ভেজাল সারে বিপন্ন প -দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক

চলতি মৌসুমে যখন ধানের বাম্পার ফলন হচ্ছে তখন বাজারে ভেজাল সার বিক্রির খবরটি উদ্বেগজনক। প্রথম আলোর লক্ষ্মীপুরের রায়পুর প্রতিনিধির পাঠানো খবরে জানা গেছে, ভেজাল সারের কারণে স্থানীয় সয়াবিন কৃষকেরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। উপজেলায় প্রতিবছর ১৫০ থেকে ২০০ কোটি টাকার সয়াবিন উত্পাদিত হলেও গত বছর অনেক কৃষক লাভ করা দূরে থাক, খরচই তুলে আনতে পারেননি। বাজার থেকে টিএসপি ও এমওপি নামের যে সার তাঁরা কিনেছেন, তা ছিল ভেজাল।
একশ্রেণীর সার ব্যবসায়ী বাড়তি মুনাফার জন্য এমওপি বা মিউরেট অব পটাশ সারে ইটের গুঁড়ো, বালু ও রং মিশিয়ে থাকে। লাল দানাযুক্ত এই সারে ভেজাল দেওয়া সহজ। তা ছাড়া টিএসপি সারের সঙ্গে কম দামের এফএমপি সার মিশিয়ে বিক্রি করা হয়। ৫০ কেজির এক বস্তা টিএসপির দাম ৮০০ থেকে ১১০০ টাকা, অন্যদিকে প্রতি বস্তা এফএমপি বিক্রি হয় ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়। এই অপতত্পরতা বন্ধে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এফএমপি আমদানি বন্ধ করলেও এখনো প্রচুর সার আছে গুদামে। অসাধু ব্যবসায়ীরা নানা কৌশলে টিএসপি সারের সঙ্গে সেই সার মিশিয়ে বাজারে বিক্রি করে থাকে। সাধারণ কৃষকের পক্ষে এই ছলচাতুরী ধরা কঠিন। ভারত থেকে চোরাই পথে আসা টিএসপির সঙ্গে ভেজাল মেশানোর ঘটনায় ডিলারদের সরাসরি দায়ীও করা যাচ্ছে না।
সব মিলিয়ে সার নিয়ে রমরমা ভেজাল-বাণিজ্য চললেও এর প্রতিকারে কেউ এগিয়ে আসছে না। কৃষি কর্মকর্তারা সারের নমুনা পরীক্ষাগারে পাঠিয়ে কর্তব্য শেষ করেন। তাঁদের অজানা নয় যে, ভেজালকারীদের হাত অনেক লম্বা। ফলে যেকোনো ‘পরীক্ষায়’ পাস করে যায় তারা।
জমিতে ভেজাল সার কৃষক ও জমি উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর। এ ব্যাপারে কৃষি অধিদপ্তর, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নীরবতা রহস্যজনক। কৃষি ও কৃষকের জীবন নিয়ে এভাবে ছিনিমিনি খেলা চলতে পারে না। সারে ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশে যেন কোনো ভেজাল সার বিক্রি হতে পারে, তা নিশ্চিত করা একান্ত প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.