চমকে দেওয়ার অপেক্ষায় বেনেট

ক্যান্টারবুরির এক পেসারকে জাতীয় দলের কোচ মার্ক গ্রেটব্যাচ এসএমএস করেছেন ফোন করার জন্য। সেই পেসার ভাবলেন, তাহলে কি ‘এ’ দলের হয়ে জিম্বাবুয়ে যাওয়ার সুযোগ আসছে? ফোন করলেন, মিনিট দশেক কথা হওয়ার পর হঠাৎ কোচ বললেন, ‘যাবে নাকি বাংলাদেশে?’ জীবনে এতটা অবাক কখনো হননি হামিশ বেনেট। ক্যান্টারবুরির ২৩ বছর বয়সী পেসার হাসেন, ‘বলুন, এমন প্রস্তাবে না করা যায়!’
গল্পটা পুরোনো মনে হচ্ছে না? মনে হচ্ছে না কোথায় যেন শুনেছেন! হওয়ারই কথা। এ বছরের শুরুতে ঠিক একই রকম একটা ফোন বদলে দিয়েছিল নিউজিল্যান্ডের আরেক পেসারের জীবন। এমনই আনকোরা এক পেসারকে গ্রেটব্যাচের ফোন, বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলার প্রস্তাব। গত ফেব্রুয়ারিতে দেশের মাটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে অভিষিক্ত পেসার অ্যান্ডি ম্যাকাই এবার বাংলাদেশেও এসেছেন। সঙ্গী তাঁর মতোই চমকে যাওয়া আরেকজন, বেনেট।
মিল আছে আরও। ঘরোয়া ক্রিকেটে এমন কোনো পারফরম্যান্স ছিল না কারোরই। তবে একটা অমূল্য জিনিসে মিল—বলের গতি। শেন বন্ড ক্রিকেট ছাড়ার আগে থেকেই গতি দিয়ে প্রতিপক্ষকে কাঁপিয়ে দিতে হন্যে হয়ে আরেকজন ‘বন্ড’ খুঁজছে নিউজিল্যান্ড। সেই অনুসন্ধানেরই ফসল এই ম্যাকাই আর বেনেট।
৬টি ওয়ানডে ও দুটি টি-টোয়েন্টি খেলে ফেলেছেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ম্যাকাই-দর্শন হয়ে গেছে। আগ্রহের কেন্দ্রে এখন বেনেট, নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের ‘সর্বেসর্বা’ ড্যানিয়েল ভেট্টোরি স্বয়ং যাঁকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত। অধিনায়কের দাবি, বেনেট নাকি ১৪৫ কিলোমিটারের আশপাশে নিয়মিতই বল করতে পারেন। বেনেট অবশ্য মাথা চুলকে জানাচ্ছেন, নিজের দ্রুততম বলটা কত গতির সেটি তাঁর জানা নেই। হঠাৎ পাদপ্রদীপের আলোয় এসে খুশি, তবে তাঁকে নিয়ে অধিনায়কের এত উচ্ছ্বাসেও বেনেটের মাথা ঘুরে যায়নি, ‘অধিনায়ক আপনাকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত হলে ভালো তো লাগবেই। তবে আমি খুব বেশি ভাবছি না, দৃষ্টি খুব বেশি দূরে নয়। স্রেফ নিজের মতো খেলতে চাই।’
বন্ডকে আদর্শ মেনেই বড় হয়েছেন। ছেলেবেলায় স্বপ্ন ছিল নিউজিল্যান্ডের রাগবি দলে খেলা। খেলতেন বাস্কেটবলও। ক্রিস কেয়ার্নস, ক্রিস হ্যারিস, জিওফ অ্যালটদের ক্যান্টারবুরির হয়ে খেলতে দেখে মজে গেলেন ক্রিকেটের প্রেমে। বন্ডকে দেখার পর থেকে শুধু বন্ডই হতে চেয়েছেন। দুজনের তুলনা করতেই অবশ্য প্রায় ‘হায় হায়’ করে উঠলেন, ‘বন্ডি ছিল গ্রেট। আমি যদি ওর অর্ধেকও হতে পারি, তাহলেই খুশি থাকব।’ বন্ড মানে ইনজুরিও। চোটের কাছে হার মেনেই তো ক্রিকেট ছাড়তে বাধ্য হলেন। ‘বন্ডের উত্তরসূরি’ অবশ্য নিজেকে চোট থেকে বাঁচানোর একটা উপায় বের করেছেন, ‘অফ সিজনের ট্রেনিংটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রচুর রানিং করতে হবে, জিমে যেতে হবে নিয়মিত। আশা করি, আমি নিজেকে ফিট রাখতে পারব।’
বাংলাদেশ দল সম্পর্কে সামান্য কিছু ধারণাও আছে। গত নিউজিল্যান্ড সফরে বাংলাদেশের নেটে বোলিং করেছিলেন, ভারতের এমআরএফ পেস ফাউন্ডেশনে একসঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশের পেসার রুবেল হোসেনের সঙ্গে। তূণে খুব বেশি অস্ত্র এখনো নেই, বাউন্সটাই মূল অস্ত্র। সে ক্ষেত্রে অবশ্য অভিষেকের জন্য বাংলাদেশ খুব একটা আদর্শ জায়গা নয়।
‘বন্ডের উত্তরসূরি’ অপেক্ষা করছেন স্রেফ একটা সুযোগের। নিজে যেমন চমকে গেছেন, সুযোগ পেলে সেভাবেই চমকে দিতে চান ক্রিকেট-বিশ্বকে।

No comments

Powered by Blogger.