খাবারে ভেজাল-অভিযানে লাভ কতটুকু by আবুল হাসনাত

আবার ভেজালবিরোধী অভিযান। এসব অভিযান চলাকালে কিছুদিন দোকানমালিক বা কোম্পানিগুলো সতর্কতার সঙ্গে খাবারের আইটেমগুলো তৈরি করে মিডিয়া ও কর্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দেওয়ার জন্য, তারপর আবার সেই পুরোনো স্টাইল, খাদ্যে ভেজাল। কিন্তু এর একটা স্থায়ী সমাধান হওয়া দরকার।
বাংলাদেশে ভেজালের পরিমাণ এত বেশি যে যদি কেউ গভীরভাবে জানার চেষ্টা করে, তাহলে আমার ধারণা, তার পক্ষে ডাল-ভাত, শাক-সবজি ছাড়া আর কোনো খাবারই খাওয়া সম্ভব হবে না। যেমন, ফল পাকানোর জন্য অসাধু ব্যবসায়ীরা ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করে, যা ক্যানসারসহ বিভিন্ন জটিল রোগের সৃষ্টি করতে পারে। খাবারের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য বিরিয়ানি, জিলাপি, বেগুনি, পেঁয়াজু, মিষ্টি থেকে শুরু করে বিভিন্ন খাবারে যে রং ব্যবহার করা হয়, তার অধিকাংশই মানুষের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। অসাধু ব্যবসায়ীরা টেক্সটাইল ডাই ব্যবহার করে। এটি ক্যানসারসহ বিভিন্ন জটিল রোগের কারণ হতে পারে। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের জন্য এটা খুবই ক্ষতিকর। সাধারণত ফরমালিন ব্যবহূত হয় মৃত মানুষের শরীরে, যাতে কোনো পচন না ধরে। কিন্তু অনেকে এই বিপজ্জনক ফরমালিন ব্যবহার করে মাছ তরতাজা রাখা ও চকচকে ভাব দেওয়ার জন্য। এই ফরমালিন ক্যানসারসহ বিভিন্ন শ্বাসকষ্টজনিত রোগের জন্ম দিতে পারে। মুড়ি আরও সাদা ও ধবধবে করার জন্য কিছু লোক ইউরিয়া ব্যবহার করে, যা কিডনির জন্য ক্ষতিকর। মোটামুটিভাবে এগুলো আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যের বিষ।
এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় কী? শুধুই ভেজালবিরোধী অভিযান? এভাবে বিশুদ্ধ খাবার, বিশুদ্ধ পানি মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভব নয়। তার জন্য প্রয়োজন কঠোর আইন। গতানুগতিক ১৯৫৯ সালের ‘পিওর ফুড অ্যাক্ট’ দিয়ে আজকের অসাধু ব্যবসায়ীদের ভেজাল রোধ করা যাবে না। যদিও ২০০৫ সালে এই অ্যাক্টের কিছু কিছু ধারা পরিবর্তন করা হয়েছে, কিন্তু তাতেও ভেজাল রোধ করার মতো যথেষ্ট শাস্তির বিধান রাখা হয়নি। এই ধারায় সর্বোচ্চ তিন বছর জেল ও তিন লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। আমরা মনে করি, বর্তমান সময়ের উন্নত প্রযুক্তির বিষ মিশ্রণজনিত ভেজাল রোধ করার জন্য তা মোটেও যথেষ্ট নয়। একটি প্রবাদ রয়েছে, একজন চিকিৎসকের ভুলের কারণে মারা যেতে পারে একজন রোগী, কিন্তু একজন ফার্মাসিস্ট ভুল করলে মারা যাবে শত শত রোগী। তেমনি একটি ভেজালের জন্য অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে হাজার হাজার মানুষ। তাই খাবারের বিভিন্ন আইটেম উত্পাদন, বাজারজাতকরণ ইত্যাদি পর্যবেক্ষণের জন্য বিএসটিআইয়ের পরিবর্তে আলাদা একটি পিওর ফুড কমিশন বা পিওর ফুড ডিরেক্টরেট করা যেতে পারে। এই বিভাগের অধীনে একটি অত্যাধুনিক টেস্টিং ল্যাবরেটরি থাকবে এবং মনিটরিংয়ের জন্য যথেষ্ট জনবল নিয়োগ দিয়ে তাকে শক্তিশালী ও কার্যকর করতে হবে। আইন ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান থাকতে হবে। বিএসটিআইয়ের পক্ষে এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। উল্লেখ্য, বিএসটিআই শুধু খাবার আইটেম নয়, বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিয়াল ও কেমিক্যাল প্রডাক্টের পর্যবেক্ষণ এবং মান নিয়ন্ত্রণ দেখাশোনা করে থাকে। তা ছাড়া বিএসটিআইকে আরও ক্ষমতা দিতে হবে।
>>>ড. আবুল হাসনাত: অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি অ্যান্ড ফার্মাকোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ahasnat99@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.