উঠতি বয়সের সংকট : অভিভাবকের দায়িত্ব by মাহবুবা আহসান

বুজ সমাজে ইভটিজিং এক হলুদ ব্যাধি। ২০১০ সালের শুরুতে তা ভয়াবহ আলোড়ন সৃষ্টি করে। চলে বছর ভরে। সমাজে দীর্ঘদিন ধরেই এই সমস্যা বিরাজ করছে। এ নিয়ে অনেক আলোচনা, পর্যালোচনা, সেমিনার ও লেখালেখি হয়েছে। আমাদের দেশে সব শ্রেণীর পেশার নারী প্রতিনিয়ত এই ইভটিজিং নামক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তাই প্রত্যাশা- ধুয়ে যাক মুছে যাক সকল কালো।
২০১১ সাল হোক ইভটিজিংমুক্ত। হোক কলুষিতমুক্ত। শান্তিময় হোক নারীর পথচলা। ২০১০ সালের শুরুতেই সামাজিক অপরাধ হিসাবে ইভটিজিং দেশ জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। ২০০১ সালে ইভজিটিং-এর প্রতিবাদে আত্মহত্যা করে চারুকলার ছাত্রী সিমি। এরপর এই আত্মহত্যার মিছিলে যোগ দেন একের পর এক নারী। ২০১০ সালে ইভটিজিং-এর প্রতিবাদে স্কুল ছাত্রী ইলোরা, দিনাজপুরের শাবনূর, ঢাকার পিংকী আত্মহত্যার পথ বেছে নিলে জাতি নড়ে চড়ে উঠে। একই বছর ইভটিজিং-এর প্রতিবাদ জানিয়ে হামলার কবলে পড়ে জীবন দেন নাটোর-এর কলেজ শিক্ষক মিজানুর রহমান। ফরিদপুরে খুন হন এক 'মা' চাঁপা রানী ভৌমিক। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ইভটিজিং-এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে ২৮ জন নারী আত্মহননের পথ বেছে নেন। এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে ১৮ জন জীবন দান করেন। কেন এ অবস্থা? এর কি কোন প্রতিকার নেই? শুধু সরকারকে দোষ দিলেই চলবে না। সমাজের প্রত্যেকটি নাগরিকেরই কিছু না কিছু করণীয় আছে। আছে দায়িত্ব। সামগ্রিকভাবেই এর প্রতিকার করতে হবে। যার সুফল সকলেই ভোগ করতে পারবে।
দেখা যায়, মেয়েটি তার ছেলে বন্ধুর সাথে গাছের আড়ালে বসে আধো আলো-অন্ধকারে সিগারেট টানছে অথবা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে। উঠতি বয়সের যন্ত্রণা কিন্তু ভয়ানক। তাকে সামাল দেয়া অতি কষ্টকর। কেননা মন থাকে তখন উড়- উড়-। বিহঙ্গের মতন। এ লাগামহীন মনকে টেনে ধরতে হবে সমাজের সকলকে। তা না হলে ঘটে যাবে নানা দুর্ঘটনা।
অভিভাবক হিসাবে সন্তান কোথায় গেল, কি করছে, কি খাচ্ছে, তার আচার-আচরণ গতিবিধি সব লক্ষ্য রাখলে আপনার আমার সন্তানটি কতটুকু খারাপ হতে পারে? সমাজের প্রত্যেকেরই হতে হবে এই টিন-এইজদের অভিভাবক। মেয়েটি কি ড্রেস পরলো, চোখ রাখতে হবে। আবরু রক্ষার্থে ড্রেস হতে হবে শালীন। উঠতি বয়সের শারীরিক গঠন যা যুবক মনকে করে আকৃষ্ট। সেক্ষেত্রে শালীনতা বজায় রেখে ড্রেস পরলে সমাজে ইভটিজিং-এর প্রবণতা অনেকটা কমে আসবে। সন্ধ্যার পর উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েদের রাস্তা-ঘাটে, এখানে-সেখানে গল্প-গুজব এসব বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনে সমাজের প্রত্যেকটি নাগরিককে সচেষ্ট ভূমিকা পালন করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে বাবা-মা উভয়ই চাকরিজীবী, সেক্ষেত্রে কর্মক্ষেত্রের নানা ব্যস্ততায় সংসারের অনেক কিছু পুরোপুরি লক্ষ্য রাখা সম্ভব হয়ে উঠে না। তারপরও বাবা-মায়ের সংসারের ছেলেমেয়ের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেয়া জরুরী।
২০১০ সালের শুরুতেই এই ইভটিজিং শব্দটি বহুল ব্যবহূত হয়ে আসছে। একে ইভটিজিং না বলে উত্ত্যক্তকারী অথবা বখাটে তৎপরতা অথবা সন্ত্রাসী কার্যক্রম ইত্যাদি নামে আখ্যায়িত করলে হয়তোবা এর সঠিক নামকরণ করা হত। এতে মানুষের মনে ঘৃণার উদ্রেক হত।
