ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো হাজারো মানুষ

হাইতির রাজধানী পোর্ট অব প্রিন্সে ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো আটকা পড়ে আছে হাজার হাজার মানুষ। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামের অভাবে পরিকল্পিতভাবে উদ্ধারকাজ শুরুই হয়নি। বিভিন্ন দেশ থেকে ত্রাণ এবং অন্যান্য সাহায্য রাজধানী পোর্ট অব প্রিন্সে পৌঁছালেও যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় তাও পৌঁছাচ্ছে না দুর্গত মানুষের হাতে। ত্রাণের অপেক্ষায় থেকে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে অসহায় মানুষ। মৃতদেহ স্তূপ করে রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে কোথাও কোথাও বিক্ষোভও করেছে তারা। এদিকে হাইতি সরকারের বরাত দিয়ে রেডক্রস জানিয়েছে, ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০ হাজার হতে পারে।
উদ্ধার তত্পরতা ব্যাহত
ক্যারিবীয় অঞ্চলের অন্যতম দরিদ্র দেশ হাইতিতে দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য তেমন কোনো অবকাঠামো নেই। দুই পাশ থেকে ভবন ধসে পড়ে প্রায় সব রাস্তা বন্ধ হয়ে আছে। বিভিন্ন দেশ থেকে উদ্ধারকারী দল পোর্ট অব স্পেনে পৌঁছালেও তারা শহরের বেশির ভাগ এলাকায় যেতে পারছে না। এতে উদ্ধার তত্পরতা কার্যত স্থবির হয়ে আছে। ভূমিকম্পের পর তৃতীয় রাতও খোলা আকাশের নিচে রাস্তার ওপর কাটিয়েছে বেশির ভাগ মানুষ।
রাস্তার ওপর স্তূপ করে রাখা হয়েছে মৃতদেহ। বুলডোজারে করে সেগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
পোর্ট অব প্রিন্স থেকে বিবিসির প্রতিনিধি এন্ডি গ্লাসার জানিয়েছেন, ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে আটকে পড়া মানুষের যে আকুতি আগে শোনা যাচ্ছিল, তাও এখন আস্তে আস্তে কমে আসছে।
বিভিন্ন উদ্ধারকারী সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধারে তারা সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বৃহস্পতিবার বলেছেন, কিছু মার্কিন উদ্ধারকারী ইতিমধ্যে পোর্ট অব প্রিন্সে পৌঁছেছে এবং আরও অনেককে পাঠানো হচ্ছে।
ভারী সরঞ্জাম এবং উদ্ধারকাজে সহযোগিতার জন্য প্রশিক্ষিত কুকুর নিয়ে একটি ব্রিটিশ উদ্ধারকারী দল হাইতিতে পৌঁছেছে। এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশ এবং কানাডা, চীন, রাশিয়া ও লাতিন আমেরিকার অনেক দেশ থেকে উদ্ধারকারী দল ও সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে।
মৃতের সংখ্যা
রেডক্রস জানিয়েছে, ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০ হাজার হতে পারে। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেডক্রস অব অ্যান্ড রেডক্রিসেন্টের আমেরিকা অঞ্চলের প্রধান জ্যাভিয়ার ক্যাসেলানোস গত বৃহস্পতিবার বলেন, ‘হাইতি সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে, মৃতের সংখ্যা প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার হতে পারে।’ তিনি জানান, হাইতির মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ অর্থাত্ প্রায় ৩০ লাখ মানুষ ভূমিকম্পে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
হাইতির প্রেসিডেন্ট রেনি প্রিভাল বলেছেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে সাত হাজার মৃতদেহ গণকবর দিয়েছি।’
সাহায্যে ভরে গেছে
বিমানবন্দর
মার্কিন বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিভিন্ন দেশ থেকে পাঠানো সাহায্যে পোর্ট অব প্রিন্সের বিমানবন্দর ভর্তি হয়ে গেছে। সেখানে বিমান ওঠানামার জায়গা নেই। তাই এ মুহূর্তে সাহায্য না পাঠানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের প্রতি আহ্বান জনিয়েছে হাইতি।
মার্কিন কেন্দ্রীয় বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের এক মুখপাত্র বৃহস্পতিবার জানান, একটি সামরিক ও ১০টি বেসামরিক বিমান পোর্ট অব প্রিন্সের বিমানবন্দরে অবতরণের জন্য অপেক্ষা করছে। অন্য বিমানগুলো বন্দর ত্যাগ করার পর সেগুলো অবতরণ করবে।
মার্কিন বাহিনীর দক্ষিণাঞ্চলীয় কমান্ডের প্রধান জেনারেল ডগলাস ফ্রাসের জানিয়েছেন, বিমানবন্দর সচল করতে মার্কিন বাহিনী আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে।
পুনর্গঠন তহবিল সংগ্রহে
আন্তর্জাতিক সম্মেলন
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজি জানিয়েছেন, হাইতি পুনর্গঠনের উদ্দেশ্যে তহবিল সংগ্রহের জন্য যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ব্রাজিলসহ অন্যান্য দেশকে নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করা হবে। হাইতি কানাডার সাবেক উপনিবেশ।
কানাডার প্রধানমন্ত্রীর এক মুখপাত্র বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, ওই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেবে কানাডা।
হাইতির জন্য তাত্ক্ষণিকভাবে ১০ কোটি মার্কিন ডলার ত্রাণ সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ওবামা। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, দীর্ঘমেয়াদি পুনর্গঠন কাজে আগামী বছরগুলোতে সাহায্যের পরিমাণ বাড়ানো হবে। এএফপি, এপি, বিবিসি ও আল জাজিরা।

No comments

Powered by Blogger.