হোল্ডিং ট্যাক্স বেড়েছে রাজধানীবাসী ক্ষুব্ধ by অমিতোষ পাল
কোনো ধরনের প্রচার-প্রচারণা ছাড়াই ১০ শতাংশ হারে বাড়তি হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। আগের বছরের হিসাব অনুযায়ী টাকাপয়সা নিয়ে নগর ভবনে হোল্ডিং ট্যাক্স জমা দিতে গিয়েই বিপদে পড়ছে নগরবাসী। এ নিয়ে ডিএসসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে নগরবাসীর ভুল বোঝাবুঝি থেকে
বচসার ঘটনা ঘটছে। বাড়ির মালিকরা বলছেন, হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত ডিএসসিসি তাঁদের জানায়নি। কোনো রকম মতামত না নিয়ে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত পুরোপুরি অযৌক্তিক।
ঢাকার ৫৯ উর্দু রোডের এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমার ছয় তলা একটি বাড়ির বিপরীতে
প্রতিবছর প্রায় ৪০ হাজার টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স দেই। এবার জমা দিতে এসে দেখি সেটা বাড়িয়ে ৪৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। কারণ জানতে চাইলে ডিএসসিসির কর্মচারীরা জানান, অনেক আগেই হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে।
এ খবর জানা না থাকায় প্রায় প্রতিদিনই বচসা, রাগারাগির ঘটনা ঘটছে নগরভবনে। ডিএসসিসির প্রশাসক মো. জিল্লার রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা গত ১ জুলাই থেকে ১০ শতাংশ হারে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাজেট ঘোষণার সময় এটা বলে দেওয়া হয়েছিল। যাঁরা বছরে ১০০ টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স দিতেন, তাঁরা এখন থেকে ১১০ টাকা দেবেন। এই অনুপাতে ট্যাক্স দিতে এলে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হবে না।' তিনি প্রচারণার স্বল্পতা স্বীকার করেন। বলেন, আরো প্রচারণা চালানোর দরকার ছিল, যাতে নগরবাসী পরিষ্কার ধারণা পেত। কয়েক দিনের মধ্যে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে নগরবাসীকে এ বিষয়ে জানানো হবে।
জানা গেছে, অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) হোল্ডিং সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৬০ হাজার। সর্বশেষ ২০১১-১২ অর্থবছরে হোল্ডিং ট্যাক্স থেকে ডিসিসি রাজস্ব পেয়েছিল ২৪০ কোটি টাকা। বিভক্তির পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে গত আগস্ট মাস পর্যন্ত হোল্ডিংয়ের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ২৪২। তবে ট্যাক্স বাড়ানোর পর এ খাতে রাজস্ব আদায় কী পরিমাণ বেড়েছে সে ব্যাপারে কিছু জানাতে পারেননি ডিএসসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, এখনই নয়, বছর শেষে হিসাব করে জানা যাবে। তবে এটা অবশ্যই বাড়বে, এটুকু জেনে রাখুন।
অন্যদিকে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হলেও নগরবাসীর সেবাপ্রাপ্তি মোটেও বাড়েনি। বরং বিভাজনের পর ভোগান্তি বেড়েছে। জন্মনিবন্ধন সনদ নিতেও আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে এখন টুপাইস দিতে হয়। অথচ হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির যৌক্তিকতা সম্পর্কে দক্ষিণের প্রশাসক জিল্লার রহমান বলেন, নগরবাসীর সেবাপ্রাপ্তির হার দিন দিন বাড়ছে। গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে সব জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। ঢাকায় বাড়িভাড়াও বেড়েছে। বাজার দর ও অন্যান্য উন্নয়ন ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় রেখে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনও নেওয়া হয়েছে। বরং যেটা বাড়ানো হয়েছে সেটা খুবই সীমিত।