মুক্তিযুদ্ধ- মুক্তিযুদ্ধের বিজয়লক্ষ্মীর মুখোমুখি by এবিএম মূসা

দিনটি ৩ ডিসেম্বর ১৯৭১, সময় বেলা তিনটা। কলকাতার গড়ের মাঠ, সাধারণ্যে ময়দান নামে পরিচিত। এদিন সেই ময়দানে ভাষণ দেবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী। কত লক্ষ নারী-পুরুষের সমাবেশ ঘটেছিল সেদিনের সমাবেশে, তা অনুমান করা দুরূহ ছিল। ময়দানের পশ্চিম প্রান্তে বক্তব্য-মঞ্চ। পাশেই সাংবাদিকদের বসার স্থান। সেখানে দেশি-বিদেশি শতাধিক সাংবাদিকের সামনের সরু পথটি দিয়ে মঞ্চের দিকে এগিয়ে গেলেন ইন্দিরা।
সাংবাদিকদের সারিতে ছিলাম আমি, লন্ডনের সানডে টাইমস ও বিবিসির প্রতিনিধি হিসেবে। যাওয়ার পথে দু-একজনের সঙ্গে হাত মেলালেন, আমিও ছিলাম সেই সৌভাগ্যবানদের একজন।
সেদিনের চার মাস পর আবার দেখা হলো ইন্দিরাজির সঙ্গে দিল্লির সাউথ ব্লকে। নাতিদীর্ঘ ৩০ মিনিটের সাক্ষাৎকার। কীভাবে ব্যবস্থা হয়েছিল, সে সময়ে ইন্দিরা গান্ধীর কোনো দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমের সাংবাদিককে দেওয়া একমাত্র একান্ত সাক্ষাৎকারের, একটু পরে তা জানাচ্ছি। তার আগে ফিরে যাই ৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে, বাঙালির নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়লগ্নের একটি দিনে। সেদিন জনসভার মঞ্চে উঠেই ইন্দিরাজি তাঁর বক্তব্য শুরু করলেন। প্রথমেই সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিলেন, দীর্ঘ তিন মাস তিনি বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে কীভাবে জনমত সংগ্রহ অভিযানে বিভিন্ন রাষ্ট্র সফর করেছেন। বাঙালির মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সমর্থনের কারণ ব্যাখ্যা করলেন। মাত্র ১৫ মিনিট কথা বলেছেন, কে যেন তাঁর হাতে একটি কাগজ ধরিয়ে দিলেন। এক মিনিটের নীরবতা, ইন্দিরা গান্ধী কোনো কথা না বলে মঞ্চ থেকে নেমে গেলেন। হতভম্ব জনতা সভাস্থল ছেড়ে চললেন। বিস্মিত সাংবাদিকেরা দৌড়ালেন পার্শ্ববর্তী সেনাদুর্গ ফোর্ট উইলিয়ামে, যেখানে প্রতিদিন ভারতীয় বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের জেনারেল জেকব বিদেশি সাংবাদিকদের ব্রিফিং করতেন। সেদিন ব্রিফিং হলো না। তাঁর নিম্নপদস্থ একজন সামরিক কর্মকর্তা জানালেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দিল্লি রওনা হয়েছেন। জেকব বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানাতে গেছেন। সন্ধ্যায় রেডিওতে জরুরি “এহলান” শুনতে পাবেন।’ সেই এহলান দিলেন রাত নয়টায় রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি। ছোট্ট একটি বক্তব্য, ‘পাকিস্তান ভারতের বিভিন্ন শহরে বোমা ফেলেছে। ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।’ বক্তব্যের গুরুত্বপূর্ণ সারাংশ ছিল, ‘ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে, উই আর অ্যাট ওয়ার।’ সেই যুদ্ধ শেষ হলো ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্সে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের নাটকীয় মুহূর্তে।
