মেঘালয় সীমান্তসংলগ্ন নয়টি শুল্ক স্টেশন সক্রিয় করা হবে

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মেঘালয়ের সঙ্গে স্থলপথে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের মেঘালয় সীমান্তসংলগ্ন দুই দেশের নয়টি শুল্ক স্টেশন পুরোপুরি সক্রিয় করা হবে। এর মধ্যে বাংলাদেশের পাঁচটি আর ভারতের চারটি রয়েছে।
সম্প্রতি মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য গঠিত স্থল শুল্ক স্টেশন অবকাঠামোসংক্রান্ত উপদলের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়।
বাংলাদেশের পাঁচটি শুল্ক স্টেশন হলো: সিলেটের তামাবিল, হালুয়াঘাটের গোবরাকড়া ও গাছুয়া, শেরপুরের নকুগাঁও এবং সুনামগঞ্জের বড়ছড়া। আর ভারতের শুল্ক স্টেশনগুলো হলো ডাউকি, কড়ুইতলী, ঢালু ও বড়ছড়া।
এসব শুল্ক স্টেশনে আধুনিক অফিস, ওজনযন্ত্র, ট্রাক পার্কিং ও ওয়্যারহাউস নির্মাণ করা হবে। এর পাশাপাশি এসব শুল্ক স্টেশনে পণ্যবাহী যানবাহন পৌঁছানোর জন্য রাস্তা সংস্কার করা হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দেবে।
বর্তমানে তামাবিল ছাড়া অন্য শুল্ক স্টেশন দিয়ে নিয়মিত পণ্য আমদানি-রপ্তানি করা হয় না। কোনো ধরনের অবকাঠামোও নেই এসব শুল্ক স্টেশনে। এমনকি শুল্ক কর্মকর্তাও নেই। নিকটবর্তী কমিশনারেট থেকে নির্দিষ্ট দিনে শুল্ক স্টেশনে গিয়ে দায়িত্ব পালন করেন শুল্ক কর্মকর্তারা। আমদানি ও রপ্তানিকারকের চাহিদা অনুযায়ী মাঝে মাঝে এসব রুট ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশ থেকে মেঘালয়ে ইট, চকোলেট, লজেন্স, জুসসহ নানা ধরনের পণ্য রপ্তানি করা হয়। অন্যদিকে মেঘালয় থেকে আসে প্রধানত চুনাপাথর।
৩ থেকে ৬ অক্টোবর মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে স্থল শুল্ক স্টেশন অবকাঠামোসংক্রান্ত উপদলের বৈঠকে বাংলাদেশের ছয় সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোকাব্বের হোসেন। প্রতিনিধিদলে এনবিআর, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ (বাস্থবক) ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ছিলেন।
বৈঠককালে উভয় দেশের প্রতিনিধিদল মেঘালয় সীমান্তঘেঁষা সব স্থলবন্দর সরেজমিনে পরিদর্শন করে।
মেঘালয়ে অনুষ্ঠিত দুই দেশের বৈঠকে অংশ নেওয়া এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এসব শুল্ক স্টেশনের অবকাঠামোসুবিধা বাড়ানো গেলে দুই অঞ্চলের মধ্যে বাণিজ্য আরও সম্প্রসারিত হবে। শুধু ওয়্যারহাউসের অভাবে বহু বাংলাদেশি রপ্তানিকারক মেঘালয়ে পণ্য রপ্তানি করতে আগ্রহী হচ্ছেন না।’
উদাহরণ দিয়ে ওই কর্মকর্তা জানান, ঢালু-নকুগাঁও সীমান্তে গুদাম বা ওয়্যারহাউস না থাকায় প্রাণ গ্রুপের মতো রপ্তানিকারক এই পথে রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে।
বাংলাদেশের শেরপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলার সঙ্গে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত রয়েছে। বাংলাদেশ ও মেঘালয়ের মধ্যে পণ্য পরিবহনের জন্য তামাবিল-ডাউকি শুল্ক স্টেশন ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু এই রুট ব্যবহার করে মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে পণ্য পৌঁছাতে বেশ সময় লাগে। তাই সময় ও পরিবহন-ব্যয় কমানোর জন্য গোবরাকড়া ও গাছুয়াপাড়া-কড়ুইতলী, নকুগাঁও-ঢালু, বড়ছড়া রুটগুলো ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর স্থলপথে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজগুলোর সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়। এসব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সফর করেও গেছে।
এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসেই ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য মেলা এবং বাংলাদেশ-উত্তরপূর্ব ভারত বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্মেলন। এর মূল আয়োজক ছিল ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (আইবিসিসিআই)। সম্মেলনে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলো বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসাব অনুসারে, সারা দেশে ১৮১টি শুল্ক স্টেশন রয়েছে। ওয়্যারহাউস, পানি, বিদ্যুৎসহ কোনো ধরনের অবকাঠামোসুুবিধা না থাকায় প্রায় অর্ধশতাধিক শুল্ক স্টেশন বছরের পর বছর ধরে অব্যবহূত রয়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে ২০০৭ সালের জুলাই মাস থেকে ৫০টি শুল্ক স্টেশন অকার্যকর ঘোষণা করেছে এনবিআর। তবে পূর্বানুমতি নিয়ে এসব স্টেশন ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। ৯৯টি শুল্ক স্টেশন চালু রাখা হলেও কোনো ধরনের হেড লোডিং (নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য মাথায় বহন করে আনা-নেওয়া) নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.