প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা-প্রথম দিনে অনুপস্থিত পৌনে দুই লাখ

ণিত বিষয়ে পরীক্ষার মধ্য দিয়ে গতকাল বুধবার শুরু হয়েছে প্রাথমিক ও এবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষা। দেশব্যাপী একযোগে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে এ পরীক্ষা হচ্ছে। এ দুটি পরীক্ষায় অংশ নিতে নিবন্ধন করেছিল ২৬ লাখ ৩৭ হাজার ২৬৫ জন খুদে পরীক্ষার্থী। তাদের মধ্যে প্রথম দিনেই পৌনে দুই লাখ শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল।পরীক্ষা-সংক্রান্ত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানা গেছে, মোট এক লাখ ৭৫ হাজার ২৯ জন গতকালের পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল।


তাদের মধ্যে এবতেদায়িতে ৫০ হাজার ২৯৯ জন, আর বাকি সব প্রাথমিকের।
প্রথম দিনে সারা দেশে প্রাথমিকের কোনো পরীক্ষার্থী বহিষ্কৃত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে এবতেদায়ি সমাপনীতে বরিশালে তিনজন ও ঢাকায় একজন বহিষ্কৃত হয়েছে। তৃতীয়বারের মতো চলা এ পরীক্ষায় এবার গ্রেডিং পদ্ধতিতে ফল প্রকাশ করা হবে।
পঞ্চম শ্রেণী শেষে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী এবং মাদ্রাসা শিক্ষার এবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষা শুরু হয় সকাল ১১টায়। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ পরীক্ষার শুরুতেই রাজধানীর সুরিটোলা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. মো. আফসারুল আমীন ভিকারুননিসা নূন স্কুল কেন্দ্র, বনানী বিদ্যানিকেতন, মহাখালী আ. হামিদ দর্জি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র এবং প্রতিমন্ত্রী মো. মোতাহার হোসেন সূত্রাপুরের শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয় কেন্দ্রে সমাপনী পরীক্ষা পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শনকালে শিক্ষামন্ত্রী পরীক্ষার পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, সারা দেশে অভিন্ন প্রশ্ন পদ্ধতিতে একযোগে এ পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের অনেক সাহসী করে তুলবে। ভবিষ্যতে জ্ঞান অর্জনে তারা আরো বেশি আগ্রহী হবে। এ শিক্ষার্থীরা একটি পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে নিজেদের অনেক বেশি গর্বিত ও উৎসাহিত মনে করছে।
পরিদর্শনকালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন এবং প্রশ্নপত্র কেমন হয়েছে জিজ্ঞেস করেন। তিনি পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্র ভালোভাবে পড়ে ও বুঝে উত্তর লেখার জন্য পরামর্শ দেন।
ভিকারুননিসা স্কুল কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, অসুস্থ শরীরে পরীক্ষা দিতে এসেছে 'জলবসন্ত' রোগী ইস্কাটন গার্ডেন স্কুলের ছাত্রী তানজীলা পারভীন। কেন্দ্রের একটি কক্ষে একাই বসে পরীক্ষা দিচ্ছিল সে। তার ভাষায়, প্রশ্ন সহজ হয়েছে।
রাজধানীর বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্র ঘুরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখা গেছে। তবে সন্তানদের জীবনের প্রথম পাবলিক পরীক্ষা কেমন হয়, এ নিয়ে বেশ চিন্তিত দেখা গেছে অভিভাবকদের। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হন অভিভাবকরা। উত্তরার হাজি বিল্লাতুল্লাহ আদর্শ প্রাথমিক স্কুল পরীক্ষাকেন্দ্রের সামনে ছিল প্রচণ্ড ভিড়। সন্তানদের কেন্দ্রে পেঁৗছাতে অভিভাবকদের ঘাম ছুটে যায়।
রাজধানীর মহাখালী আবদুল হামিদ দর্জি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সমানে সোনিয়া আক্তার নামের এক অভিভাবক জানান, মেয়ের পরীক্ষা কেমন হয় তা নিয়ে তিনি উৎকণ্ঠায় আছেন। সন্তানের পরীক্ষা যাতে ভালো হয়, সে জন্য গতকাল রোজাও রেখেছেন তিনি।
পরীক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার রিয়া জানায়, গণিত পরীক্ষা খুব ভালো হয়েছে। পরীক্ষা শুরুর আগে ভয় লাগলেও প্রশ্নপত্র হাতে পেয়ে ভয় কেটে গেছে। আরেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আবদুুল মালেক বলেন, মেয়ের পরীক্ষা নিয়ে উৎকণ্ঠা থাকলেও সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারায় খুব ভালো লাগছে।
ভিকারুননিসা স্কুলের সামনে বসা অভিভাবক হ্যাপী বলেন, 'ফল গ্রেডিং পদ্ধতিতে দেবে, ভালো। কিন্তু এটি বছরের পরীক্ষার আগে কেন জানাবে। বছরের শুরুতে জানালে আমরা সন্তানদের সেভাবেই প্রস্তুতি নিতে বলতাম।' এ সময় আরেকজন অভিভাবক কেন্দ্র নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, 'এক স্কুলের শিক্ষার্থী আরেক স্কুলে গিয়ে পরীক্ষা দেবে। কিন্তু ভিকারুননিসা নূন স্কুলের শিক্ষার্থীরা তাদের স্কুলেই পরীক্ষা দিচ্ছে।'
জানতে চাইলে গণশিক্ষামন্ত্রী নীতিমালার কথা উল্লেখ করে বলেন, যে স্কুলে কেন্দ্র থাকবে, সে স্কুলের শিক্ষার্থীরা ওই কেন্দ্রেই পরীক্ষা দিতে পারবে। পরে মন্ত্রী কেন্দ্রগুলোর বাইরে অপেক্ষমাণ অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, 'আপনারা দুশ্চিন্তা করবেন না। আপনাদের সন্তানরা পরীক্ষাকেন্দ্রে ভালো আছে এবং আনন্দঘন পরিবেশে সাহসিকতার সঙ্গে পরীক্ষা দিচ্ছে।'

No comments

Powered by Blogger.