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৮৬ সালের ঢাকা সিটি করপোরেশন অধ্যাদেশ অনুযায়ী ১২ শতাংশ হারে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করত ডিসিসি। এরপর ২০০৭ সালে তৎকালীন মেয়র সাদেক হোসেন খোকা স্বনির্ধারিত পদ্ধতিতে হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণের মাধ্যমে আয় বৃদ্ধির কৌশল ঠিক করেন। প্রতি ভবনের ব্যবহারযোগ্য স্পেসের এক হাজার বর্গফুটের মাসিক ভাড়া ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। সারা বছরের ভাড়ার ১২ শতাংশ হোল্ডিং ট্যাক্স ধরা হয় বাড়ির মালিকদের জন্য। প্রত্যেক বাড়িওয়ালার জন্য বাড়ির নকশা দেখিয়ে হোল্ডিং ট্যাক্সের পরিমাণ নিজেই নির্ধারণের পদ্ধতি চালু হয় তখন। একই সঙ্গে চালু করা হয় রেট চার্ট। রেট চার্ট অনুযায়ী প্রধান সড়কের পাশের ভবনগুলোতে ১২ শতাংশের বাইরে আরো ৭ শতাংশ ট্যাক্স ধরা হয়। একইভাবে স্থানভেদে ২ ও ৩ শতাংশ অতিরিক্ত ট্যাক্সও ধার্য করা হয়। বর্তমানে হোল্ডিং ট্যাক্সের সঙ্গে এই রেট চার্ট পদ্ধতিও বহাল আছে। অভিযোগ আছে, ডিসিসির রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভবনমালিকদের সঙ্গে যোগসাজশ করে রেট চার্টের মূল্যায়ন সঠিকভাবে করেন না। এতে রাজস্ববঞ্চিত হয় করপোরেশন।
অন্যদিকে রাজস্ব বাড়াতে দীর্ঘদিন ধরেই অক্ট্রয় (নগরশুল্ক) প্রথা চালুর দাবি জানিয়ে আসছে ডিসিসি। যুক্তি হিসেবে বলা হচ্ছে, রাজধানীর রাস্তাঘাট কেবল নগরবাসীই ব্যবহার করেন না। এখানে বাইরেরও অনেক যানবাহন চলাচল করে। এসব যানবাহন শহরের ভেতরে প্রবেশের সময় নগরীর রাস্তা ব্যবহার করে। এসব যানবাহনের জন্য একটি নির্দিষ্ট হারে শুল্ক দেওয়ার দাবি ছিল ডিসিসির। আশির দশক পর্যন্ত এই প্রথা চালুও ছিল। সরকার অক্ট্রয় প্রথা তুলে দিয়ে থোক বরাদ্দ দিয়ে আসছিল। প্রথম দিকে প্রতিবছর ডিসিসিকে দুই কোটি ৫০ লাখ টাকা দেওয়া হলেও পরবর্তী সময়ে সেটা এক কোটিতে নেমে আসে। এ জন্য ডিসিসি বরাবরই এটা ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত করার দাবি জানিয়ে আসছিল। সরকার দাবি বাস্তবায়ন না করায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটে অক্ট্রয় প্রথা চালু করার ঘোষণা দেয়। কিন্তু সেটা এখন পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি। ডিএনসিসির উপপ্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মহসীন আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা অক্ট্রয় চালুর প্রস্তাব করেছিলাম। তবে এখন পর্যন্ত তা চালু করতে পারিনি। পুরো রাজধানীর একাংশে এটা চালু করাও জটিল।'
ঢাকার ৫৯ উর্দু রোডের এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমার ছয় তলা একটি বাড়ির বিপরীতে
প্রতিবছর প্রায় ৪০ হাজার টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স দেই। এবার জমা দিতে এসে দেখি সেটা বাড়িয়ে ৪৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। কারণ জানতে চাইলে ডিএসসিসির কর্মচারীরা জানান, অনেক আগেই হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে।
এ খবর জানা না থাকায় প্রায় প্রতিদিনই বচসা, রাগারাগির ঘটনা ঘটছে নগরভবনে। ডিএসসিসির প্রশাসক মো. জিল্লার রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা গত ১ জুলাই থেকে ১০ শতাংশ হারে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাজেট ঘোষণার সময় এটা বলে দেওয়া হয়েছিল। যাঁরা বছরে ১০০ টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স দিতেন, তাঁরা এখন থেকে ১১০ টাকা দেবেন। এই অনুপাতে ট্যাক্স দিতে এলে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হবে না।' তিনি প্রচারণার স্বল্পতা স্বীকার করেন। বলেন, আরো প্রচারণা চালানোর দরকার ছিল, যাতে নগরবাসী পরিষ্কার ধারণা পেত। কয়েক দিনের মধ্যে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে নগরবাসীকে এ বিষয়ে জানানো হবে।