ভারতীয়-বাংলাদেশি যৌথ বাহিনীর রণাঙ্গনে সাহসিকতার বিবরণ এখনো বিভিন্নজন বলছেন ও লিখে যাচ্ছেন। এসবের মধ্যে কেউ বিশদভাবে বলেননি বাঙালির স্বাধীনতাযুদ্ধে ইন্দিরা গান্ধীর একক অনবদ্য ভূমিকার পটভূমি এবং তাঁর নয় মাসের অবদানের কাহিনি। উত্তর পাওয়া যায়নি একাত্তরের একটি গুঞ্জরনের। কেন ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা ছিল, কেন আরও তিন মাস আগে শুরু হয়নি সর্বাত্মক যুদ্ধটি, যাকে বলা হয় ‘টোটাল ওয়ার’। বাহাত্তরের এপ্রিলে একান্ত সাক্ষাৎকারে এ প্রশ্ন করেছিলাম স্বয়ং শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীকে—প্রশ্ন করার কারণ, ২৫ মার্চের পর কয়েক মাসে প্রায় এক কোটি শরণার্থী পশ্চিম বাংলা, ত্রিপুরা, আসাম ও মেঘালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। বিশাল এক জনগোষ্ঠীর বোঝায় চরম বিপর্যস্ত ভারতের অর্থনীতি। তাই আগস্ট থেকেই সে দেশের অভ্যন্তরীণ মহল থেকে দাবি উঠছিল, ‘এখনই পূর্ব পাকিস্তানের কিয়দংশ দখল করে তাদের সেখানে পুনর্বাসন করা হোক।’ তারপর যখন ৩১ আগস্ট দিল্লিতে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ভারত সরকারের একটি মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো, তখন সবাই জানল, দুই দেশের যৌথ বাহিনী গঠিত হয়েছে। দু-এক দিন বা সপ্তাহ অথবা সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে যেকোনো সময়ে যুদ্ধ শুরু হতে যাচ্ছে।
ইতিমধ্যে প্রায় প্রতিদিন ছোটখাটো সংঘর্ষ বাধছে পূর্ব ও পশ্চিম সীমান্তে। তাহলে সর্বাত্মক যুদ্ধে বিলম্ব কেন? পরম বিজয়ের দিনের পাঁচ মাস পর এ প্রশ্নটি করেছিলাম ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে। তাঁর দেওয়া ব্যাখ্যার মাঝে নিহিত ছিল ইন্দিরা গান্ধীর কূটনৈতিক, সামরিক কৌশল ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয়। এ সত্যটি সর্বজনস্বীকৃত, ডিসেম্বরের চরম বিজয়ের পশ্চাৎপটে রয়েছে এই সীমাহীন মেধাবিনী লৌহমানবীর অসামান্য ও অপূর্ব ঐতিহাসিক অবদান। প্রতিবছর ডিসেম্বরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে হাজারো বলা ও লেখায় এ বাস্তবতাটির পূর্ণ প্রকাশ ঘটে না। তাই আজকের প্রতিবেদনে আমার বিষয়বস্তু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিজয়লক্ষ্মী ইন্দিরা গান্ধীর কাছ থেকে শোনা কিছু কাহিনি। এর একটুখানি বিবরণ বিবিসিতে প্রচারিত হয়েছিল। কিছু অংশ ছাপা হয়েছে দৈনিক মানবজমিন-এ সাম্প্রতিক ঈদসংখ্যায়। আজ দেব একটুখানি বিস্তৃততর বিবরণ, তবে সম্পূর্ণ নয়, যতটুকু মনে আছে ততটুকু।
