কবিতা- 'আমার গ্রীষ্মকাল' by কাজল শাহনেওয়াজ

আমাকে আবার লাইনে দাঁড় করালে

আবার আমাকে হাজির করেছো তোমার সামনে
এক লাইনে দাঁড় করালাম অনেকগুলি আমাকে
অনেক দূর চলে গেছে সেই লম্বা লাইন

তাকিয়ে দেখি কারো বয়স বারো, হাফ প্যান্ট ছেড়ে ফুলপ্যান্ট পরেছে
কেউবা আঠারো, ভিড় করে আছে তার মুখে একা থাকার চরম নির্যাতন
কারো বা ছাব্বিশ — অস্থিরতা, যন্ত্রণার মুখোশ পরা
কেউ তিরিশ — ক্লান্ত, পথহারা, সোনালি মাথায় কালো চুল
তুমি কি ন্যায্যমূল্য? তুমি কি বিকল্প বাজার?
আমার সাধ্যের জোর যখন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে
তুমি এলে ত্রাতা হয়ে?

আমাকে আবার লাইনে দাঁড় করালে
আমাকে আবার টেনে নিলে তোমার সাশ্রয়ী দোকানে!
১৪/৫/৮

দুইটা চাঁদ

তোমাকে দেখবো কবে ও চাঁপা কাষ্ঠগোলাপ?
তোমার আমার মাঝখানে একটা যে ফাঁকা মাঠ
অনেকগুলি টাওয়ার
অনেকগুলি চাঁপা শাদা ফুল সবুজ পাতার

আমাকে টেনে নিয়ে গেলে একটা খোলা মাঠে
যেখান থেকে স্পষ্ট বিদ্যুৎচমক দেখা যায়
আমি দেখতে পাচ্ছি র‌্যাবের টহল হেলিকপ্টার
তুমি সেই দিগন্ত জোড়া মাঠে আমার সাথে বসে থাকলে
আমাদের সামনেই সমস্ত মহানগর
বৈশাখ মাসের সন্ধ্যায় লোড শেডিং-এ ডুবে গেল
দেখলাম আকাশ ভর্তি অর্ধেক আলোকিত চাঁদ
বাকি অর্ধেক অন্ধকার চাঁদকে নিয়ে হাওয়া খাচ্ছে

তা হলে দুইটা চাঁদ মিলেই একটা চাঁদ হয়!
বিশাল মাঠটাকে চলো দুইভাগ করে ফেলি
তুমি দাঁড়িয়ে থাকো একটায়
আমি শুয়ে থাকি অন্য মাঠে
ঐ দেখো আকাশ কেমন খালি? এটা শহরের আকাশ
আমাদের ছোট বেলার আকাশ ছিল কত তারাময়
অনেকগুলি টাওয়ার পার হয়ে তোমার কথা ভেসে এলো
অনেকগুলি দালান, রাস্তা, পার্ক, বস্তি পার হতে হতে
তারপরও তোমার কণ্ঠস্বর কেমন সুরভি ছড়াচ্ছে
মনে হয় এই তো তুমি আমার পাশের মাঠে, শুয়ে
আমি অর্ধেক চাঁদ দাঁড়িয়ে!
১৪/৫/৮

শোনাই তোমাকে আবার কাঁচা পদ্য

তোমার কণ্ঠস্বর অবিকল তোমার মতই নাকি?
নাকি কিছুটা আঞ্চলিক?
বনলতা সেনকেও দেখা যায় নাই
শেও কি ছিল না কিছু কাল্পনিক?

