সালাউদ্দিনের দ্বিতীয় পরিকল্পনা

নতুন একটা ‘প্যাকেজ’ নিয়ে এবার হাজির হতে চান কাজী সালাউদ্দিন। সারা দেশের ফুটবলে আরেকটা জাগরণ আনতে জেলার ফুটবল লিগ, টুর্নামেন্ট, স্কুল ফুটবলসহ আরও কিছু আয়োজন নিয়ে সাজাচ্ছেন এই গুচ্ছ কর্মসূচি।
বাফুফে সভাপতির ভাষায়, ‘এবার আমি সারা দেশের ফুটবলে মনোযোগ দিচ্ছি। এত দিন ছিলাম প্ল্যান “এ” নিয়ে। এখন হাতে নিয়েছি প্ল্যান “বি”।’ পরিকল্পনা ‘এ’ বলতে সাবেক তারকা ফুটবলার বুঝিয়েছেন ঢাকার ফুটবলকে। ‘বি’ হচ্ছে ঢাকার বাইরের ফুটবল।
‘আমি প্রথমে চেয়েছি ঢাকায় নিয়মিত খেলাটা আয়োজন করতে। প্ল্যান “এ”-তে সেটাই আমার প্রথম দায়িত্ব ছিল। এখন প্ল্যান “বি” সাজিয়েছি জেলা লিগ, জেলার ফুটবল, স্কুল টুর্নামেন্ট...নিয়ে। সারা দেশের ফুটবল চাঙা করার একটা একটা প্যাকেজ’—কাল বলছিলেন বাফুফে সভাপতি।
নোয়াখালীতে ২০ মার্চ একটা ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালে প্রধান অতিথি থাকছেন। এই উদাহরণ দিয়ে কাল বললেন, ‘আমি এখন ঢাকার বাইরে যাওয়া শুরু করছি। নিয়মিত ঢাকার বাইরে যাব। এতেই বুঝতে পারেন, ঢাকার বাইরের ফুটবলে উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে আমি তৎপর।’
সালাউদ্দিন যুগে বাফুফে দুটি পেশাদার লিগ, কোটি টাকার সুপার কাপ করেছে। সারা দেশে একটি ক্লাব টুর্নামেন্ট আছে উল্লেখযোগ্য আয়োজনের তালিকায়। ঢাকায় সাফ ফুটবল, এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপ হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরে ঢাকায় সাফ চ্যাম্পিয়নস লিগ (ক্লাব টুর্নামেন্ট) আয়োজন করতে চান, যেটিকে তিনি তাঁর স্বপ্ন বলছেন।
কিন্তু সালাউদ্দিনের চার বছরের মেয়াদকালের প্রায় দুই বছর হলেও ঢাকার জুনিয়র ডিভিশনগুলো বন্ধ হয়ে আছে। পাইওনিয়ার লিগ, দ্বিতীয়-তৃতীয় বিভাগ নেই দুই বছর হতে চলল। পেশাদার লিগের বাইরে থাকা ঢাকার বাকি ক্লাবগুলোকে নিয়ে সিনিয়র ডিভিশন লিগও হচ্ছে না বাফুফের বর্তমান কমিটির সময়ে। বলতে গেলে, তৃণমূল ফুটবলে একটা স্থবিরতা চলছে।
শুধু তো আর পেশাদার লিগই সব নয়। ঢাকার জুনিয়র লিগ দুই বছর ধরে না হওয়ায় নতুন খেলোয়াড় উঠে আসার রাস্তাটা বন্ধই হয়ে গেছে। এই লিগগুলো আয়োজনের জন্য গঠিত ঢাকা মহানগর লিগ কমিটি নিয়ে গোলমাল থাকায় সেটি কাজ করতে পারেনি। অবশেষে নতুন কমিটি করা হয়েছে। আগামী মাসে সিনিয়র ডিভিশন লিগ শুরু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সেই কমিটি।
জুনিয়র ডিভিশন মাঠে না থাকায় সালাউদ্দিনকে অনেক প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। তবে জুনিয়র ডিভিশন মাঠে নামাতে তিনি সহযোগিতা পাননি ঠিকমতো, এমন কথাও চালু আছে ফুটবল অঙ্গনে। সবাই পরামর্শ দেয়, কিন্তু কাজের বেলায় সাহায্য পাওয়া যায় না—পরোক্ষে এমন কথাই বলছেন বাফুফে সভাপতি। ‘বলা অনেক সহজ। কিন্তু করা কঠিন। সবাই তো বলেই খালাস’—উপলব্ধি সালাউদ্দিনের।
বাইরে থেকেও অনেকের ধারণা, সালাউদ্দিন সহযোগিতা পান না ঠিকমতো। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আলফাজ আহমেদ বলছেন, ‘এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে সবকিছুই একা করতে হচ্ছে সালাউদ্দিন ভাইকে। তিনি একা কিছু করতে পারবে না। সেটা সম্ভব নয়।’
সম্ভব-অসম্ভব যা-ই হোক, এই সময়ে সারা দেশে সীমিত আকারে স্কুল ফুটবল হয়েছে, হয়েছে ঢাকা মহানগর স্কুল টুর্নামেন্টও। কিন্তু একাডেমির অভাবে প্রতিভাবানদের দীর্ঘ মেয়াদে প্রশিক্ষণ ও বাছাই করা কিশোরদের বৃত্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি থাকলেও এখনো সেসব বাস্তবায়ন করা যায়নি।
সালাউদ্দিন তাই শিগগিরই সারা দেশে বড় পরিসরে স্কুল টুর্নামেন্ট করতে চান, ‘উপজেলা, জেলা, বিভাগ এবং কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ধাপে ধাপে স্কুল টুর্নামেন্ট হবে। সম্ভাব্য খরচ ১২-১৩ কোটি টাকা। এটা করতে পারলে অনেক প্রতিভাবান কিশোর পাব আমরা।’ এটি শেষ পর্যন্ত তিনি করতে পারবেন? সালাউদ্দিনের দৃঢ় জবাব, ‘করবই। করতেই হবে।’
এসব পরিকল্পনাকে স্বাগত জানালেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক জুয়েল রানা, ‘এগুলো ভালো পরিকল্পনা। তবে কথা হচ্ছে স্কুল টুর্নামেন্টে খেলার পর ওই ছেলেরা কোথায় খেলবে। জুনিয়র ডিভিশনগুলো বন্ধ। এগুলো চালু করতে হবে। সালাউদ্দিন ভাই একা কিছু পারবে না, সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’

No comments

Powered by Blogger.