বাহাত্তরের মার্চে সদ্যস্বাধীন দেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু গেলেন কলকাতায়। আমি তখন বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক। বিরাট ও-বি ভ্যানে করে অনেক ক্যামেরা ও যন্ত্রপাতি নিয়ে বিটিভির একটি বিরাট দলসহ সেই সফর রেকর্ড করার জন্য কলকাতায় গিয়েছিলাম। গড়ের মাঠে ভাষণ, হাইকমিশনে সংবাদ সম্মেলন ও ইডেন গার্ডেনে নাগরিক সংবর্ধনার পর রাজভবনে, রাজ্যপালের খাস কামরায় মুজিব-ইন্দিরা বৈঠক হলো। দূরে দাঁড়িয়ে রেকর্ড করার সময় তাঁদের দুজনের কিছু কথাবার্তা কানে আসছিল। সবই ছিল আন্তরাষ্ট্রীয় সমস্যা, নতুন রাষ্ট্রের পুনর্গঠনে ভারতের সহায়তা প্রদানের নিশ্চয়তা। সরকার পরিচালনায় বঙ্গবন্ধুকে কত বাধার সম্মুখীন হতে হবে, সে সম্পর্কে ইন্দিরাজির কিছু সতর্কবাণীও ছিল। কলকাতার রাজভবনের বৈঠকের পর বিদায় মুহূর্তে ইন্দিরাজি আমাদের সঙ্গেও হাত মেলালেন। সেই ক্ষণিক মুহূর্তে আমি তাঁর কাছে একটি সাক্ষাৎকার দেওয়ার আবেদন করেছিলাম। তিনি মৃদু হেসে শুধু বললেন, ‘ফের মিলেঙ্গে।’ তিন মাস পর ফের মিলেঙ্গে কথাটি সত্যি হলো, তাঁর একান্ত সাক্ষাৎকার পাওয়ার সৌভাগ্য হলো।
আমি মুজিবনগর থেকে যখন বিবিসি-লন্ডন টাইমস-এ রণক্ষেত্র থেকে সংগৃহীত সংবাদ সংগ্রহ করে পাঠাচ্ছি, তখন বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটছেন ইন্দিরা গান্ধী। বিশ্ববাসীকে জানাচ্ছেন পাকিস্তানি গণহত্যার বীভৎস বিবরণ। পাকিস্তানি কারাগারে বন্দী বঙ্গবন্ধুর জীবন রক্ষা নিশ্চিত করতে অনুরোধ করছিলেন রাষ্ট্রপ্রধানদের। স্বাধীনতা লাভের অব্যবহিতপর আমার মনে হয়েছে, এসব সফরের ও সমগ্র একাত্তর সম্পর্কে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর হয়তো অনেক কথা বলার আছে, কিন্তু কখনো বলেননি। তখন পত্রপত্রিকায় যা ছাপা হয়েছে, তার বাইরে কেউ কিছু জানতেও চাননি। তাই বাহাত্তরের এপ্রিল মাসের কোনো এক সময়ে আমি ভাবলাম, একাত্তর-সংশ্লিষ্ট ঘটনাবলি, তখনকার ভারতের ও স্বাধীন বাংলাদেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ ধারণা নিয়ে ‘তাঁর একটি এক্সক্লুসিভ ইন্টারভ্যু—একটি একান্ত সাক্ষাৎকার’ নেওয়া যায় না? বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সেই সময়কার দিল্লি প্রতিনিধি ছিলেন স্নেহভাজন আতাউস সামাদ। সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করা যায় কি না জানতে টেলিফোন করলাম আতাউস সামাদকে। তাঁর পরামর্শ অনুসারে ইন্দিরা গান্ধীর ফের মিলেঙ্গে কথাটি উল্লেখ করে একটি আবেদনপত্র পাঠালাম সরাসরি তাঁর দপ্তরে। কয়েক দিন পর ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে ইন্দিরাজির আমন্ত্রণ পেয়ে দিল্লি গেলাম।