গতকাল তোমাকে কথার আঘাত দিয়েছি
বলেছি খুলে ধরো পুরোটা তোমাকে
আজ তুমি ব্যস্ত থাকবে, ভোটার আইডি কার্ড বানাতে

দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে মন
মেতেছে সবাই খুব স্বপ্নে
আমি পড়ে গেছি তোমার কুহকে
টাওয়ার টাওয়ারে সংযোগ খুঁজি
তোমার চুল খুলি খুব যত্নে

থাক আলোচনা পরিচয় নিয়ে
তুমি কি বাঙালি আর আমি বাংলাদেশী
পাশে এসে বসো না গো এলোকেশী
শোনাই তোমাকে আবার কাঁচা পদ্য

হাঁড়িতে যদিও বা দানা টানাটানি
গাও না গান আজ ওগো টুনটুনি
কিছুটা ভুলভাল, কিছুটা পুরানা
আমার হাতে থাক চলেশ রিসিলের মদ্য।
১৪/৫/৮

ধারানি শোধানি

কেন তুমি আজ এতো বেশি চুপচাপ
বোরখায় ঢেকে রেখেছো মুখখানি
পাড়ার সবাই দিয়েছে কি অভিশাপ
হাতে দিয়েছে কি হারাম হালালের তালিকাটা।

টাওয়ারে টাওয়ারে রচিছে ভবিষ্যৎ?
তোমার কোনো ধারানি শোধানি নাই।

তুমি এক নাও, আমারও ছোট্ট তরী
এই কাল বৈশাখে পাল তুলে দেবে নাকি
দুই পাল আর দুই হাল ধরে চলো
একই নদীতে বহু দূরে চলে যাই।

তোমার কাছে কি এ সবই কুল্লু হারাম
গণতন্ত্রেই শুধু ভোট দিয়ে যাবে?
মাঝিমাল্লারা যদি হয় বেশি লোভী
খেয়ে ফেলে যদি নদীটাই তীরসহ?
১৪/৫/৮

প্রথম আলিঙ্গন

রাত এলে ভাবি কখন হবে দিন
তোমার সাথে দেখা হলেও তো হতে পারে
যেখানে জীবন ছোট করেছে লোডশেডিং
তোমার ডাকেই সে শুধু প্রাণ পাবে

পনেরই মে, আজ আমার চুমু দিবস
তোমার না আজ প্রথম আসার কথা!
মনে হয় যেন অনেক জন্ম পর
আবার বসেছি আজকের হাহাকারে
বহু জীবনে যে সাধ মিটে নাই
বারবার চাই তোমাকে বাস্তবে।

তুমি কি রওনা হলে?
কখন পৌঁছাবে লালমাটিয়ায়
যখন সমস্ত শহর নিজেদের প্রয়োজনে
জট পাকিয়ে রাস্তায় গোঙায়?

তুমি কি আসছো বেলা এগারোটার আগে
আমার নিজেকে মেয়ে মেয়ে যেন লাগে

নাকি বিকালে? দ্বিধায় দুলছি এখন
প্রতীক্ষা কেমন আড়ষ্ট করেছে, কাজে নেই মন!
যখনই আসো, বীরপুরুষের মতো
আমাকে দিও প্রথম আলিঙ্গন!
১৫/৫/৮

জানালা কোথায়, এ যে সব মৌমাছি

জানালা কোথায়, এ যে সব মৌমাছি
ফুলের জন্ম মনে করিয়ে দিল
তখন আমি কী ফুল ছিলাম?

তুমি এলে ঠিকই ধরিয়ে দিতে পারতে
আমার কী রঙ, কোন সে গন্ধ ধারাতে!

আমি আজ নরম, তুমি যেন হাহাকার
ঘুরে ঘুরে দেরি করে আসা কী দরকার?

নিশ্চয়ই তুমি এ পথ থেকে ও পথে
হঠাৎ কোন পাগলা হাওয়ার দাপটে
মাঠে বাদাড়ে ডোবা খানা থেকে বিপথে
বৃষ্টির কাছে মাপ চেয়ে চেয়ে ফিরে গেছো!
১৫/৫/৮

সাদাকালো

তুমি তো নিশ্চয়ই আজ কালো শাড়ি পরে ছিলে
আনন্দকে কখনো কখনো কালো রঙ দিয়ে ঢেকে ফেলতে হয়।
এখন আমাকে বলো তোমার কালো রঙের রহস্য!

