বিশ্বকাপে সাকিব-তামিম জুটি

মাশরাফি বিন মুর্তজার চোট একটা শঙ্কা যেমন বয়ে এনেছিল, তেমনই নিভিয়ে দিয়েছিল বিশ্বকাপ অধিনায়ক নিয়ে আগ্রহের শিখাটাও। চোটে যাঁর বিশ্বকাপই অনিশ্চিত, তিনি তো আর অধিনায়কের দৌড়ে থাকতে পারেন না! সাকিব আল হাসানের অধিনায়ক হওয়াটা তাই একপ্রকার নিশ্চিতই ছিল, বাকি ছিল কেবল আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। সেই ঘোষণা এসেছে কাল, চতুর্থ বিশ্বকাপ অভিযানে সাকিবের কাঁধেই থাকছে বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব। ডেপুটি হিসেবে সাকিব পাচ্ছেন নতুন একজনকে—তামিম ইকবাল।
তামিমের সহ-অধিনায়ক হওয়াকেও ঠিক চমক বলা যাবে না, কিছুদিন ধরে বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছিল তাঁর নাম। অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়ক ঘোষণায় চমক তাই একটিই, শুধু বিশ্বকাপ নয় দুজনকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পুরো বছরের জন্য!
অধিনায়ক, সহ-অধিনায়কদের দীর্ঘ সময়ের জন্যই দায়িত্ব পাওয়া উচিত। তবে এই সাধারণ ঘটনাটা বাংলাদেশে বিরল বলেই এত বিস্ময়। সাকিবই যেমন দেড় বছর ধরেই দায়িত্ব পাচ্ছিলেন শুধু প্রতি সিরিজের জন্য। এ নিয়ে তাঁর অসন্তুষ্টি কখনো কখনো প্রকাশ্যেও চলে এসেছে। মাশরাফির চোটে বিকল্পহীন হয়ে পড়া বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) কি তবে বাধ্য হয়েই পিছু হটল? বিসিবির মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুসের কথা অন্য রকম, ‘সাকিব বেশ কিছুদিন ধরেই নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমাদের মনে হয়েছে, ও এখন অনেক পরিণত এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য অধিনায়ক হতে প্রস্তুত। সাকিবের সঙ্গে আলোচনা করেই বোর্ড এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ জানা গেছে, গত বোর্ড সভার পর বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়ক ঠিক করার। তিনি সাকিব-তামিমের সঙ্গে আলোচনা করার পরই দুজনকে দায়িত্ব দেওয়া হলো।
বিশ্বকাপে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার স্বপ্ন প্রায় সবারই থাকে। এর সঙ্গে আবার পূরণ হয়েছে দীর্ঘ সময়ের জন্য অধিনায়ক হওয়ার প্রত্যাশা। সাকিব তাই উচ্ছ্বসিতই, তবে চরিত্র অনুযায়ী পরিমিতিবোধ থাকল তাঁর প্রতিক্রিয়ায়ও, ‘দীর্ঘ সময়ের জন্য অধিনায়ক হওয়ায় আশা করি এখন আরও ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারব।’
তামিম সহ-অধিনায়ক হয়ে গেলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের তিন বছরেরও কম সময়ে। সহ-অধিনায়ক হওয়ার বোর্ডের প্রস্তাবটা তাই বিস্ময় হয়েই এসেছিল তামিমের জন্য। দায়িত্ব পেয়ে রোমাঞ্চিত তামিম; তবে জানালেন, এই দায়িত্ব ক্রিকেটার হিসেবে তাঁকে আরও সমৃদ্ধই করবে, ‘বোর্ডকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, আমার ওপর আস্থা রাখার জন্য। ব্যাটিংয়ে আমি সব সময়ই দায়িত্ব নিয়ে খেলার চেষ্টা করি। আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব পাওয়ায় এখন আরও বেশি দায়িত্ব নেওয়ার চেষ্টা করব। আশা করি, এই দায়িত্ব আমাকে আরও ভালো খেলতে সাহায্য করবে।’
তবে সহ-অধিনায়কের দৌড়ে ছিলেন দীর্ঘদিন এই দায়িত্ব পালন করা মুশফিকুর রহিম, সর্বশেষ সিরিজের সহ-অধিনায়ক আবদুর রাজ্জাক, মাহমুদউল্লাহও। তামিমকে বেছে নেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করলেন জালাল ইউনুস, ‘তামিমের মাঝে ভবিষ্যৎ অধিনায়কের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেয়েছি আমরা। ওকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে গড়ে তোলার জন্যই।’
অধিনায়কের গুণাবলি দেখতে পেয়েই ভবিষ্যতের জন্য গড়ে তোলা হচ্ছিল মুশফিকুরকেও। তবে গত ইংল্যান্ড সফরে এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যানের কিছু আচরণে ঠিক সন্তুষ্ট ছিলেন না ম্যানেজার তানজীব আহসান সাদ। সফর শেষে ম্যানেজারের প্রতিবেদনে সেটি উল্লেখও করেছিলেন। ওই ব্যাপারটাই বিপক্ষে যেতে পারে মুশফিকুরের।
অধিনায়ক হিসেবে সামর্থ্য ইতিমধ্যেই প্রমাণ করেছেন সাকিব, তামিম তাঁকে কতটা সাহায্য করতে পারবেন, এটা বলবে সময়। তবে এই দুজনের জুটিটা জমে ওঠারই কথা। দুজনই দলের সেরা পারফর্মার ও বাংলাদেশের ক্রিকেটে নতুন দিনের প্রতীক, এটা একটা কারণ। এর চেয়েও বড় কারণ, মাঠের বাইরে দুজনের সম্পর্ক। দুজনই খুব কাছের বন্ধু এবং একে অপরকে খুব ভালো বোঝেন। এই বোঝাপড়া, সম্পর্কের রসায়নেই হয়তো লুকিয়ে আছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের উজ্জ্বল আগামী।

No comments

Powered by Blogger.