নির্দিষ্ট দিনে দুরু দুরু বক্ষে আতাউস সামাদকে সঙ্গে নিয়ে হাজির হলাম নয়াদিল্লির সাউথ ব্লকে প্রধানমন্ত্রীর কক্ষের সামনে। তাঁর একান্ত সচিবের সঙ্গে কামরায় ঢুকতেই তিনি আন্তরিকতার সঙ্গে আমার সঙ্গে করমর্দন করলেন, সামনের বিরাট আয়তনের টেবিলের একপাশে বসালেন। প্রথমেই তিনি জানতে চাইলেন, শেখ সাহেব কেমন আছেন। তারপর নিজেই নয় মাসের বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের নানা প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলতে শুরু করলেন, শেষ পর্যায়ে নতুন দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁর চিন্তাভাবনা প্রকাশ করলেন। একাত্তরের কিছু বর্ণনা, কিছু অজানা কাহিনি শোনালেন, কিছু তথ্য, আবেগাপ্লুত বর্ণনা, মাঝেমধ্যে স্বগতোক্তি। কয়েকটি অজানা ঘটনার ব্যাখ্যা, দেশে-বিদেশে কিছু অপ্রকাশ্য তৎপরতার বিবরণ। কোনো একটি ঘটনার কথা বলে পরেই বললেন, ‘এ কিন্তু অব দ্য রেকর্ড, সব এখন লেখা যাবে না।’ বললাম, ‘তবে কখন?’ মুচকি হেসে বললেন, ‘বহু বছর পরে যখন আমি থাকব না।’
বহু বছর নয়, ৩৮ বছর পর সাক্ষাৎকারের বিবরণী যতটুকু মনে করতে পারছি, ততটুকুই লিখছি। দুর্ভাগ্যবশত সেদিনের সব কথাবার্তা টেপ করে রাখা হয়নি, স্মৃতির ভান্ডারেও সব সঞ্চিত নেই। তা ছাড়া তখন আমি ঢাকার মর্নিং নিউজ-এর সম্পাদক থাকা সত্ত্বেও নিজ পত্রিকায় সব ছাপিনি। তবুও যতটুকু যেভাবে স্মরণ করতে পারছি, তাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। প্রথমেই তাঁকে যে প্রশ্নটি করব বলে ঠিক করেছিলাম তা ছিল, ‘হোয়াই ডিসেম্বর, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের প্রকাশ্য ও সশস্ত্র সহায়তা, আবার একটি পাক-ভারত যুদ্ধ হতে যাচ্ছে, মধ্য একাত্তরে সবাই বুঝতে পেরেছিলেন, অন্তত বদ্ধমূল ধারণা ছিল। সেই পরম ও চরম পদক্ষেপটি এত দেরিতে নেওয়া হলো কেন? ভারতের সামরিক প্রস্তুতির দুর্বলতা?’ অত্যন্ত চমৎকার একটি জবাব দিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, ‘উই অয়্যার ওয়েটিং ফর উইন্টার। আমাদের কাছে খবর ছিল, পাকিস্তান একাত্তরের মার্চের আগেই যেমন পূর্ব পাকিস্তানে নিধনযজ্ঞের পরিকল্পনা করেছিল, মধ্য একাত্তরে তেমনি ভারত আক্রমণের সশস্ত্র যুদ্ধেরও প্রস্তুতি নিয়েছিল। পাকিস্তানকে সরাসরি সাহায্য করতে লাদাখ-কাশ্মীর, সিনহুয়াং এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অরুণাচল সীমান্তে, হিমালয়ের পাদদেশে চীন সৈন্য সমাবেশ করছে। আমাদের সমরবিশারদদের পরামর্শ ছিল শীত পর্যন্ত অপেক্ষা করার, যখন বরফে ঢেকে যাবে উত্তরের আর পূর্বের সীমান্ত অঞ্চল। চীনের সেনা অভিযানের আশঙ্কা থাকবে না, পাকিস্তানের সাহায্যার্থে দ্বিতীয় ফ্রন্ট খোলার সুযোগ পাবে না।’ তবে কোনো এক সময়ে যে আমেরিকা যুদ্ধজাহাজ পাঠাবে, এমনটি তিনি ভাবেননি।
