে কী পরিমাণ জ্বালানি নষ্ট হয়। এ প্রসঙ্গে সংগঠনের যোগাযোগ ব্যবস্থাপনাবিষয়ক কমিটির আহবায়ক প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ঢাকায় প্রতিবছর যানজটে অতিরিক্ত পাঁচ হাজার কোটি টাকার জ্বালানি পোড়ে, চট্টগ্রামে এক হাজার কোটি টাকা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটের কারণে আনুমানিক কয়েক হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত জ্বালানি পোড়ে। শুধু চট্টগ্রামের প্রবেশমুখ সিটি গেট এলাকায় জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, এই মহাসড়কে একটি স্পটেই প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকার জ্বালানি পুড়ছে যানজটে। এই জ্বালানির পুরোটাই বৈদেশিক মুদ্রায় বিদেশ থেকে আমদানীকৃত। অতিরিক্ত এই জ্বালানি পোড়ার কারণে অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে।'
২৬৪ কিলোমিটার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ১৯২ কিলোমিটার হবে চারলেনের। এই কাজ দুই বছরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সময়মতো সেটি হচ্ছে না। এতে খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা। কালের কণ্ঠকে এই তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক প্রকল্পের অতিরিক্ত পরিচালক স্বপন কুমার নাথ।
দেশের প্রধান সামুদ্রিক বন্দর চট্টগ্রাম দিয়ে গত বছর চার কোটি ৯০ লাখ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়েছে। গত বছর চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের শুল্কায়ন বাবদ সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে আনুমানিক ২৩ হাজার কোটি টাকা, আর দেশি-বিদেশি জাহাজ বন্দরে ভেড়াসহ বিভিন্ন চার্জ ও আমদানি-রপ্তানিকৃত পণ্যের বিভিন্ন মাশুল বাবদ বন্দরের রাজস্ব আয় হয়েছে ১৫০৮ কোটি টাকা। প্রতি বছর আমদানি-রপ্তানির প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে চলেছে ১০ থেকে ১২ শতাংশ।
এই মহাসড়কের সম্প্রসারণ কাজের ধীরগতি প্রসঙ্গে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কালের কণ্ঠকে বলেন, 'দরবার, মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক প্রতিষ্ঠানের বিরোধিতা, মামলা ও প্রতিবন্ধকতার কারণে প্রত্যাশিত গতিতে কাজ এগোয়নি। পাহাড়কাটার ব্যাপারে বিধি-নিষেধের কারণে সড়ক সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ মাটিও পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেক দেনদরবার করে এসব ঝামেলা মেটানো হয়েছে, এখন কাজের অগ্রগতি বেশ ভালো। হয়তো আমাদের মেয়াদকালে এই মহাসড়কের সম্প্রসারণের কাজ পুরোপুরি শেষ হবে না। তা ছাড়া বর্ষা মৌসুমে কি নির্মাণ কাজ হয়?'
খাদ্যশস্য, ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল, নির্মাণ শিল্পের কাঁচামাল, শিল্পকারখানার যন্ত্রপাতি, গাড়ি, ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও তৈরি পোশাক শিল্পের যাবতীয় উপাদান রয়েছে এই আমদানি-রপ্তানির পণ্যের তালিকায়। এসব পণ্যের অধিকাংশই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দেশের নানা জেলায় ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানে আনা-নেওয়া করা হয়। শুধু পণ্য পরিবহন নয়, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রয়োজনীয় কাজে গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়ক প্রতিদিন ব্যবহার করে কয়েক লাখ লোক। অর্থাৎ চট্টগ্রাম বন্দরের মতোই 'ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক' ও দেশের অর্থনীতির 'লাইফ লাইন' বলা যায়।
তাই সব মিলিয়ে দেশের অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। কয়েক বছর ধরেই এই মহাসড়কের সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের জন্য সরকারের নীতিনির্ধারক, ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের মধ্যে নানা পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা চললেও কার্যত কাজের কোনো ধরনের অগ্রগতি নেই। এমনকি গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কের চার লেনের চলমান সম্প্রসারণ কাজ দ্রুত শেষ করার বিষয়টিও এক প্রকার ঝিমিয়ে পড়েছে। বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক আলোচনায় ও সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি আলোচনায় আসছে না।
