হায় বোল্ট!

দেখে মনে হলো, বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছেন। স্টার্টিংয়ে দাঁড়ানোর আগে হালকা গা গরম করে নিচ্ছিলেন ট্র্যাকে দাঁড়িয়ে। স্বভাবসুলভভাবে দুষ্টুমি করছিলেন দুই জ্যামাইকান সতীর্থ ইয়োহান ব্লেক আর নেস্তা কাস্টারের সঙ্গে। খোস মেজাজে ছিলেন স্টার্টিং ব্লকে দাঁড়িয়েও। একে একে সবার ওপর ক্যামেরা ধরা হচ্ছিল। তাঁর ওপর ক্যামেরা ধরতেই ছেলেমানুষি সব দুষ্টুুমি। ছেলেখেলা করেই দেগুতে বিশ্ব অ্যাথলেটিকসের ১০০ মিটার জেতার কথা ছিল যাঁর, সেই বোল্ট ট্র্যাক ছাড়লেন এক বুক হতাশা নিয়ে!
কিছুদিন ধরে সময় ভালো যাচ্ছিল না। মাত্রই চোট সেরে ফিরে এসেছেন। মৌসুমে তাঁর ব্যক্তিগত সেরা ‘বোল্ট-সুলভ’ নয়। নিজেই বার বার বলছিলেন, এবার আর অতিমানবীয় কিছু সম্ভব নয়। রেকর্ড-টেকর্ডের ‘আবদার’ তিনি মেটাতে পারবেন না। তবে আত্মবিশ্বাসীও ছিলেন, বার্লিনে রেকর্ড গড়ে জেতা সোনাটা দখলে থাকবে তাঁরই। দুই মূল প্রতিদ্বন্দ্বী টাইসন গে আর আসাফা পাওয়েলের অনুপস্থিতি কাজটা আরও সহজ করে দিয়েছিল।
পরশু অনেকটা হেলাফেলা করেই বাছাইপর্ব জিতে এসেছেন। ফলে কাল বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের আয়ুর দিক দিয়ে মাত্র ১০-১১ সেকেন্ড স্থায়ী, কিন্তু আগ্রহের দিক দিয়ে অনেক বিশাল এই ইভেন্টে চোখ ছিল সবার। চোখ ছিল বোল্টের ওপর। দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত রেকর্ড একটা করেও বসতে পারেন।
দুম্ করে গুলির শব্দ। কিন্তু দৌড় শুরু করার পরপরই থেমে গেলেন বোল্ট। হতাশায় খুলে ফেললেন নিজের জার্সি, ছুড়ে ফেললেন ট্র্যাকে। কী হলো, কী হলো! সবার তখন একটাই প্রশ্ন। বোঝা গেল, কেউ একজন ফলস্ স্টার্ট করেছেন। কিন্তু ‘অপরাধী’ যে আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকা লোকটিই, অনেকেই তখনো বোঝেননি। যাঁরা বুঝে গিয়েছিলেন, তাঁরা হয়তো মনে মনে প্রার্থনা করছিলেন, বোল্টের এই হতাশা যেন হয় অন্য কারও ফলস্ স্টার্টের কারণেই। আবার নতুন করে মনোযোগ এনে নতুন প্রস্তুতি নিতে হবে বলে অন্য যে কারও ফলস্ স্টার্ট বিরক্তিকর তো বটেই।
কিন্তু দেখা গেল, আর কেউ নয়, পাঁচ নম্বর লেন ছাড়িয়ে বেরিয়ে গেলেন খোদ উসাইন বোল্ট! গতির রাজা। দুই বছর আগে এই বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপেই যিনি ৯.৫৮ সেকেন্ড টাইমিং গড়ে ভেঙে দিয়েছিলেন বেইজিং অলিম্পিকে নিজেরই ৯.৬৯ সেকেন্ডের রেকর্ড। পারফরম্যান্স দিয়ে নয়, আগামী কিছুদিন এই ফলস্ স্টার্টের কারণেই আলোচনায় থাকবেন বোল্ট, যিনি একটা সত্যি কথা মনে করিয়ে দিলেন—বোল্টও রক্তমাংসেরই মানুষ।

No comments

Powered by Blogger.