তুমি বলেছিলে তোমাকে ঘিরে আছে তিনটা ঘোড়া
একটার নাম অভিমান
অন্যটার নাম রাগ
আর শেষটার নাম দিয়েছো যন্ত্রণা।

নিশ্চয়ই আজ কালো শাড়ির সাথে ছিল শাদার মিশেল
তোমার কালোর কাছে শাদা হতে পারতাম আমি
শাদা হতে পারতো রৌদ্র

আমাদের সব অভিমান বুজে যেতো
আমাদের সব রাগ বরফ যুগের আইসক্রীম হতো
আমাদের যন্ত্রণার ঘোড়া পিছু নিতো না আর।

সে যাক, যা হবার তা হয়েছে
শাদা আর কালো দিঘিতে তোমার নাভীপদ্মের সৌরভ
আজ সমস্ত শহর ছড়িয়ে পড়েছে
আমি ঘরে বসেই তার আকুল সুঘ্রাণ পাচ্ছি

ছোট্ট সোনা ব্যাঙ, তোমার কি বর্ষাকাল আসবে না?
১৫/৫/৮
======================
কাজল শাহনেওয়াজ
জন্ম
১ জুন, ১৯৬১

শিক্ষা
কৃষি প্রকৌশল

পেশা
তথ্য প্রযুক্তি পরামর্শ ও সফটঅয়ার নির্মাণ

প্রকাশিত বই

ছাঁট কাগজের মলাট, কবিতা, ১৯৮৪
নিম বৃষ্টি, কবিতা নাটক, ১৯৮৫
জলমগ্ন পাঠশালা, কবিতা, ১৯৮৯
রহস্য খোলার রেঞ্চ, কবিতা, ১৯৯২
কাছিমগালা, ছোটগল্প, ১৯৯৩
সঙ্গীত পরিবারে সতীর আত্মহত্যা, কবিতা, ১৯৯৮
গতকাল লাল, ছোটগল্প, ২০০৭
আমার শ্বাসমূল, কবিতা, ২০০৭

সম্পাদনা
বিকল্প কবিতা, যৌথ সম্পাদনা, ১৯৮৯
ফৃ, লিটল ম্যাগাজিন, ১৯৯৫-৯৮
গ্রন্থিকা সিরিজ (পাতলা মলাটের বই), ১৯৯৮-৯৯, ২০০৭

যোগাযোগ
kajal.shaahnewaz@gmail.com
==========================
কবিতা- 'পাঁচটি কবিতা' by মুজিব ইরম  কবিতা- 'পাগলের হাসি ও অন্যান্য কবিতা' by মহাদেব সাহা   কবিতা- 'যেভাবে ঘরের কিসসা রচিত হয়' by ওমর কায়সার   কবিতা- 'বীতকৃত্য ও অন্যান্য কবিতা' by মাসুদ খান   কবিতা- 'পাঁচটি কবিতা' by সরকার আমিন   কবিতা- 'কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি'   পাঁচটি কবিতা' by অবনি অনার্য  কবিতা- 'ছুটপালক' by সব্যসাচী সান্যাল  গদ্য কবিতা- 'লীলা আমার বোন' by নান্নু মাহবুব   কবিতা- 'উৎসর্গ' by অসীম সাহা  তিনটি কবিতা' by বদরে মুনীর  কবিতা- 'সেরগেই এসেনিন বলছে' by আবদুল মান্নান সৈয়দ  কবিতা-মোহাম্মদ রফিক এর কপিলা থেকে ও অঙ্গীকার  কবিতা- 'সেতু' by বায়েজীদ মাহবুব  উপন্যাস- 'রৌরব'  by লীসা গাজী »»»   (পর্ব-এক) # (পর্ব-দুই) # (পর্ব-তিন) # (পর্ব-চার শেষ)   গল্প- 'পান্নালালের বাস্তু' by সিউতি সবুর   গল্প- 'গোপন কথাটি' by উম্মে মুসলিমা  আহমদ ছফার অগ্রন্থিত রচনা কর্ণফুলীর ধারে




bdnews24 এর সৌজন্যে
লেখকঃ কাজল শাহনেওয়াজ


এই কবিতা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.