ব্যাংককে সেনা ও বিক্ষোভকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ, আহত ১৭১

থাইল্যান্ডে লাল শার্ট পরা থাকসিনপন্থী বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গতকাল শনিবার ব্যাংককে লক্ষাধিক সেনা ও পুলিশ যৌথভাবে দমনাভিযান শুরু করেছে। তাদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক সেনা ও পুলিশ সদস্যসহ কমপক্ষে ১৭১ জন আহত হয়েছে। গতকাল বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষ চলাকালে সেনাবাহিনী রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস ও জলকামান ছুড়েছে। অন্যদিকে বিক্ষোভকারীরাও ইট-পাটকেল ছুড়ে সেনাদের পাল্টা জবাব দিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বিক্ষোভকারীদের রাজধানী ছেড়ে যাওয়ার জন্য ‘চরমপত্র’ দেওয়া হলেও তারা সরকারের পতন না ঘটিয়ে ঘরে ফিরবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। খবর এএফপির।
সেনাবাহিনীর মুখপাত্র সুনসার্ন কায়েওকুমনার্দ বলেছেন, ব্যাংককের বিখ্যাত পর্যটন শহরের খাও সান রোডে অবস্থান নেওয়া বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে তাঁরা সেখানে গতকাল অভিযান শুরু করেন। এ সময় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী এ সময় বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে এবং টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। অন্যদিকে বিক্ষোভকারীরাও তাদের ওপর ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। এ ছাড়া বিক্ষোভকারীরা সেনাদের লক্ষ্য করে গুলিও ছোড়ে। এতে দুই সেনাসদস্য গুলিবিদ্ধ হন। জানা গেছে, আহত ১৭১ জনের মধ্যে ৬৪ জনই সেনা ও পুলিশ সদস্য।
তবে ব্যাংককের প্রধান প্রধান বিপণিকেন্দ্র ও পাঁচতারকা হোটেলগুলো গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্ষোভকারীদের দখলে ছিল। তাদের সেখানে দোকানপাট বন্ধ করে উৎসবমুখর পরিবেশে নেচে-গেয়ে সরকারবিরোধী স্লোগান দিতে দেখা গেছে। ব্যাংকক ছাড়াও উত্তরাঞ্চলীয় চিয়াংমাই শহরেও ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। গতকাল সকালে ব্যাংককে বিক্ষোভকারীরা একটি সেনাঘাঁটিতে জোর করে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করে। কিন্তু জলকামান ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।
সরকারের মুখপাত্র প্যানিতান ওয়াত্তানাইয়াগর্ন বলেছেন, জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে ওই এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, আইন ভঙ্গকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে আইন প্রয়োগ করা ছাড়া তাঁদের সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই। যেসব জায়গায় সাধারণের অবস্থান নিষিদ্ধ করা হয়েছে সেখানে যারাই থাকবে তাদের নিরাপত্তা বাহিনী গ্রেপ্তার করবে।
তবে গতকাল ব্যাংককে এক বিক্ষোভ সমাবেশে ‘লাল শার্ট’ পরা নেতা নাত্তাউত্ সাইকুয়ার বলেছেন, ‘আমি অভিজিেক (প্রধানমন্ত্রী অভিজিত্ ভেজ্জাজিভা) বলতে চাই, আমাদের সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করতে আপনি যেকোনো সময় অভিযান চালাতে পারেন। তবে তাতে কাজ হবে না। পার্লামেন্ট ভেঙে না দেওয়া পর্যন্ত আমরা এখান থেকে একচুলও নড়ব না।’
বিক্ষোভকারীরা তাদের সরকারবিরোধী টেলিভিশন চ্যানেল পিটিভি দখল করলেও সেনাবাহিনী আবার সেটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সেটির সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে। বিরোধী বহু নেতার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলেও এখনো তাদের কাউকে আটক করার খবর পাওয়া যায়নি।
সেনাবাহিনীর একটি ব্যারাকে আশ্রয় নেওয়া প্রধানমন্ত্রী ভেজ্জাজিভা বলেছেন, সরকার বিক্ষোভকারীদের আন্দোলনের কাছে নতি স্বীকার করবে না।
থাইল্যান্ডে ২০০৬ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ত্যাগ করেন। এরপর ২০০৮ সালে সেনাবাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় থাই সংবিধান সংশোধন করে সাধারণ নির্বাচন দেওয়া হয়। থাকসিন সমর্থকেরা ওই সংবিধান সংশোধনকে অবৈধ বলে দাবি করে। ২০০৮ সালে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসার পর থাকসিন দেশে ফেরেন এবং একটি মামলায় আদালত তাঁকে কারাদণ্ড দেন। গ্রেপ্তার এড়াতে সিনাওয়াত্রা আবার দেশ ছাড়েন।
গত মাসে থাইল্যান্ডের সর্বোচ্চ আদালত সিনাওয়াত্রার ১৪০ কোটি ডলারের সম্পদ জব্দ করার আদেশদেন।এ আদেশের প্রতিবাদে তাঁর সমর্থকেরা গত ১৪ মার্চ থেকে রাস্তায় নেমে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু করে।

No comments

Powered by Blogger.