পিসিএল শেষ পর্যন্ত হলেই হয়

দ্বিতীয় চট্টগ্রামখ্যাত সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠেয় বন্দর নগরের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অংশ নিতে ইমরুল কায়েস ও জুনায়েদ সিদ্দিক গতকাল ভিসা ছাড়াই ঢাকা থেকে শারজা উড়াল দেন। কিন্তু ‘অন অ্যারাইভাল’ ভিসার আশায় এসে দারুণ ঝামেলায় পড়েন বিমানবন্দরে। পরে অনেক চেষ্টায় তাঁদের শারজায় ঠাঁই হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার ভিসা ছাড়া লাল পাসপোর্ট নিয়ে এসে দুই ক্রিকেটারের মতো দীর্ঘক্ষণ ধরে দুবাই বিমানবন্দরে আটকা পড়েন বাংলাদেশের ছয় সাংসদ।
এগুলো শারজায় পিসিএলের সাংগঠনিক সমন্বয়হীনতা ও অব্যবস্থাপনার চিত্র। তাই পিসিএল নিয়ে জটিলতা এখনো কাটেনি। ভিসা জটিলতায় এটিএন বাংলার কলাকুশলীরা তো বটেই, শারজা আসতে পারেননি খোদ ব্যাট-বল নিয়ে লড়াই করার নায়কেরা। ভিসা ছাড়াও রয়েছে বহুমুখী সংকট।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ভিসা জটিলতাসহ নানা সমন্বয়হীনতায় পিসিএলের উদ্বোধন শুক্রবার থেকে পিছিয়ে রোববার করা হয়। এখন পুনর্নির্ধারিত দিনেও এটির আলোর মুখ দেখাটা প্রশ্নসাপেক্ষ। মুখ দেখলেও তা সরাসরি সম্প্রচারিত হবে না এটা বলেই দেওয়া যায়।
ভিসা জটিলতা কাটেনি, তাই বলে টুর্নামেন্ট আরেক দফা পেছানোর কথাও ভাবতে পারছেন না আয়োজকেরা। এতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে শারজা স্টেডিয়ামের পরবর্তী সূচি। এ মাঠে আগামী ৫ এপ্রিল থেকে ইংল্যান্ড-পাকিস্তান সিরিজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ম্যানেজার আরশাদ আহমেদ খান। তিনি জানান, ‘পিসিএল অবশ্যই ৪ এপ্রিলের মধ্যে শেষ করতে হবে। ৫ তারিখ থেকে ইংল্যান্ড-পাকিস্তান সিরিজের জন্য মাঠ ছেড়ে দিতে হবে।’ তবে পিসিএলের শুরু করা নিয়ে অতটা আত্মবিশ্বাসী শোনায়নি তাঁর কণ্ঠ, ‘ওরা আমাকে রোববার থেকে টুর্নামেন্ট শুরু করার বিষয়টি জানিয়েছেন।’
আয়োজক কমিটির অগ্রবর্তী দলের সদস্য আবুল হাশেমও বিষয়টি স্বীকার করেছেন। কিন্তু রোববার থেকে টুর্নামেন্ট শুরু হলে এর সরাসরি সম্প্রচারের সম্ভাবনা ক্ষীণতর। কারণ এটিএন বাংলার কলাকুশলীদের সবাই এখনো ভিসা পাননি। এটা নিয়ে পিসিএল কমিটির সঙ্গে এটিএনের সম্পর্ক শীতল হয়ে পড়েছে। আর চাইলেই আজ শনিবারের মধ্যে এটিএনের সব কলাকুশলীকে শারজায় আনাও সম্ভব নয়। কারণ শুক্র ও শনিবার আমিরাতে সাপ্তাহিক ছুটি। ভিসা দেওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ থাকে। তাই তাদের যদি ভিসা নিতে হয় রোববার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এই কারণেই আবারও টুর্নামেন্ট পেছানোর কথা ভাবছিলেন আয়োজকেরা।
অথচ তাঁদের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ অনেকে ভিসা নিয়ে এখন দুবাই, শারজা প্রমোদ ভ্রমণ করছেন। এই তালিকায় রাজনীতি-সংশ্লিষ্ট লোকজন ৮৫ জন, ক্রীড়াসংগঠক দেড় শতাধিক। এ কারণেই খেপেছে এটিএন বাংলা।
এ ছাড়া এখনো দলগুলোর সব ক্রিকেটার শারজা পৌঁছাতে পারেননি। পাইরেটস অব চিটাগংয়ের ৭ জন, চিটাগং টাইগারসের ৫ জন, মোহামেডানের এক ক্রিকেটার এখনো ভিসা পাননি।
এর আগে বৃহস্পতিবার একই ধরনের জটিলতায় পড়েন কয়েকজন সাংসদ। এ তালিকায় রয়েছেন শামসুল হক, চেমন আরা বেগম, নূরে আলম চৌধুরী, জাহিদ আহসান, মাহবুবুর রহমান, সাগুফতা ইয়াসমিন, মো. শাহ আলম প্রমুখ। সঙ্গে তাঁদের পরিবারও। এ রকম ঝামেলা মাথায় নিয়ে তাঁরা পিসিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছেন। পরে বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতায় তাঁদের বিশেষ ব্যবস্থায় ভিসার ব্যবস্থা করলে শারজায় পা রাখা সম্ভব হয় তাঁদের।
টুর্নামেন্টের ভবিষ্যত্ নিয়ে শারজায় ইতিমধ্যে আসা ক্রিকেটারদের মধ্যেও নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এতে তাঁদের স্বাভাবিক খেলায় প্রভাব পড়বে বলে অনেক ক্রিকেটার মন্তব্য করেছেন। তাঁরাও ঘুরেফিরে সময় কাটাচ্ছেন।
একই শঙ্কা দ্বিতীয় চট্টগ্রামখ্যাত আরব আমিরাতের প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যেও। দেশের ক্রিকেটারদের দেখার অপেক্ষায় থাকা দুবাইয়ের এমদাদ হোসেন বলেন, ‘এখানে চট্টগ্রামের লোক অনেক। আমরা টুর্নামেন্টটি হবে জেনে খুশি হয়েছিলাম। এখন নাকি পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। শেষ পর্যন্ত কী হয় কে জানে?’

No comments

Powered by Blogger.