উস্টারেও উজ্জ্বল সাকিব

২০ জুলাই হল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচ খেলে যুক্তরাজ্য সফর শেষে দেশে ফিরে এসেছে বাংলাদেশ দল। দলের সঙ্গে তিনি ফেরেননি। তিনি থেকে গেলেন কাউন্টি ক্রিকেটে খেলার জন্য। এই প্রথম দল ছাড়া প্রায় দুই মাস ধরে দেশের বাইরে থাকতে হলো সাকিব আল হাসানকে।
অবশেষে গতকাল এবারের দীর্ঘ প্রবাস জীবনের শেষ ম্যাচটা খেললেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক। এখন দেশে ফিরে দলের সঙ্গে যোগ দেবেন। তার আগে কাউন্টি ক্রিকেটের দ্বিতীয় বিভাগে সাকিবের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব মেলানোর পালা। ফেরার আগে কী নিয়ে এলেন, তাঁর দল উস্টারশায়ারকেই বা কী দিয়ে এলেন?
উস্টারশায়ারের কপাল খুলে দিয়ে এসেছেন। গতকাল মৌসুমের শেষ প্রথম শ্রেণীর ম্যাচে সাসেক্সকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে তারা। অন্য ম্যাচে ডার্বিশায়ারের বিপক্ষে গ্ল্যামরগন হেরে গেলে উস্টার প্রথম ডিভিশনে উঠে যাবে। উস্টার সাকিবময় নয়। তবে আগের মৌসুমে বড় দুর্দিনে পড়ে যাওয়া উস্টারের এ মৌসুমে বড় ভরসার নাম ছিলেন এই সাকিব আল হাসান।
১৯৬৪ থেকে ১৯৮৯ সালের মধ্যে পাঁচবার কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে উস্টারশায়ার। ইয়ান বোথাম, ইমরান খান, কপিল দেবের মতো যুগশ্রেষ্ঠ অলরাউন্ডাররা খেলে গেছেন এই দলে। কিন্তু ২০০৯ সালে বড় বিপাকে পড়ে যায় তারা। ১৯২৮ সালের পর ওইবারই প্রথম কোনো প্রথম শ্রেণীর ম্যাচে জয় ছাড়াই মৌসুম শেষ করতে হয় উস্টারশায়ারকে।
বোথামদের তো আর ফিরিয়ে আনা যাবে না। তাই এমন সময়ে সমাধান হিসেবে ক্লাবটি দলে টানে বর্তমান যুগের ওয়ানডের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে। সাকিবও সুযোগ পেয়ে যান কাউন্টি অভিষেকের।
সুযোগের দারুণ সদ্ব্যবহার করেই শুরু করেছিলেন সাকিব। কাউন্টিতে প্রথম শ্রেণীর অভিষেক ইনিংসে ডার্বিশায়ারের বিপক্ষে ৯০ রান করেছিলেন। আর ৪০ ওভারের ম্যাচে অভিষেক হয়েছিল ৭২ রানের ইনিংস দিয়ে। এর পর থেকে ৮টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ ও ৫টি সীমিত ওভারের ম্যাচ খেলেছেন। সীমিত ওভারের ম্যাচে আরও একটি ফিফটি করলেও সাকিবের ব্যাট খুব হাসেনি।
৫টি সীমিত ওভারের ম্যাচে ৩৭.৪০ গড়ে ১৮৭ রান করেছেন; যা মৌসুমে উস্টারের পক্ষে ষষ্ঠ সর্বোচ্চ রান। ৮টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচে সাকিবের সংগ্রহ ৩৫৮ রান।
তবে সাকিব কাউন্টি ক্রিকেটে তাঁর আসল ভেল্কিটা দেখিয়েছেন বল হাতে। ৮টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচে নিয়েছেন ৩৫ উইকেট। নিজের তৃতীয় ম্যাচ, গ্লস্টারশায়ারের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে ২৩ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন। পরের ৬ ইনিংসে আরও দুবার ইনিংসে ৫ বা তার বেশি উইকেট সাকিবের। যার মধ্যে মিডলসেক্সের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে ৩২ রানে ৭ উইকেটও আছে।
মিডলসেক্সের বিপক্ষে এই বোলিংটা উস্টারের পক্ষে এ বছরের ইনিংস-সেরা। উস্টারের হয়ে এই মৌসুমের সেরা পাঁচটি বোলিং বিশ্লেষণের মধ্যে প্রথম, চতুর্থ ও পঞ্চম সেরা; তিনটিই সাকিবের। দলটির হয়ে এ মৌসুমের ম্যাচসেরা বোলিংও করেছেন সাকিব। সারের বিপক্ষে সে ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ২ উইকেট ও পরের ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।
সাকিবের বোলিংয়ের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য—মিডলসেক্সের বিপক্ষে তাঁর বোলিংটা দ্বিতীয় বিভাগ কাউন্টির এ মৌসুমের তৃতীয় সেরা বোলিং! আর এসবের পাশে মাথায় রাখতে হবে, সাকিব কিন্তু তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় অর্ধেকের মতো ম্যাচ খেলেছেন। যেমন ৪০ ওভারের খেলায় সাকিব ৫ ম্যাচে ১৭.৭৭ গড়ে ৯ উইকেট নিয়ে উস্টারের দ্বিতীয় সেরা উইকেটশিকারি। দলের হয়ে ১৮ উইকেট নিয়ে তালিকার এক নম্বরে থাকা জ্যাক স্যানট্রি ম্যাচ খেলেছেন ১২টি।এসব পরিসংখ্যান নিঃসন্দেহে সাকিবের কৃতিত্বই প্রমাণ করে। কিন্তু আসল প্রমাণটা হবে দেশে ফিরলে। কাউন্টি অভিজ্ঞতা জাতীয় দলের হয়ে কাজে লাগাতে পারবেন সাকিব?
যা নিয়ে ফিরছেন
এ মৌসুমে কাউন্টি ক্রিকেট দ্বিতীয় বিভাগের তৃতীয় সেরা (৭/৩২) এবং দশম সেরা (৬/৪২) বোলিং ফিগার
উস্টারশায়ারের হয়ে মৌসুমে ম্যাচসেরা বোলিং (৮/১০২)
উস্টারশায়ারের পক্ষে মৌসুমে ইনিংস-সেরা বোলিং (৭/৩২)
দলের ইনিংস-সেরা ৫টি বোলিং বিশ্লেষণের ৩টিই সাকিবের
৪০ ওভারের ম্যাচে দলের পক্ষে মৌসুমে সেরা বোলিং (৪/৩২)
সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহকের চেয়ে ৭ ম্যাচ কম খেলে ৯ উইকেট নিয়ে ৪০ ওভারের ম্যাচে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট

No comments

Powered by Blogger.