সিএসইতে লেনদেন হয়েছে শতকোটি টাকার বেশি-প্যাকেজকে স্বাগত জানালেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা by রাশেদুল তুষার,

পুঁজিবাজার নিয়ে সরকারি প্যাকেজকে সতর্কতার সঙ্গে স্বাগত জানান পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সরকার ঘোষিত প্যাকেজ বিনিয়োগকারীরা কিভাবে গ্রহণ করেছেন, তা আজকের (বৃহস্পতিবার) লেনদেন দেখে আঁচ করা যাবে বলে জানান তাঁরা।পুঁজিবাজার প্যাকেজকে স্বাগত জানিয়ে সিএসই সভাপতি ফখর উদ্দিন আলী আহমেদ গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'গৃহীত পদক্ষেপগুলো বেশ ভালো।


উদ্যোক্তা পরিচালকদের ৩০ শতাংশ শেয়ার থাকার যে বাধ্যবাধকতা জারি করা হয়েছে, সেটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত।'
তিনি বলেন, 'এই ঘোষণায় বাজারে ধীরে ধীরে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু যদি কালকেই বাজারে বড় ধরনের সূচকের পরিবর্তন ঘটে, তবে সেটা মানানসই হবে না।'
শেয়ারবাজারে গতকালের শেষদিকে এসে হঠাৎ দরপতনে খুব বেশি অস্বাভাবিক কিছু দেখছেন না সিএসই সভাপতি। তিনি বলেন, 'গত সপ্তাহের শেষদিকে কিংবা রবিবার যাঁরা শেয়ার কিনেছেন, তাঁরা লাভ তুলে নিয়েছেন। প্যাকেজ ঘোষণার রিস্ক তাঁরা নিতে চাননি। তবে এ ধরনের মানসিকতা বাজারের জন্য ভালো নয়।'
সিএসইর আরেক পরিচালক ও আইল্যান্ড সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, 'স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি_যে সিদ্ধান্ত এসেছে, তা বেশ গুরুত্ব বহন করে। এতে বাজারে আস্থা সৃষ্টি হওয়া উচিত। তবে যেসব উদ্যোক্তা ৩০ শতাংশ শেয়ার কেনার বাধ্যবাধকতার মধ্যে পড়েছেন, তাঁদের জন্য ছয় মাস সময়টা আরো বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। অন্যথায় তাঁরা আইনি জটিলতায় গিয়ে ভালো বিষয়টিকে দীর্ঘায়িত করতে পারেন।' তিনি বলেন, 'এখন দেখার বিষয়, আমাদের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা এই উদ্যোগকে কিভাবে গ্রহণ করেন। তাঁরা নগদ প্রাপ্তির যে আশা করেছিলেন, তা কিছুটা দীর্ঘায়িত হয়েছে। তাঁদের আস্থা যাতে নষ্ট না হয়, এ জন্য যেসব প্রতিষ্ঠান সরকারি ছাড়ের আওতায় এসেছে, তাদের উদ্যোগী হতে হবে। আগামীকালের (বৃহস্পতিবার) বাজার যাতে ইতিবাচক ধারায় থাকে, সে জন্য সঠিক আচরণ করা প্রয়োজন।'
ইনভেস্টরস ফোরাম অব চিটাগাংয়ের আহ্বায়ক আছলাম মোরশেদ সংগঠনের পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি না দিলেও ব্যক্তিগত মতামত হিসেবে ঘোষিত প্যাকেজকে স্বাগত জানান। প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আগামীকালের বাজার দেখার আগে আমরা কোনো বিবৃতি দিব না। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি এই প্যাকেজে আশার আলো দেখছি।'
একই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'গতকাল (বুধবার) ছিল পুঁজিবাজার নিয়ে সবচেয়ে গুজবের দিন। শেয়ারবাজার নিয়ে ছিল অসংখ্য ভিত্তিহীন গুজব। দিনশেষে দেখা গেছে, সব কিছুই মিথ্যা। এ জন্য বাজার নিয়ে যেকোনো নেগেটিভ তথ্য আগে যাচাই করে নেওয়া উচিত।'
এদিকে প্যাকেজে কী আসছে, কী হচ্ছে_সারা দিন এই গুঞ্জনের মধ্যেই চট্টগ্রাম স্টক এঙ্চেঞ্জের (সিএসই) শেয়ার লেনদেন গতকাল শতকোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। গত চার মাসের মধ্যে গতকালই প্রথম সিএসই লেনদেন ১০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। একই সঙ্গে এক দিনের মধ্যে শেয়ারবাজারে উত্থান ও পতনের দুটো চিত্রই প্রত্যক্ষ করেছেন বিনিয়োগকারীরা। পুঁজিবাজার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া আশ্বাসের বহুকাঙ্ক্ষিত প্যাকেজ ঘোষণার ঠিক আগে পতন নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে তাঁদের মধ্যে।
সিএসই সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম পুঁজিবাজারে গতকাল ১১৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে, যা গত ১ আগস্টের পর সর্বোচ্চ লেনদেন। ওইদিন সিএসইতে ১২০ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। গতকাল প্রথম আধা ঘণ্টায় ৩৫০ পয়েন্টের ঊর্ধ্বগতির পর হঠাৎ সূচকের গতি পরিবর্তন করে দিনশেষে সার্বিক সূচক ৬০৬ পয়েন্টের পতন হয়েছে। তবে সবচেয়ে আশার কথা হচ্ছে, লেনদেন আগের দিনের চেয়ে প্রায় ৩৪ কোটি টাকা বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ।

No comments

Powered by Blogger.