অনেক ‘প্রতীক্ষার’ ফাইনাল

অনুশীলন শেষে রুমে ফিরেছেন। নাশতার প্লেট সামনে। সতীর্থ কয়েকজনের চোখ টিভির পর্দায়। আলফাজ আহমেদ সেদিকে তাকাচ্ছেন না। আজ তাঁর মাঠে নামা হবে কি না সেটা জানা নেই। কিন্তু মনের ভেতরে একটা উজ্জীবনী শক্তি অনুভব করছেন।
‘মনে হচ্ছে দীর্ঘ একটা খরার পর এক পশলা বৃষ্টি এসেছে। এমন একটা ফাইনাল কত দিন হয় না! দীর্ঘ একটা প্রতীক্ষার ফাইনাল মনে হচ্ছে এই ম্যাচটিকে’—আবাহনী স্ট্রাইকার বলে যান এক নিঃশ্বাসে।
‘এমন একটা ফাইনাল’ বলতে আজকের আবাহনী-শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের ফাইনাল। ২২তম ফেডারেশন কাপের চূড়ান্ত লড়াইটা অনেক দিনের প্রতীক্ষার ফাইনাল কীভাবে হয়? ধানমন্ডি ক্লাব তো এবারই প্রথম খেলছে মৌসুম সূচক টুর্নামেন্টের ফাইনালে।
কথা ঠিক। সেই ষাটের দশকের ধানমন্ডি ক্লাব শেখ জামাল নাম নিয়ে এই প্রথম ঘরোয়া টুর্নামেন্টের শিরোপা লড়াইয়ে নামছে। দেশের ১৫-১৬ জন জাতীয় দলের খেলোয়াড় দলভুক্ত করার পর কাগজে-কলমে সেরা দলের তকমা পাওয়া দলটির ফাইনালে ওঠা ছিল ‘অবশ্যপালনীয়’ কর্তব্য। সেই দলকে হারিয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের আসনে রাখার একটা চ্যালেঞ্জ শুরু থেকেই দেখে আসছে পেশাদার লিগের হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন আবাহনী। আলফাজের মুখে ‘প্রতীক্ষার ফাইনাল’ কথাটা এ কারণেই যথার্থ মনে হয়।
কিন্তু ফাইনালের সেই আমেজ কি আছে? আবাহনীর অনুশীলন শেষে অধিনায়ক প্রাণতোষ বললেন, ‘আবাহনী-মোহামেডান ফাইনালের মতো টেনশন নেই। দুই প্রধানের যেকোনো ম্যাচেই আমরা চাপে থাকি। এই চাপটা ঠিক সেভাবে নিজেদের মধ্যে দেখছি না।’
আবাহনীর এই ফাইনালে না জিতলে টানা তিনটি ফেডারেশন কাপের রানার্সআপ হবে তারা। গত দুটি ফেডারেশন কাপের ফাইনালে হেরেছে মোহামেডানের কাছে। দুটিই টাইব্রেকারে। তার চেয়েও বড় তথ্য, আবাহনী সর্বশেষ ফেডারেশন কাপ জিতেছিল ২০০০ সালে। বছরের হিসাবে ১০ বছর, মাঝে ফেডারেশন কাপ হয়েছে অবশ্য মাত্র চারটি। সেটা মনে করে উইঙ্গার মেহেদি হাসান (উজ্জ্বল) ক্লাব-বারান্দায় দাঁড়িয়ে সন্ধ্যার আলো-আঁধারীতে প্রতিজ্ঞার সুরে বলে যান, ‘দশ বছর হয়ে গেল। এবার ফেডারেশন কাপ চাই-ই চাই আমাদের।’
শেখ জামালের হিসাব একটাই, ‘গোল করো এবং চ্যাম্পিয়ন হও।’ তারকাবহুল দল হলেও শেখ জামালের সবচেয়ে বড় সমস্যা গোল-খরা। তাই কাল বিকেলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে শেষ বেলার অনুশীলনে শ্যুটিং অনুশীলনই বেশি হলো। ছাড়পত্র চলে আসায় আজ বদলি হিসেবে খেলানো হতে পারে সার্বিয়ান স্ট্রাইকার আলেকজান্ডারকে। তাঁর পায়ের শট দেখে সাইড বেঞ্চে বসা শেখ জামাল সভাপতি মনজুর কাদের বেশ উৎফুল্ল—‘গুড শট’, ‘ব্রিলিয়ান্ট শট!’
ম্যাচে গোল করলেই অর্থ পুরস্কার দিয়ে আসছে শেখ জামাল। আগের ম্যাচগুলোয় প্রতি গোলের জন্য দলকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছেন ক্লাব সভাপতি। ফাইনালে অঙ্কটা এক লাখ। বলা বাহুল্য, এটা খেলোয়াড়দের উৎসাহ দেওয়ার জন্য। এর প্রতিদান দেওয়ার জন্য তৈরি সেমিফাইনালে দারুণ গোলকিপিং করে দলকে ফাইনালে তোলা অধিনায়ক আমিনুল, ‘ক্লাব খেলোয়াড়দের অনেক দিয়েছে। কাল (আজ) খেলোয়াড়দের প্রতিদান দেওয়ার পালা। ফাইনাল জিতে ক্লাবের উৎসাহ আরও বাড়াতে চাই।’
লক্ষ্য পূরণ কতটা সম্ভব, কমলাপুর স্টেডিয়ামে তারই পরীক্ষা শুরু আজ বিকেল পাঁচটায়। এর আগে গ্রুপ পর্বে আবাহনীর বিপক্ষে ম্রিয়মাণ ছিল শেখ জামাল। দুই পরাশক্তির গোলশূন্য লড়াইয়ে আবাহনীই ভালো খেলেছে। তবে এটি নতুন ম্যাচ। জিততে পারে যে কেউ। ফাইনাল বলে জয়ের তৃষ্ণাটা তাই সমানভাবেই ছড়িয়ে আছে দুই দলে।

No comments

Powered by Blogger.