কুককে ছাপিয়ে আজমল-আমির

অ্যালিস্টার কুকের ব্যাট অনেকক্ষণই এমন দর্শক বানিয়ে রাখল পাকিস্তানিদের
চা-বিরতির সময় মনে হচ্ছিল একটু ভিন্নভাবে ওভালে ফিরে আসছে ২০০৬। চার বছর আগে ঠিক কালকের দিনটিতেই বল টেম্পারিং বিতর্কে পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে থাকা ম্যাচটিতে জয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল ইংল্যান্ডকে। কাল বিতর্কিতভাবে নয়, মাঠের পারফরম্যান্স দিয়েই পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণ থেকে ম্যাচ বের করে নিয়ে যাচ্ছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু সব ওলট-পালট করে দিলেন মোহাম্মদ আমির ও সাঈদ আজমল।
১১৯ রানের লিড ও হাতে সাত উইকেট নিয়ে চা-বিরতিতে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু বিরতির পর তারা দিশেহারা হয়ে গেল আমিরের রিভার্স সুইং আর আজমলের টার্ন ও দুসরায়। টানা ১৫ ওভারের স্পেলে দুজন মিলে তুলে নিলেন স্বাগতিকদের ৬ উইকেট। আমির ৭.২-৩-১০-৩ ও আজমল ৮-৩-১৬-৩—শেষ সেশনে এই হলো দুই পাকিস্তানির বোলিং বিশ্লেষণ। আলোকস্বল্পতায় খেলা আগেই শেষ হওয়ার সময় ১ উইকেট হাতে রেখে ইংল্যান্ডের লিড ১৪৬। খেলাটা ক্রিকেট এবং দলটির নাম পাকিস্তান বলেই শুধু ইংল্যান্ডের পরাজয় নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না।অথচ দিনটি হতে পারত অ্যালিস্টার কুকের! ব্যাটিংয়ের ধরনে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। কালকের কুককে দেখে তবু ধারাভাষ্য কক্ষে থাকা ইয়ান বোথাম, নাসের হুসেইনদের মনে পড়ে গেল ২০ বছর আগের ডেভিড গাওয়ারের কথা। ১৯৯০-৯১ অ্যাশেজের ঠিক আগে রান-খরায় ভুগছিলেন গাওয়ার। দেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানকে বাদ দিয়েই অ্যাশেজে যাবে ইংল্যান্ড, শোনা যাচ্ছিল এমন গুঞ্জন। ১২ ইনিংস সেঞ্চুরিবিহীন থাকার পর এই ওভালেই ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করে অস্ট্রেলিয়ার টিকিট নিশ্চিত করেছিলেন গাওয়ার।
এই ইনিংসটার আগের ৮ ইনিংসে কুকের সর্বোচ্চ রান ছিল ২৯। গত মার্চে বাংলাদেশ সফরে তিনি ছিলেন অধিনায়ক, দেশের হয়ে দ্রুততম এক, দুই ও তিন হাজার রানের রেকর্ড তাঁর, কিন্তু ফর্মের এই অবস্থায় দলে জায়গা নিয়ে প্রশ্নটা উঠছিল জোরেশোরে। এই ইনিংসটাই হয়তো ছিল শেষ সুযোগ। টেস্ট ক্যারিয়ারের ত্রয়োদশ সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়ার টিকিটটা নিশ্চিত করে ফেললেন কুক।
গাওয়ারের সঙ্গে তুলনীয় হতেও এখনো অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে কুককে। তবে কাল এই ওপেনার কিন্তু নিজের বলয় থেকে বেরিয়ে এসে খেলেছেন যথেষ্ট আক্রমণাত্মক। দিনের শুরু থেকেই ছিলেন ইতিবাচক, শট খেলেছেন উইকেটের চারপাশে। ৭৭ বলে ৯ চারে করেছেন প্রথম ফিফটি, পরের ফিফটিতে বল লেগেছে আরও কম, ৭১টি। ট্রটের সঙ্গে তৃতীয় উইকেট জুটিতে গড়েছেন ১১৬ রানের জুটি। ট্রট খেলেছেন কুকের পুরো উল্টো। ১৩০টি বল খেলেছেন, এর ১১১টিতেই কোনো রান করতে পারেননি! চা-বিরতির পর টানা দুই ওভারে পিটারসেন ও ট্রটের বিদায়েই শুরু হয় ইংল্যান্ডের নাটকীয় পতন, ২৬ রানের মধ্যে হারায় তারা ৬ উইকেট।
২০০
অ্যালিস্টার কুকের ক্যাচ নিয়ে দ্বিতীয় পাকিস্তানি হিসেবে টেস্টে দুই শ ডিসমিসাল হয়ে গেল কামরান আকমলের, সামনে শুধু ওয়াসিম বারি (২২৮)।

No comments

Powered by Blogger.