সাধারণ ব্যবহারকারী থেকে শুরু করে দেশের অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও চেম্বার নেতারাও এখন হতাশ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চারলেনের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন কাজ নিয়ে। চট্টগ্রাম চেম্বারের সরকারসমর্থিত সভাপতি মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আগে যেখানে ৫/৬ ঘণ্টায় ঢাকায় পেঁৗছানো যেত, এখন লাগছে ১৫/১৬ ঘণ্টা। গত দেড় বছর ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডে যাতায়াত ছেড়ে দিয়েছি। এত ধীরগতিতে কাজ হচ্ছে যে এতে মানুষের দুর্ভোগের চেয়ে দেশের অর্থনীতিতে বেশি খারাপ প্রভাব পড়ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দেশের অর্থনীতিতে যেখানে ৯৫ শতাংশ ব্যবহার হবে, সেখানে পদ্মা সেতুর ব্যবহারের সম্ভাবনা মাত্র দুই শতাংশ।'
গত শুক্রবার ঢাকা থেকে বাসে ৮ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম পেঁৗছার উদাহরণ দিয়ে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মঈনুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, '৭/৮ বছর আগেও আমি নিজে গাড়ি চালিয়ে ৫ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম এসেছি। অথচ এখন কোনো কোনো সময় ২২ ঘণ্টাও লেগে যায়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চার লেনের কাজ এখন অগ্রাধিকার পাচ্ছে না, অর্থ ছাড়ও ঠিকমতো হচ্ছে না। ঢাকা থেকে আসার সময় দেখেছি বেশির ভাগ জায়গায় দ্রুত কাজ হচ্ছে না, ঝিমিয়ে পড়েছে উন্নয়ন কাজ। বড় কথা হলো অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অথচ সব মনোযোগ ও আলোচনা এখন পদ্মা সেতু নিয়ে। এখানেও রাজনীতি আছে। তবে আমরা পদ্মা সেতুর বিরোধী নই।'
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদের অভিযোগ অস্বীকার করে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কালের কণ্ঠকে বলেন, 'অর্থ ছাড় না করা ও অগ্রাধিকার না দেওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছেন, প্রয়োজনে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ দেবেন এই মহাসড়কের জন্য। তবে এটা ঠিক আমার আগে গত অর্থবছরে এই বিষয়ে কিছুটা দুর্বলতা ছিল।'
পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা থেকে বছরে ৩০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য ও সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানি করে দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপ। এই গ্রুপের কর্ণধার মোস্তফা কামাল কালের কণ্ঠকে বলেন, '১৯৯১ সালের প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান থেকে শুরু করে বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সম্প্রসারণের বিষয়টি উত্থাপন করেছি। আর কত বলব, কিভাবে বলব? আপনারা (সাংবাদিক) বলেন ও লেখেন। এই মহাসড়ক কোনোভাবে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়লে পুরো দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়বে।'
যানজটের কারণে দেশের কী পরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতি হয় সে বিষয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছে 'পরিকল্পিত ফোরাম, চট্টগ্রাম'-বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষ দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এর সঙ্গে যুক্ত। ২০০৮ সালে এই সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি জরিপ চালানো হয় যে, যানজটের কারণে কী পরিমাণ জ্বালানি নষ্ট হয়। এ প্রসঙ্গে সংগঠনের যোগাযোগ ব্যবস্থাপনাবিষয়ক কমিটির আহবায়ক প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ঢাকায় প্রতিবছর যানজটে অতিরিক্ত পাঁচ হাজার কোটি টাকার জ্বালানি পোড়ে, চট্টগ্রামে এক হাজার কোটি টাকা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটের কারণে আনুমানিক কয়েক হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত জ্বালানি পোড়ে। শুধু চট্টগ্রামের প্রবেশমুখ সিটি গেট এলাকায় জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, এই মহাসড়কে একটি স্পটেই প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকার জ্বালানি পুড়ছে যানজটে। এই জ্বালানির পুরোটাই বৈদেশিক মুদ্রায় বিদেশ থেকে আমদানীকৃত। অতিরিক্ত এই জ্বালানি পোড়ার কারণে অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে।'
No comments