শেয়ারবাজারে দরপতন

অব্যাহত উত্থানের বিপরীতে গতকাল বুধবার দেশের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের দরপতন ঘটেছে। একই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণও।
শেয়ারে বিনিয়োগের জন্য ঋণের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) কঠোর অবস্থানের কারণেই এ দরপতন বলে এ খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন।
তাঁরা বলছেন, এসইসির সিদ্ধান্তে অনেক সাধারণ বিনিয়োগকারী ভীত হয়ে শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়িয়ে দেন। আর এর প্রভাবেই বাজারে দরপতন ঘটে।
বাজারকে ঝুঁকিমুক্ত রাখার লক্ষ্যে অতিরিক্ত তারল্যপ্রবাহ কমানোর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার এসইসি ঋণ বিতরণ ও ব্যবস্থাপনায় ২০০৬ সালে প্রণীত একটি বিধান পরিপালনে কড়াকড়ি আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়।
এ বিধানে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে তাদের গ্রাহকদের ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সূত্র অনুসরণ করার কথা বলা হয়েছে। এ সূত্র অনুযায়ী, গ্রাহকদের শেয়ারের বাজারমূল্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির প্রকৃত সম্পদমূল্য (এনএভি) যোগ করে দুই দিয়ে ভাগ করলে যে ফল পাওয়া যাবে, সেই অনুপাতে ঋণ দিতে হবে।
তবে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো বলছে, ঋণ বিতরণের এ নিয়ম প্রয়োগযোগ্য নয়।
যোগাযোগ করা হলে মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও আইডিএলসি ফাইন্যান্সের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ খান প্রথম আলোকে বলেন, কোনো ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানেরই এনএভি দেখে ঋণ দেওয়ার মতো সফটওয়্যার নেই। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি কোম্পানির এনএভি ধরে ধরে হিসাব করা বাস্তবসম্মত নয়।
অন্য আরেকটি মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী বলেন, ঋণই যদি নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, তাহলে সরাসরি অনুপাত অর্ধেকে নামিয়ে আনলেই হতো। এ ধরনের জটিল নিয়ম প্রয়োগের কোনো দরকার ছিল না।
আগামী রোববার এসইসির সঙ্গে বৈঠকে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো এ নিয়ম প্রত্যাহারের দাবি জানাবে।
বাজার বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, ঋণ বিতরণ ও ব্যবস্থাপনায় এনএভি হিসাবে নেওয়ায় এখন অনেক কোম্পানিরই সম্পদ পুনর্মূল্যায়নের দিকে ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা বাড়বে। কৃত্রিমভাবে সম্পদ অতিমূল্যায়িত করে এনএভি বাড়িয়ে দেখাতে পারলে শেয়ারের ঋণসুবিধা বেশি পাওয়া যাবে।
উদাহরণ হিসেবে বিশ্লেষকেরা বলেন, সম্প্রতি প্রাইম টেক্সটাইল লিমিটেডের সম্পদ পুনর্মূল্যায়ন করায় শেয়ার প্রতি এনএভি দাঁড়িয়েছে ৬৩২ টাকা। আর গত মঙ্গলবার শেয়ারটির সমাপনী মূল্য ছিল ৫৮১ টাকার মতো। এ হিসাবে নতুন নিয়মে শেয়ারটির বিপরীতে ঋণ পাওয়ার কথা ৬০৬ টাকা। অর্থাৎ কোম্পানিটির শেয়ারে বিনিয়োগের জন্য আগের নিয়মের চেয়ে বেশি হারে ঋণসুবিধা পাওয়া যাবে। এরপর দাম যত বাড়বে, ঋণের হারও তত বাড়বে।
স্বাভাবিকভাবে অন্য কোম্পানিগুলোও এ সুযোগ কাজে লাগাতে চাইবে। এতে শেয়ারবাজার অন্য ধরনের এক ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। এ ধরনের বিধান করার আগে এসইসির এ বিষয়গুলো মাথায় রাখা দরকার ছিল বলে তাঁরা মনে করেন।
বাজার পরিস্থিতি: ডিএসইতে গতকাল সাধারণ মূল্যসূচক আগের দিনের তুলনায় ১২৮ পয়েন্ট বা প্রায় ২ শতাংশ কমে ছয় হাজার ৬৪৯ পয়েন্টে নেমে এসেছে। লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৬৮৫ কোটি টাকার, আগের দিনের চেয়ে যা ২৬১ কোটি টাকা কম।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গতকাল সার্বিক মূল্যসূচক আগের দিনের চেয়ে ৩৩৭ পয়েন্ট কমে ১৯ হাজার ৭৩৪ পয়েন্টে নেমে এসেছে। লেনদেন হয়েছে ১৪৭ কোটি টাকার শেয়ার।
এদিন দুই স্টক এক্সচেঞ্জেই লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ শেয়ারের দামই কমেছে। তবে বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারের দাম কমেছে সবচেয়ে বেশি।

No comments

Powered by Blogger.