তার পরের প্রসঙ্গ স্বাধীন বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বিদ্যমান ও ভবিষ্যৎ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়টি। অত্যন্ত চিন্তাশীল ও দূরদর্শী নারী একটি চমৎকার উদাহরণ দিলেন। বললেন, মাও সে-তুংয়ের লং-মার্চ অভিযানে সোভিয়েত রাশিয়া সর্বপ্রকার সহায়তা দিয়েছিল। গৃহযুদ্ধবিধ্বস্ত চীনের পুনর্গঠনে সর্বাত্মক অবদান রেখেছিল। অথচ কমিউনিস্ট চীনের সঙ্গে কয়েক বছর পরই সম্পর্ক তিক্ত হয়ে গেল, একটি সীমিত সীমান্তযুদ্ধও হয়েছিল। কেন দুই বন্ধুদেশের সম্পর্কে চিড় ধরেছিল, ভারতকে তা জানতে ও বুঝতে, সাবধানি হতে হবে। বললেন, ‘উই শুড আন্ডারস্ট্যান্ড, রিমেইন অ্যালার্ট অ্যাবাউট দ্য কজ অব দ্যাট ব্রেকডাউন অব রিলেশন্স।’ বলা বাহুল্য, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদৃষ্টি কত দূর নিবদ্ধ ছিল, তার বহুমাত্রিক প্রকাশ ঘটেছে গত পঁচাত্তর-পরবর্তী সাড়ে তিন দশকের ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের বিভিন্ন সময়ের টানাপোড়নের মধ্যে।
আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎকার নয়, বস্তুত আলাপচারিতার ফাঁকে দু-চারটি রসালো ও কৌতুককর মন্তব্যও করলেন তিনি। সংক্ষিপ্ত আকারে একাত্তরে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সংগ্রহ অভিযানের দু-চারটি অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিলেন। যুক্তরাষ্ট্র, নিক্সন, কিসিঞ্জার প্রমুখের বৈরিতা, সোভিয়েত সহায়তার প্রসঙ্গ এল। ম্লান হাসি দিয়ে বললেন, শুধু বিদেশে নয়, স্বদেশেও কী ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছিল। প্রায় এক কোটি শরণার্থীর ভরণ-পোষণের জন্য দেশবাসীর ওপর ট্যাক্স বসাতে হয়েছিল। নতুন করারোপে কোনো ভারতবাসী অসন্তোষ প্রকাশ করেনি, এ জন্য নিজ দেশবাসীর তাঁর প্রতি এই সমর্থনের কথা বলতেই আবেগাপ্লুত হলেন। ভারতের চীনপন্থীদের বিরোধিতার কথা বলার সময় প্রচ্ছন্ন উষ্মা প্রকাশ করলেন। আবার উগ্র ডানপন্থী হিন্দু মহাসভা, আরএসএসের একটি প্রচারণা উল্লেখ করার সময় হেসেই ফেললেন। বললেন, ‘ওরা বলত, উসকি বাপনে এক পাকিস্তান বানায়াথা, উসনে দো পাকিস্তান বানায়গি।’ বাংলাদেশের গত সাড়ে তিন দশকের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আর পাকিস্তানপন্থীদের উত্থান নিয়ে যখন ভাবি, পর্যালোচনা করি, তখন এ বক্তব্যটি ভিন্ন মাত্রায় মনে পড়ে যায়। বেঁচে থাকলে বুঝতেন বাংলাদেশেরই কোন মহল এ কোন পন্থায়, ‘দো পাকিস্তান’ বানাতে চায়।
