ইতোর রাতে বার্সার ড্র

ক্লিক, ক্লিক, ক্লিক...। ঝড়ের গতিতে ক্যামেরার শাটার টিপে যাচ্ছিলেন স্যামুয়েল ইতো। সতীর্থরা ছুটে যাচ্ছিলেন তাঁর গোল উদ্যাপন করতে, দৃশ্যটা ক্যামেরাবন্দী করে রাখতে চাইলেন ইন্টার মিলানের ক্যামেরুনিয়ান স্ট্রাইকার।
পরশু আসলে ক্যামেরাবন্দী হয়ে গেল স্যামুয়েল ইতোরই অসামান্য এক কৃতিত্ব। ইন্টার মিলানের জার্সি গায়ে প্রথম হ্যাটট্রিক করেছেন তিনি। ভেরডার ব্রেমেনের বিপক্ষে দলকে পরশু এনে দিয়েছেন ৪-০ গোলের বিধ্বংসী জয়।
হ্যাটট্রিক গোলটি ইতো করেছেন ৮১ মিনিটে। কিন্তু যতক্ষণ মাঠে ছিলেন প্রশস্ত একটা হাসিই ছড়িয়ে ছিল তাঁর মুখে। শেষ বাঁশি বাজার পর বলটি বগলদাবা করে সহাস্যে মাঠ থেকে বেরোলেন। যে বলটি দিয়ে ইন্টারে প্রথম হ্যাটট্রিক করেছেন, সেটি হয়তো রেখে দেবেন নিজস্ব সংগ্রহশালায়!
ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে ইতো আরও খোলামেলা, ‘দারুণ এক ম্যাচ ছিল এটা। আপনি যখন জিতবেন, অবশ্যই আনন্দ হবে আপনার। আর দলের জয়ে যখন আপনি গোল করবেন, তখন আনন্দটা বেশিই হবে।’
শুরুর ১০ মিনিট যা একটু লড়াইয়ের চেষ্টা করেছে ব্রেমেন। ম্যাচের বাকি সময় ইন্টার ব্রেমেনকে নিয়েই খেলেছে। প্রথমার্ধেই ৩-০ গোলে এগিয়ে গিয়েছিল স্বাগতিকেরা। এস্তেবান ক্যাম্বিয়াসোর বুদ্ধিদীপ্ত পাসে প্রথম গোলটি করেছেন ইতো। দ্বিতীয় গোলটি লুসিওর এক লম্বা পাস থেকে। এরপর ইতোরই ডিফেন্স চেরা পাসে ব্যবধান ৩-০ করেন ওয়েসলি স্নাইডার। ৮১ মিনিটে ইতো তাঁর হ্যাটট্রিক গোলটি করেছেন গোলরক্ষক টিম ভিজাকে কাটিয়ে।
যাঁর জন্য ইন্টার এমন জয় পেল, ডিয়েগো মিলিতো চোটের কারণে খেলার বাইরে না থাকলে সেই ইতোর কিন্তু সেন্টার ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলাই হতো না। নতুন কোচ বেনিতেজও তাঁর পূর্বসূরি হোসে মরিনহোর মতো ইতোকে মাঝে না খেলিয়ে একটু বাঁয়ে খেলাচ্ছিলেন। তাহলে তাঁদের কৌশলটা কি ভুল প্রমাণিত হলো? বেনিতেজ ইতোর প্রশংসার পাশাপাশি নিজের কৌশলকে যৌক্তিক বলেই তুলে ধরলেন, ‘যখন বাঁয়ে খেলে তখনো স্যামুয়েল গোলের কাছাকাছিই থাকে।’ দাবিটা আরও যুক্তিসিদ্ধ হয়ে যায় ইতোর এ মৌসুমে ৯ ম্যাচে ১১ গোল পাওয়ায়।
গোল পাচ্ছে বার্সেলোনাও। তবে রুবিন কাজান সামনে পড়লেই যেন গোল করতে ভুলে যায় পেপ গার্দিওলার দল। রাশিয়ার এই ক্লাবটি যেন দুষ্টগ্রহের মতো এসে দাঁড়ায় বার্সার সামনে। গত মৌসুমে নিজেদের মাঠে হেরেছিল তারা কাজানের কাছে, কাজানের মাঠ থেকে ফিরেছিল গোলশূন্য ড্র নিয়ে। এবার দুই ম্যাচের প্রথমটিতে কাজানের মাঠে ড্র করল বার্সেলোনা (১-১)।
এই ড্রতে বার্সা অবশ্য খুশিই হতে পারে। ম্যাচের শুরুতে পেদ্রোর শট পোস্টে প্রতিহত হওয়ায় বার্সা ৩০ মিনিটে পিছিয়েই পড়ে নবোয়ার পেনাল্টি গোলে। ৬০ মিনিটে ডেভিড ভিয়ার পেনাল্টি গোলে ম্যাচে ফেরে এক মৌসুম আগে ছয়টি শিরোপাজয়ী বার্সেলোনা। ম্যাচ শেষে একটি পয়েন্ট পাওয়াকেই বড় প্রাপ্তি মেনেছেন ভিয়া, ‘প্রথমার্ধের পেনাল্টিটি আমাদের জন্য ম্যাচটি কঠিন করে তুলেছিল। ওরা খুব ভালো রক্ষণ করেছে। তবু একটা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট পেয়েছি।’
রুবিন কাজান বার্সাকে ঠেকাতে নিয়েছিল অতি রক্ষণাত্মক কৌশল। দ্বিতীয়ার্ধে তো ৭-৮ জনকে রক্ষণে নামিয়ে দেয় তারা। বদলি হিসেবে নামা লিওনেল মেসির জাদুও তাদের সেই জমাট রক্ষণ ভাঙতে পারেনি। তবে বার্সার বল দখল ছিল অবিশ্বাস্য, শতকরা ৭৫ ভাগ!
এদিকে স্পেন থেকে কোনোরকমে জয় নিয়ে ফিরেছে ইংল্যান্ডের ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। দুই তরুণ প্রতিভাই বাঁচিয়েছে ‘অল রেড’দের। রেঞ্জার্সের পর আরেকটি গোলশূন্য ড্রর দিকে এগোতে থাকা ম্যানইউ ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে জয়সূচক গোলটি পেয়েছে ৮৫ মিনিটে। মাচেদার পাসে গোলটি করেছেন মেক্সিকান স্ট্রাইকার হাভিয়ের হার্নান্দেজ।
৮ বছর পর আবার স্পেন থেকে জয় নিয়ে ফেরা ম্যানইউ কোচ ফার্গুসন কষ্টার্জিত এই জয়েই খুশি, ‘এটা আমাদের জন্য দারুণ এক ফল।

No comments

Powered by Blogger.