মনে প্রশ্ন জাগে, যারা এই ইভটিজিং-এ অংশ নেয় তারাতো আপনার আমার এই দেশেরই সন্তান। তারাতো খারাপ হয়ে জন্ম মেয়নি। তবে কেন তারা উত্ত্যক্তকারী নামে পরিচিত? তাদের সঠিকভাবে সঠিকপথে আনয়নের চেষ্টা করা পরিবার হতে শুরু করে সমাজের প্রত্যেকেরই দায়িত্ব রয়েছে। সন্তানটি সকালে ঠিকমত স্কুল-কলেজে যাচ্ছে কি না, ঠিকমত পড়াশুনা করছে কি না, ধমর্ীয় কাজ সঠিকভাবে পালন করছে কি না, মাথায় লম্বা চুল রেখে পাং সেজে রাস্তায় বিড়ি/সিগারেট ফুঁকছে কি না, যতটুকু সম্ভব নজর রাখলে হয়তোবা ছেলে সন্তানটি ইভটিজিং-এর মত কার্যক্রম হতে কিছুটা হলেও বিরত থাকবে। আবার মেয়ে সন্তানটি শালীন পোশাক পরছে কি না, শালীন কথাবার্তা বলছে কি না- এসব বিষয়ে পিতামাতা, শিক্ষক, সুশীল সমাজ অগ্রণী ভূমিকা পালন করলে এই ইভটিজিং-এর প্রবণতা দিন দিন কমে আসবে। পরিবেশ, নানা পরিস্থিতি এই ইভটিজিং-এর জন্য দায়ী। এসএমএস, আকাশ সংস্কৃতি, ই-মেইল, মোবাইল ফোনে ফটো তোলা, মোবাইল ফোনের অপব্যবহার এই ইভটিজিং-এর অন্যতম কারণ। তাই বলে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বন্ধ করা যাবে না। এসবের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন ও জনমত গড়ে তুলতে হবে। আমাদের সামাজে অর্ধেক অংশই নারী। জাতীয় উন্নয়ন মিছিলে নারীরা আজ সগৌরবে অগ্রসরমান। সরকার আইন সংশোধন করে নারীর অগ্রযাত্রাকে করেছে নিরাপদ। তাই নারীকে আসতে হবে আলোর দিশারী হিসাবে।
সমাজের ইভটিজিংসহ সকল অপরাধ দূর হোক। সোনার বাংলা হিসাবে বাংলাদেশ হোক বিশ্ব দরবারে উজ্জল নক্ষত্র- এই আমাদের প্রত্যাশা।
================================
বিকল্প ভাবনা বিকল্প সংস্কৃতি  অন্ধত্ব ও আরোগ্য পরম্পরা  খুলে যাক সম্ভাবনার দুয়ার  কক্সবাজার সাফারি পার্কঃ প্রাণীর প্রাচুর্য আছে, নেই অর্থ, দক্ষতা  জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের গুপ্ত জীবন  ছাব্বিশটি মৃতদেহ ও একটি গ্রেপ্তার  ৩৯ বছর পরও আমরা স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি  সাইবারযুদ্ধের দামামা  সরলতার খোঁজে  সেই আমি এই আমি  আমেরিকান অর্থনীতি ডলারের চ্যালেঞ্জ  বাংলাদেশ-ভারত যৌথ ইশতেহার- আশানুরূপ সুফল নেই এক বছরেও  ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ও রাজনীতি  মাস্টারদা সূর্যসেন ও যুব বিদ্রোহ সাতাত্তর  রসভা নির্বাচন ২০১১: একটি পর্যালোচনা  ড. ইউনূস অর্থ আত্মসাৎ করেননি  প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ৩৯ বছর  স্বাধীনতাযুদ্ধের 'বিস্মৃত' কূটনৈতিক মুক্তিযোদ্ধারা  আতঙ্কে শেয়ারবাজার বন্ধঃ বিক্ষোভ  আতঙ্কের রাজত্ব কায়েম হয়েছে  মানবকল্যাণ আমাদের মন্ত্র  ট্রানজিট নিয়ে সবে গবেষণা শুরু  ভারতের একতরফা সেচ প্রকল্পঃ বাংলাদেশের আপত্তিতে বিশ্বব্যাংকের সাড়া  আমলাদের যাচ্ছেতাই বিদেশ সফর  সরকারের ব্যর্থতায় হতাশাঃ বিরোধী দলের ব্যর্থতায় বিকল্পের অনুপস্থিতি  ক্ষমতা ও গণতন্ত্র  পানি সংকট পানি বাণিজ্য  ২০১০ সালের অর্থনীতি কেমন গেল  গণতান্ত্রিক বিকাশের পথে বাধা অনেক  কপাটে তালা দিয়ে কেন এই মৃতু্যর আয়োজন  বিজয়ের অর্থনীতি ও সম্ভাবনা  মুক্তিযুদ্ধের বিজয়লক্ষ্মীর মুখোমুখি  একেই কি বলে আমলাতন্ত্র?  আত্মসমর্পণের সেই বিকেল  আমরা তাঁদের ভুলতে পারি না  সংবিধানের অনেক বক্তব্য পারস্পরিক সংঘাতমূলক  পরাশক্তির বিরুদ্ধে এক ‘ভবঘুরের’ স্পর্ধা  আবু সাঈদ চৌধুরীর ভাষণ দেওয়া হলো না  শুভ নববর্ষ ২০১১- দিনে দিনে বর্ষ হলো গত  এরশাদের বিচারে দুই দলেরই আগ্রহ কম


দৈনিক ইত্তেফাক এর সৌজন্যে
লেখকঃ মাহবুবা আহসান
নিবন্ধকার


এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.