সেদিন সেই অভাবনীয় অতুলনীয় মুখোমুখি সাক্ষাৎকার, বস্তুত আলপচারিতায় আমার জানার, বলার ছিল আরও অনেক কিছু। কিন্তু ইন্দিরাজির বিরাট ব্যক্তিত্ব ও মোহময়ী উপস্থিতি, ইংরেজিতে যাকে বলে ক্যারিশমা, আমাকে এমনই সম্মোহিত করে রেখেছিল, মিনিট বিশেক পর প্রশ্ন কারার সময় বারবার খেই হারিয়ে ফেলছিলাম। আবার মনে হচ্ছিল, ইন্দিরাজিকে নস্টালজিয়ায়, স্মৃতি রোমন্থনের নেশায় পেয়ে বসেছে। আমাকে বারবার বলেন, ‘আওর কুছ—আর কিছু?’ মানে আরও কিছু বলার বা জানার আছে? আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুধু তাঁর দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়তে থাকলাম। অতঃপর প্রথম দিকের সৌজন্যের পুনরাবৃত্তি, সেই সময়ের ‘ভারতভাগ্যবিধাতা’, একাত্তরে বাংলাদেশের বিজয়লক্ষ্মী আমাকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে বিদায় জানালেন।
===========================
একেই কি বলে আমলাতন্ত্র?  আত্মসমর্পণের সেই বিকেল  আমরা তাঁদের ভুলতে পারি না  সংবিধানের অনেক বক্তব্য পারস্পরিক সংঘাতমূলক  পরাশক্তির বিরুদ্ধে এক ‘ভবঘুরের’ স্পর্ধা  আবু সাঈদ চৌধুরীর ভাষণ দেওয়া হলো না  শুভ নববর্ষ ২০১১- দিনে দিনে বর্ষ হলো গত  এরশাদের বিচারে দুই দলেরই আগ্রহ কম  কিশোরদের সাদামাটা ফল  জিপিএ-৫ পেয়েছে আট হাজার ৫২ জন  এরশাদের বিচার হওয়া উচিত  ছোটদের বড় সাফল্য  প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষাঃ পাস ৯২%, প্রথম বিভাগ বেশি  বাংলাদেশের বন্ধুঃ জুলিয়ান ফ্রান্সিস  নিষ্ফল উদ্ধার অভিযানঃ দখলচক্রে ২৭ খাল  জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ বনাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র  ভ টিজিং : জরুরি ভিত্তিতে যা করণীয়  প্রতিশ্রুতির দিন  শোকের মাস, বিজয়ের মাস  চীনা প্রধানমন্ত্রীর পাক-ভারত সফর  দায়িত্বশীলদের দায়িত্বহীন মন্তব্য  নতুন প্রজন্ম ও আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা  খিলক্ষেতে আগুনঃ কয়েলের গুদামে রাতে কাজ হতো ঝুঁকিপূর্ণভাবে  ভারতে বিহার রাজ্যের নির্বাচন  স্বপ্ন সত্যি হওয়ার পথে  আমাদের আকাশ থেকে নক্ষত্র কেড়ে নিয়েছিল যারা...  মুক্তির মন্দির সোপান তলে  আবেগ ছেড়ে বুদ্ধির পথই ধরতে হবে  বছর শেষে অর্থনৈতিক সমীক্ষা পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ  দুই কোরিয়ার একত্রিকরণ কি সম্ভব  গ্যাসের ওপর বিপজ্জনক বসবাস  উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তুলতে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ  সময়ের দাবি জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি  জনসংখ্যা বনাম জনশক্তি  ব্যাংকের টাকা নয়ছয় হওয়া উচিত নয়  একটি পুরনো সম্পর্কের স্মৃতিচিত্র  পাটশিল্প ঘুরিয়ে দিতে পারে অর্থনীতির চাকা  ড. ইউনূসকে বিতর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে হবে  সুশিক্ষার পথে এখনও বাধা অনেক  ব্যক্তির স্বাধীনতা হরণ ও মর্যাদাহানির পরিণাম কখনই শুভ হয় না

দৈনিক প্রথম আলো এর সৌজন্যে
লেখকঃ এবিএম মূসা
সাংবাদিক ও কলাম লেখক।


এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.