শেরেবাংলায় জনসমুদ্র

সাপ্তাহিক দুই দিন ছুটির সঙ্গে বিজয়া দশমীর সরকারি ছুটি। ঢাকার রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা। কিন্তু অনেক মানুষের কোলাহলের শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল মিরপুর ১০ নম্বর বাসস্ট্যান্ডের বেশ খানিকটা দূর থেকেই। কাছে যেতেই চোখে পড়ল বিশাল লম্বা লাইন। ১০ নম্বর গোলচত্বরের ফায়ার ব্রিগেড ছাড়িয়ে লাইনটি বাঁক নিয়েছে ১২ নম্বরের দিকে। সবারই লক্ষ্য এক, টিকিট চাই!
মাঠে ঢুকে রীতিমতো চক্ষু চড়কগাছ, সকাল সাড়ে আটটার মধ্যেই গ্যালারি প্রায় ভরা। বাইরে যে এত লোক, এদের জায়গা হবে কোথায়! কীভাবে যেন হয়ে গেল। পিলপিল করে লোক ঢুকতে থাকল স্টেডিয়ামে। বেলা ১১টা নাগাদ ভিআইপি গ্যালারির কিছু জায়গা ছাড়া আর তিল ধারণের ঠাঁই নেই। বাইরে গিয়ে দেখা গেল হাজার পাঁচেক লোক তখনো মাঠে ঢোকার অপেক্ষায়!
টিকিট কাউন্টারের সুশৃঙ্খল লাইন তখন আর নেই। কাউন্টারের সামনে হাজারো লোকের জটলা। টিকিটের আশায় কাউন্টারের ছাদ ধরে ঝুলছে কয়েকজন। কালোবাজারিও চলছে সমানে। চোখের সামনেই দেখা গেল ছোটখাটো একটা নিলাম। ‘টিকিট লাগবে কার?’—কারও কণ্ঠে এটা শুনে ছুটে গেলেন কয়েকজন। ১০০ টাকার ক্লাব হাউসের টিকিট আছে তাঁর কাছে। একজন ২০০ টাকা দিতে চাইলেন, আরেকজন ৩০০, আরেকজন চুপচাপ ৫০০ টাকার একটা নোট হাতে গুঁজে ছোঁ মেরে টিকিট নিয়ে ভোঁ দৌড়। স্টেডিয়ামের পাশে টেলিফোন ভবনের গেটটা দেখতে টিকিট কাউন্টারের মতো, সেখানেও টিকিটের জন্য ভিড় জমল। টিকিট না পেয়ে উত্তেজিত কয়েকজন ১০ নম্বরে কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করেছে।
স্টেডিয়ামের ভেতর প্রায় পরিপূর্ণ, কিন্তু বাইরে টিকিট হাতে তখনো দু-তিন হাজার লোক। বোঝা গেল ছাড়া হয়েছে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত টিকিট। দুপুরের দিকে খুলে দেওয়া হয়েছে প্রেসবক্সের বাঁ দিকের গ্যালারিটি, যেটি সিরিজে এর আগে খোলা হয়নি। সব মিলিয়ে দর্শকসংখ্যা কাল ২৫ হাজার ছাড়িয়েছে।
ক্রিকেটপ্রেমীদের এমন কষ্ট অবশ্য সার্থক হয়েছে দলের অবিস্মরণীয় জয় দেখে। পুরো সময়টা নেচে-গেয়ে খেলা উপভোগ করেছে তারা। গ্যালারিতে ছিল বিশালাকার কিছু ড্রাম, যেগুলোয় বাড়ি পড়লে ভূমিকম্পের মতো কেঁপে উঠেছে পুরো স্টেডিয়াম। খেলা শেষ হওয়ার পরও মাঠ ছাড়ছিল না কেউ, ট্রফি হাতে দলের উল্লাস না দেখে কি ফেরা যায়! ফেরার সময় ধানমন্ডি থেকে আসা রুবাইয়াত বললেন, ‘দল ইতিহাস গড়েছে, আমরা দেখেছি, উৎসাহ দিয়েছি। ইতিহাসের অংশ তো আমরাও!’
খুবই সত্যি কথা!

No comments

Powered by Blogger.