জানা গেছে, অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) হোল্ডিং সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৬০ হাজার। সর্বশেষ ২০১১-১২ অর্থবছরে হোল্ডিং ট্যাক্স থেকে ডিসিসি রাজস্ব পেয়েছিল ২৪০ কোটি টাকা। বিভক্তির পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে গত আগস্ট মাস পর্যন্ত হোল্ডিংয়ের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ২৪২। তবে ট্যাক্স বাড়ানোর পর এ খাতে রাজস্ব আদায় কী পরিমাণ বেড়েছে সে ব্যাপারে কিছু জানাতে পারেননি ডিএসসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, এখনই নয়, বছর শেষে হিসাব করে জানা যাবে। তবে এটা অবশ্যই বাড়বে, এটুকু জেনে রাখুন।
অন্যদিকে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হলেও নগরবাসীর সেবাপ্রাপ্তি মোটেও বাড়েনি। বরং বিভাজনের পর ভোগান্তি বেড়েছে। জন্মনিবন্ধন সনদ নিতেও আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে এখন টুপাইস দিতে হয়। অথচ হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির যৌক্তিকতা সম্পর্কে দক্ষিণের প্রশাসক জিল্লার রহমান বলেন, নগরবাসীর সেবাপ্রাপ্তির হার দিন দিন বাড়ছে। গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে সব জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। ঢাকায় বাড়িভাড়াও বেড়েছে। বাজার দর ও অন্যান্য উন্নয়ন ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় রেখে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনও নেওয়া হয়েছে। বরং যেটা বাড়ানো হয়েছে সেটা খুবই সীমিত।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৮৬ সালের ঢাকা সিটি করপোরেশন অধ্যাদেশ অনুযায়ী ১২ শতাংশ হারে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করত ডিসিসি। এরপর ২০০৭ সালে তৎকালীন মেয়র সাদেক হোসেন খোকা স্বনির্ধারিত পদ্ধতিতে হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণের মাধ্যমে আয় বৃদ্ধির কৌশল ঠিক করেন। প্রতি ভবনের ব্যবহারযোগ্য স্পেসের এক হাজার বর্গফুটের মাসিক ভাড়া ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। সারা বছরের ভাড়ার ১২ শতাংশ হোল্ডিং ট্যাক্স ধরা হয় বাড়ির মালিকদের জন্য। প্রত্যেক বাড়িওয়ালার জন্য বাড়ির নকশা দেখিয়ে হোল্ডিং ট্যাক্সের পরিমাণ নিজেই নির্ধারণের পদ্ধতি চালু হয় তখন। একই সঙ্গে চালু করা হয় রেট চার্ট। রেট চার্ট অনুযায়ী প্রধান সড়কের পাশের ভবনগুলোতে ১২ শতাংশের বাইরে আরো ৭ শতাংশ ট্যাক্স ধরা হয়। একইভাবে স্থানভেদে ২ ও ৩ শতাংশ অতিরিক্ত ট্যাক্সও ধার্য করা হয়। বর্তমানে হোল্ডিং ট্যাক্সের সঙ্গে এই রেট চার্ট পদ্ধতিও বহাল আছে। অভিযোগ আছে, ডিসিসির রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভবনমালিকদের সঙ্গে যোগসাজশ করে রেট চার্টের মূল্যায়ন সঠিকভাবে করেন না। এতে রাজস্ববঞ্চিত হয় করপোরেশন।
অন্যদিকে রাজস্ব বাড়াতে দীর্ঘদিন ধরেই অক্ট্রয় (নগরশুল্ক) প্রথা চালুর দাবি জানিয়ে আসছে ডিসিসি। যুক্তি হিসেবে বলা হচ্ছে, রাজধানীর রাস্তাঘাট কেবল নগরবাসীই ব্যবহার করেন না। এখানে বাইরেরও অনেক যানবাহন চলাচল করে। এসব যানবাহন শহরের ভেতরে প্রবেশের সময় নগরীর রাস্তা ব্যবহার করে। এসব যানবাহনের জন্য একটি নির্দিষ্ট হারে শুল্ক দেওয়ার দাবি ছিল ডিসিসির। আশির দশক পর্যন্ত এই প্রথা চালুও ছিল। সরকার অক্ট্রয় প্রথা তুলে দিয়ে থোক বরাদ্দ দিয়ে আসছিল। প্রথম দিকে প্রতিবছর ডিসিসিকে দুই কোটি ৫০ লাখ টাকা দেওয়া হলেও পরবর্তী সময়ে সেটা এক কোটিতে নেমে আসে। এ জন্য ডিসিসি বরাবরই এটা ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত করার দাবি জানিয়ে আসছিল। সরকার দাবি বাস্তবায়ন না করায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটে অক্ট্রয় প্রথা চালু করার ঘোষণা দেয়। কিন্তু সেটা এখন পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি। ডিএনসিসির উপপ্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মহসীন আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা অক্ট্রয় চালুর প্রস্তাব করেছিলাম। তবে এখন পর্যন্ত তা চালু করতে পারিনি। পুরো রাজধানীর একাংশে এটা চালু করাও জটিল।'
No comments