প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রীর হুমকি-লিবিয়ায় লোক পাঠানোর বিজ্ঞপ্তি দিলে ব্যবস্থা

যুদ্ধবিধ্বস্ত লিবিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির বিষয়ে কাউকে বিজ্ঞাপন প্রচারের অনুমতি দেয়নি সরকার। যদি কোনো সংস্থা বিজ্ঞাপন প্রচার করে, তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নতুন করে যখন লোক নেবে লিবিয়া, তখন দূতাবাসের মাধ্যমে ডিমান্ড আসবে। বাছাই করে অনুমতি দেওয়ার পর বিজ্ঞাপন দেওয়া যাবে। গতকাল বুধবার রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে আলোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের কাছে এ কথা বলেন শ্রম, কর্মসংস্থান ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) 'লিবিয়াফেরত প্রবাসীদের পুনর্বাসন ও পুনঃ অভিবাসন' শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন কর্মসংস্থান ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। এ ছাড়া সরকার, সিভিল সোসাইটি, রিক্রুটিং এজেন্সি, ব্যাংক, চেম্বার ও অন্যান্য পেশার প্রতিনিধি এবং লিবিয়াফেরত কয়েকজন সভায় উপস্থিত ছিলেন। সভাপতিত্ব করেন সংস্থার সভাপতি রাবাব ফাতিমা।
আলোচনা সভায় জানানো হয়, লিবিয়ায় যুদ্ধ চলাকালে ৩৫ হাজার ৯৭৮ জন বাংলাদেশি শ্রমিক দেশে ফিরতে বাধ্য হন। বর্তমানে ৩৩ হাজার ৬৬ জন কর্মী লিবিয়া যেতে আগ্রহী। অল্প সংখ্যায় যাচ্ছেনও, গত কয়েক সপ্তাহে ১০০ জনের মতো চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার ও অন্য পেশাজীবী লিবিয়ায় গেছেন।
মূল প্রবন্ধে রাবাব ফাতিমা বলেন, কয়েক মাসের বেতন বাকি রেখে চলে আসতে বাধ্য হন বাংলাদেশি শ্রমিকরা। লিবিয়াফেরত ব্যক্তিদের জনপ্রতি ৫০ হাজার টাকা অনুদান দিয়েছে সরকার। কিন্তু তাঁদের বেশির ভাগ ওই অনুদানের সিংহভাগ খরচ করে ফেলেছেন ঋণ শোধ করতে, রিক্রুটিং এজেন্টদের পাওনা মেটাতে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সবাইকে লিবিয়ায় ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়। তাই অন্যান্য দেশে পুনঃ অভিবাসন ও দেশে পুনর্বাসনের মাধ্যমে তাঁদের সাহায্য করা উচিত।
মন্ত্রী বলেন, 'অভিবাসন প্রক্রিয়ার আরো রিভিউ প্রয়োজন। সুষ্ঠু অভিবাসনের একটা ধারা যদি আমরা তৈরি করে দিতে পারি, তাহলে ভবিষ্যতে আগ্রহী ব্যক্তিরা এই ধারায় অভিবাসন করতে পারবেন।' তিনি বলেন, লিবিয়ার পরিস্থিতির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ দূতাবাস সেখানকার চাকরিদাতা কম্পানিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করবে এবং লিবিয়াফেরতদের চাকরি পুনরায় নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করবে। মন্ত্রী বলেন, 'আমাদের দেশে অজ্ঞতার কারণে অভিবাসন ব্যয় বেশি হয়। এতে অভিবাসন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মানুষ ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছে।'
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী বলেন, লিবিয়া পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে স্বাভাবিক হচ্ছে। এ মুহূর্তে সরকারের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লিবিয়াফেরত প্রবাসীদের পুনর্বাসন এবং পুনঃ অভিবাসন।
আলোচনা সভার বিরতিতে মন্ত্রীর হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন রাবাব ফাতিমা। পরে মন্ত্রী চা-চক্রে যোগ দেন। সে সময় সাংবাদিকরা তাঁর কাছে লিবিয়া প্রসঙ্গে জানতে চান।
লিবিয়া যাওয়ার ব্যাপারে বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সির পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া কতটুকু যৌক্তিক?_এ প্রশ্নের জবাবে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী বলেন, কোনো লোকের বিজ্ঞাপন দেওয়ার অথরিটি নেই। নতুন করে যখন লোক নেবে, তখন ডিমান্ড অ্যাম্বাসির মাধ্যমে আসবে। বাছাই করে অনুমতি দেওয়ার পর বিজ্ঞাপন দিতে পারবে। এর আগে যদি কেউ বিজ্ঞাপন দেয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আরেক প্রশ্নের জবাবে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ বলেন, লিবিয়া থেকে যাঁরা ফেরত এসেছেন, তাঁরা রেজিস্টার্ড। পুরনোদেরই আগে পুনর্বাসন করা হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রাবাব ফাতিমা বলেন, নতুন করে যাতে লিবিয়াফেরতরা কাজ পেতে পারে সে জন্য চেষ্টা করা হবে। যাঁরা পুরনো কর্মী, তাঁরা যাতে ৪০ হাজার টাকার কম খরচে লিবিয়া যেতে পারেন সে চেষ্টা করা উচিত।

No comments

Powered by Blogger.