আয়কর ও মূসক আইনের খসড়া প্রকাশ

আয়কর ও মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আইনের দুটি পৃথক খসড়া প্রকাশ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ইতিমধ্যে খসড়াটি এনবিআরের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে এবং এর ওপর মতামত আহ্বান করা হয়েছে।
আয়কর আইনের খসড়ায় নতুন করে সম্পদ কর, ভ্রমণ কর ও দান কর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ভুয়া কর শনাক্তকরণ নম্বরধারীদের (টিআইএন) দণ্ড আরোপের বিধান রাখা হয়েছে।
অন্যদিকে মূসক আইনে ছোট ব্যবসায়ীদের মূসকের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মূসক নিবন্ধন না নিলে জেলজরিমানার বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে।
আগামী অর্থবছর (২০১১-১২) থেকে মূসক বা ভ্যাট আইন কার্যকর করা হবে। তবে আয়কর আইনটি কার্যকর হবে ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে। এর আগে আগামী মাস থেকে এই দুটি আইনের খসড়ার ওপর ব্যবসায়ী, ব্যক্তিশ্রেণীর করদাতাসহ সংশ্লিষ্ট সব খাতের সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করবে এনবিআর।
আয়কর আইন: আয়কর আইনের খসড়ায় ২২টি অনুচ্ছেদ ও ২৪৬টি ধারা রয়েছে। অনুচ্ছেদগুলোতে আয়ের খাত, ক্ষতির খাত, আয়কর প্রশাসন, অগ্রিম আয়কর, সম্পদ কর, ভ্রমণ কর, দণ্ড, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বিধি, দ্বৈতকর পরিহারসহ বিভিন্ন আলোকপাত করা হয়েছে।
সম্পদ কর, ভ্রমণ কর ও দান করকে আয়কর আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এতদিন ভ্রমণ কর অর্থবিলের সঙ্গে প্রতিবছর অন্তর্ভুক্ত করা হতো।
পুনরায় সম্পদ কর চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে। খসড়া অনুযায়ী, নিজে বসবাস ব্যতীত বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট, পৌর এলাকার ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত খামার, পৌর এলাকার জমি, গাড়ি, হেলিকপ্টার ও এয়ারক্রাফট, দামি অলংকার, নৃতাত্ত্বিক নিদর্শন, চিত্র, ভাস্কর্য ও দেশের বাইরে কোনো ব্যাংকে অর্থ গচ্ছিত থাকলে সম্পদ কর দিতে হবে। এমনকি ৫০ হাজার টাকার বেশি দামি ঘড়ি ব্যবহার করলেও কর দিতে হবে। এ ছাড়া দুই হাজার টাকার বেশি নগদ অর্থ থাকলেও করের আওতায় আসবেন করদাতারা।
তবে কোনো করদাতা যদি কোনো বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্টে বছরের ৩০০ দিনের বেশি বসবাস না করেন, তাহলে তাঁকে ওই বাড়ির ওপর সম্পদ কর থেকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে খসড়ায়। বাণিজিক উদ্দেশ্যে নির্মিত ভবনও সম্পদ কর থেকে অব্যাহতি পাবে।
উল্লেখ্য, পাকিস্তান আমলে সম্পদ কর চালু করা হয়। নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে সম্পদ কর প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
আয়কর আইনের খসড়ায় যেকোনো ধরনের দানের ওপর করারোপের বিধান রাখা হয়েছে। শুধু রাষ্ট্র ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক দান করের আওতামুক্ত থাকবে। এ ছাড়া বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দান, ধর্মীয় উপাসনালয়ে দান, হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দান করের আওতায় থাকবে না।
তবে স্বামী-স্ত্রী, পুত্র-কন্যা, মা-বাবা, ভাই-বোন ছাড়া অন্য যেকোনো আত্মীয়স্বজনকে দান করলে তা করের আওতায় পড়বে।
সংশ্লিষ্ট কর কর্মকর্তারা জানান, অতীতে দানের নামে বহু কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। তাই এবার আয়কর আইনে দানকে করের আওতায় আনা হয়েছে। তবে কয়েক প্রকার দান প্রকৃত অর্থেই দান হিসেবে গণ্য করার সুযোগ্য রাখা হয়েছে।
খসড়ায় ভুয়া টিআইএনধারীকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া কোনো করদাতার কাছে টিআইএন চাওয়া হলে তা প্রদর্শনে ব্যর্থ হলে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করার বিধান রাখা হয়েছে। নির্ধারিত সময় আয়কর প্রদানে ব্যর্থ হলে করদাতাকে পাঁচ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে।
এদিকে কোনো করদাতা যদি কোনো কোম্পানির শেয়ার টানা ৩৬৫ দিন (এক বছর) ধরে রাখেন, তবে সেই শেয়ার মূলধনী সম্পদ হিসেবে গণ্য হবে। সেই ক্ষেত্রে বিধি অনুযায়ী করারোপ হবে।
মূসক আইন : ২১টি অনুচ্ছেদে ১৯৩টি শাখা রয়েছে প্রস্তাবিত মূসক আইনে। এসব অনুচ্ছেদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া, মূসক আরোপ, আমদানি পর্যায়ে মূসক, সরবরাহ পর্যায়ে মূসক, মূসক নির্ধারণ কৌশল, সম্পূরক শুল্ক, টার্নওভার ট্যাক্সসহ বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
এ ছাড়া মূসক আইনের খসড়া অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি মূসক আরোপ যোগ্য হওয়ার পরও মূসক নিবন্ধন না নিলে জেল-জরিমানা আরোপের বিধান রাখা হয়েছে। সর্বনিম্ন এক লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা আরোপ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে আইনে। এমনকি পাঁচ বছরের জেল দণ্ডের বিধানও রাখা হয়েছে।
এ ছাড়া মূসক কর্মকর্তারা কোনো ব্যবসায়ীর কাছে গিয়ে মূসক নিবন্ধন দেখতে চাইতে পারেন। ওই ব্যবসায়ী যদি মূসক নিবন্ধন সনদপত্র দেখাতে না পারেন, তবে ৫০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকা জরিমানা করার ক্ষমতা আইনে দেওয়া হয়েছে। এমনকি ছয় মাস পর্যন্ত জেল দেওয়ার বিধানও রাখা হয়েছে।
মূসক বিবরণী জমা না দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ২৫ হাজার টাকা জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছে খসড়ায়। এমনকি সর্বোচ্চ এক বছর জেল দণ্ডের বিধানও রাখা হয়েছে।
এই এনবিআরের সদস্য (মূসক) আবদুল মান্নান পাটোয়ারী প্রথম আলোকে বলেন, ‘খসড়ায় নির্দিষ্ট পরিমাণ (ফ্ল্যাট রেট) মূসক আরোপের প্রবণতা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যমান আইনের চেয়ে প্রস্তাবিত আইনে ‘মূসক ছাড়’ অনেক কম।’
তিনি আরও জানান, আধুনিক ও সময়োপযোগী একটি আইন করা হয়েছে। আইনটির খসড়া তৈরির সময় বর্তমান আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.