খবর- ট্রানজিটে ১১ খাতের লাভ-ক্ষতির হিসাব শুরু by ফারুক মেহেদী

ট্রানজিটের লাভ-লোকসান ও অবকাঠামো নির্মাণসহ নানান বিষয়ে হিসাব-নিকাশ শুরু করেছে সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে শুরু হয়েছে ট্রানজিট নিয়ে এ হিসাব-নিকাশ। আর এসব হিসাবের বহুমুখী ইতিবাচক-নেতিবাচক দিক তুলে ধরতে অন্তত এক ডজন গবেষণাপত্র তৈরি করা হচ্ছে। এ কাজে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ট্যারিফ কমিশন, বাণিজ্য, অর্থ, স্বরাষ্ট্র, যোগাযোগ, পররাষ্ট্র, পরিবেশ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়সহ সরকারি-বেসরকারি বেশ কিছু সংস্থাকে।
গঠন করা হয়েছে ১৬ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি। আগামী ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে এ কমিটি নিজ নিজ গবেষণাপত্র বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এ বিষয়ে ট্রানজিটের লাভ-ক্ষতি পর্যালোচনা কমিটির আহ্বায়ক ও ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান গতকাল কালের কণ্ঠকে কমিটি ও কার্যক্রম শুরুর তথ্য জানিয়ে বলেন, 'আমরা কাজ শুরু করেছি। ইতিমধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমরা চিহ্নিত করেছি। আগামী ১৩ ডিসেম্বর সোমবার প্রথম বৈঠকে বসছি। আশা করি ওই বৈঠকে ট্রানজিটের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য বিষয় নিয়ে বড় পরিসরে আলোচনা করে পরবর্তী কার্যক্রম চূড়ান্ত করতে পারব। আর এ মাসের শেষ সপ্তাহে বা আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহেই ট্রানজিটে বাংলাদেশের লাভ-ক্ষতি বিষয়ে সার্বিক মূল্যায়ন করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে।'
বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত বিষয় ট্রানজিটের লাভ-লোকসান নিয়ে সরকারের ভেতর-বাইরে ব্যাপক আলোচনার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিষয়টি সম্পর্কে ব্যাপক পর্যালোচনা করতে চাচ্ছে সরকার। ট্রানজিট শুধু ভারতের সঙ্গে নয়; এ কার্যক্রম চালু হলে তা আশপাশের সব দেশের সঙ্গেও শুরু করার ক্ষেত্র তৈরি হবে। এর রয়েছে সুদূরপ্রসারী আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীও বিভিন্ন ফোরামে এর প্রভাব নিয়ে কথা বলছেন। তাই এত বড় একটি কার্যক্রম চালুর আগে সম্ভাব্য দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল কী হতে পারে, তা জানার চেষ্টা করছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় এ বিশাল গবেষণা কার্যক্রম। গত ৭ ডিসেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শাহাবুদ্দিন পাটোয়ারী স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে ট্রানজিটের লাভ-লোকসান ও অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে সরকারের অবস্থান তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের আহ্বানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এ লক্ষ্যে ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে গঠিত কমিটিকে ট্রানজিটের সঙ্গে সম্পৃক্ত যেসব বিষয়ে তথ্যানুসন্ধান করে সরকারের কাছে উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে তা হলো_ট্রানজিটের জন্য সড়ক ও রেলপথ নির্ধারণ, প্রস্তাবিত ট্রানজিট বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের করণীয় কাজ নির্ধারণ, ট্রানজিটের সুবিধা বাস্তবায়নের জন্য ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে সম্ভাব্য বিনিয়োগের পরিমাণ নির্ধারণ, ওই বিনিয়োগে সুবিধাভোগী দেশগুলোর অংশীদারের সম্ভাব্যতা, ট্রানজিট রুটের মেরামত ও সংরক্ষণের জন্য বাজেট প্রাক্কলন, অন্যান্য দেশে ট্রানজিট সুবিধার কারণে বিদ্যমান চার্জ অথবা ফি আদায় পদ্ধতি পর্যালোচনা, ট্রানজিট সুবিধাপ্রাপ্তির ফলে ভারতসহ সুবিধাভোগী দেশগুলোর পরিবহন ব্যয় বাবদ সাশ্রয়ের পরিমাণ এবং ওই সাশ্রয়ে বাংলাদেশের প্রাপ্য অংশ, ট্রানজিট ট্রাফিকের ফলে বাংলাদেশের পরিবেশের সম্ভাব্য ক্ষতি এবং ওই ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ আদায়ের সম্ভাব্যতা, ট্রানজিট ট্রাফিকে উত্তর-পূর্ব ভারতের বৃহত্তম রাজ্য আসামের সম্পৃক্ততা, ট্রানজিটের লাভ-লোকসান বিশ্লেষণ ও ট্রানজিট সুবিধার বিনিময়ে ভারত ও অন্যান্য সুবিধাভোগী দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের অনিষ্পন্ন সমস্যাগুলোর দরকষাকষির সম্ভাব্যতা যাচাই।
সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, ট্রানজিট নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো বিশদ তথ্যানুসন্ধান বা গবেষণা হয়নি। এমনকি ট্রানজিট থেকে সরকারের কী পরিমাণ লাভ-ক্ষতি হবে, তারও কোনো পর্যালোচনা করা হয়নি। এমন অবস্থায়ই চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে রাজস্ব বোর্ডের পক্ষ থেকে ট্রানজিট বিধিমালা জারি করা হয়। পরবর্তী সময়ে ট্রানজিট ফি জারি করা নিয়ে ভারতের আপত্তির মুখে সম্প্রতি তা স্থগিতও করা হয়। ফি নিয়ে দেখা দেয় চরম বিতর্ক। সরকারের ভেতরের কেউ কেউ ফি আদায়ের পক্ষে হলেও কোনো মহল আবার তার বিরোধিতাও করেন। বিরোধী দল বিষয়টিতে আপত্তি জানিয়ে আসছে তখন থেকেই। পরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ট্রানজিটে ফি আরোপ করা-না করা নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে বিশদ পরিসরে আলোচনা ও গবেষণার তাগিদ দেন। এ বিষয়ে একটি সেমিনার আয়োজনের উদ্যোগও নেওয়া হয় রাজস্ব বোর্ডের পক্ষ থেকে। পরে তা স্থগিত করা হয়। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা ও বিতর্ক যখন অব্যাহত রয়েছে তখনই এর লাভ-ক্ষতির বিশদ হিসাব-নিকাশ নিয়ে তৎপর হয়েছে সরকার। এ কাজে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সমন্বয় করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এর আগে দাতা সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বা এডিবির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এক গবেষণায় বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ট্রানজিট চালু হলে বছরে সরকার অন্তত এক হাজার ৮০০ কোটি টাকার রাজস্ব পাবে বলে তুলে ধরা হয়েছে। ভারত, নেপাল ও ভুটানের পণ্যবাহী কনটেইনার বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে পরিবহনের কারণে এ টাকা রাজস্ব হিসেবে সরকার পাবে বলে গবেষণাপত্রে অভিমত দেওয়া হয়। প্রয়োজনীয় সব অবকাঠামো নির্মাণ করার পর ট্রানজিট কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চললে পরবর্তী ১৫ বছরে রাজস্ব দাঁড়াবে অন্তত সাত হাজার কোটি টাকায়।
এডিবির বাইরে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা বিআইডিএসও ট্রানজিট থেকে লাভ-লোকসানের ওপর একটি স্টাডি করেছে। ওই স্টাডিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ হয়ে সর্বোচ্চ চার মিলিয়ন টন পণ্য ভারতে যাবে, এর মধ্যে আগরতলায় তিন মিলিয়ন টন আর শিলচরে এক মিলিয়ন টন। আর সরকার ঘোষিত ফি অনুযায়ী রাজস্ব দাঁড়ায় ৫৭ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৪০০ কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভারত সফরকালে সে দেশের সরকারের সঙ্গে ট্রানজিট নিয়ে চুক্তি করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর এর অগ্রগতি নিয়ে বেশ তোড়জোড় হলেও বাস্তব কাজ এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এরই মধ্যে গত আগস্টে ট্রানজিট কার্যক্রমে গতি আনতে ভারতের প্রতিশ্রুত ১০০ কোটি ডলার আর্থিক সহায়তার চুক্তি করতে বাংলাদেশ সফর করেন দেশটির অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি। ওই ঋণের টাকায় বন্দর উন্নয়ন, রেল ও সড়কপথের আধুনিকায়ন ইত্যাদি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রণব মুখার্জির সফরের পরও পেরিয়ে গেছে চার মাস। অথচ ট্রানজিটের অগ্রগতি দৃশ্যমান নয়।
========================
চট্টগ্রামের বনাঞ্চল ছাড়ছে হাতি  ট্রেন  স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে জাতীয় শিক্ষানীতি  মানবাধিকার লঙ্ঘন ও যুদ্ধাপরাধের বিচার  মানবাধিকার লঙ্ঘন দেশে দেশে  ক্ষমতা যেভাবে মানবাধিকার আর ন্যায়বিচারের পথ রুদ্ধ করে  চাক্কু মারা 'মশা' কাহিনী  উল্কির ভেলকি  এইচআইভি/এইডস্  উইকিলিকসঃ জুলিয়ান চে গুয়েভারা!  তিন কালের সাক্ষী  বাবর আলীর ইশকুল  এ মাটির মায়ায়  মধ্যবিত্তের উত্থান, না ভোক্তাশ্রেণীর উদ্ভব  হিমালয়ের পায়ের কাছেঃ গোধূলির ছায়াপথে  পতিত স্বৈরাচারের আস্ফালন ও আওয়ামী লীগের নীরবতা  ৪০ বছর পড়ে থাকা লাশটার সৎকার করতে চাই  এই কি আমাদের মানবাধিকার?  ঐতিহ্যের মধ্যে সমকাল  কেমন দেখতে চাইঃ ঢাকা আন্তর্জাতিক বইমেলা  দ্রীপ প্রতিভার দ্যুতিময় স্মারক  গল্প- বৃষ্টি  শহীদুল্লা কায়সারঃ রাজনৈতিক সৃষ্টিশীলতা  আনোয়ার পাশাঃ জাতিরাষ্ট্রের অংশ ও প্রেরণা  মুনীর চৌধুরীঃ তাঁর নাটক  জেগে ওঠার গল্প  এখন শুনবেন বিশ্ব-সংবাদ  বাঘ  বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ২০১০  তাঁরা সমালোচিত, আমরা বিব্রত  মুজিবকে নিয়ে সিরাজের একমাত্র লেখা  ঢাকা সিটি করপোরেশন বিভক্তির উদ্যোগ  মহাস্থানগড়ের ধ্বংস-পরিস্থিতিঃ পর্যবেক্ষণ  ওয়ান-ইলেভেনের চেয়ে ভয়াবহ দুর্যোগ আসছে!  ডিসেম্বরঃ গৌরব ও গর্বের মাস  উইকিলিকস বনাম যুক্তরাষ্ট্র  দুর্নীতি বেড়েছে দুনিয়াজুড়ে  উইকিলিকসঃ বাঘের ঘরে ঘোগ


দৈনিক কালের কন্ঠ এর সৌজন্যে
লেখকঃ ফারুক মেহেদী


এই খবর'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.