অন্ধ্র প্রদেশের অখণ্ডতার দাবিতে কংগ্রেসের সাংসদের অনশন

অখণ্ড অন্ধ্র প্রদেশ রাজ্য টিকিয়ে রাখতে গতকাল মঙ্গলবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশন শুরু করেছেন রাজ্যের বিজয়াওয়াদা থেকে নির্বাচিত কংগ্রেস দলীয় পার্লামেন্ট সদস্য (এমপি) এল রাজাগোপাল। বিজয়াওয়াদায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সোমবার হায়দরাবাদে অনশন শুরু করতে চেয়েছিলাম আমি। কিন্তু আমাকে বাধা দেওয়া হয়েছে। তাই আজ এখানে অনশন শুরু করেছি আমি।’ সোমবার হায়দরাবাদ বিমানবন্দরে নামার পর তাঁকে আটক করে স্থানীয় পুলিশ। পরে থানার সামনে দলীয় সমর্থকেরা অবস্থান ধমর্ঘট করলে তাঁকে বিজয়াওয়াদায় স্থানান্তর করা হয়।
রাজ্যের বেশির ভাগ মানুষই অন্ধ্র প্রদেশের বিভক্তি চায় না উল্লেখ করে রাজাগোপাল বলেন, রাজ্যটি বিভক্ত করা হবে না—এমন বিবৃতি দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি। বিধানসভার অধিবেশনে তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠনের প্রস্তাব তোলা উচিত ছিল জানিয়ে রাজাগোপাল আরও বলেন, গতকালই প্রস্তাবটি তোলা উচিত ছিল। বিধানসভার ২৯৪ জন সদস্যের মধ্যে ২২৫ জনই তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠনের বিরোধিতা করছেন। তাই প্রস্তাবটি নাকচ হয়ে যেত এবং সব কিছুই পরিষ্কার হয়ে যেত। তেলেগু দেশম পার্টির (টিডিপি) প্রধান এন চন্দ্রবাবু নাইডু ও অভিনেতা থেকে রাজনীতিক হওয়া চিরঞ্জীবীকে তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠনের প্রস্তাব সমর্থন না করারও আহ্বান জানান তিনি।
অখণ্ড অন্ধ্র প্রদেশ টিকিয়ে রাখার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য গঠিত ‘জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’ (জেএসি) এ আন্দোলনে রাজাগোপালের নেতৃত্বের প্রশংসা করেছে। কমিটি গতকাল বিজয়াওয়াদায় জাতীয় মহাসড়ক অবরোধ করার কর্মসূচি ঘোষণা করে।
এদিকে একই দাবিতে ওই এলাকায় টিডিপির বিধায়ক ডি উমামেশওয়ারা রাও ও অন্যান্য বিধায়কদের অনশন তৃতীয় দিনে পৌঁছেছে। কেন্দ্রের ওপর চাপ বাড়াতে লোকসভার সদস্যদের পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন রাও।
এদিকে তেলেঙ্গানা সংকট নিয়ে ক্ষমতাসীন কংগ্রেস জানিয়েছে, অন্ধ্র প্রদেশ রাজ্যের বিধানসভায় এ ব্যাপারে প্রস্তাব অনুমোদন হওয়ার পরই কেবল আলাদা তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠন করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। গতকাল নয়াদিল্লিতে দলীয় মুখপাত্র শাকিল আহমেদ বলেন, অন্ধ্রের বিধানসভায় আলাদা তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে কংগ্রেস।
এর আগে তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির (টিআরএস) প্রধান কে চন্দ্রশেখর রাও বলেছিলেন, আলাদা রাজ্য গঠনের জন্য অন্ধ্র প্রদেশ রাজ্যের বিধানসভায় কোনো প্রস্তাব অনুমোদন করার দরকার নেই। কেন্দ্রীয় সরকারেরই এ ব্যাপারে পর্যাপ্ত ক্ষমতা রয়েছে। তারা একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে আলাদা রাজ্য গঠন করতে পারে এবং এ ব্যাপারে তাদের সিদ্ধান্ত রাজ্যের বিধানসভাকে জানিয়ে দিলেই চলে।
কংগ্রেস নেতারা অবশ্য স্বীকার করেছেন, আলাদা তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠন করার ব্যাপারে দলে মতৈক্য ছিল না। শাকিল আহমেদ জানান, তেলেঙ্গানা অঞ্চলের দলীয় নেতারা এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও রয়ালাসিমা ও উপকূলীয় অঞ্চলের নেতারা এর বিরোধিতা করছেন। বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী দলীয় পদক্ষেপ ঠিক করতে গতকাল সকালে বৈঠক করেছেন ভারতীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি ও আইনমন্ত্রী ভিরাপ্পা মোইলি।
তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠন করার বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত ঘোষণার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরতে গিয়ে শাকিল আহমেদ বলেন, সরকার ওই দিন এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিল। কারণ, আমরণ অনশনে থাকা টিআরএস প্রধানের শারীরিক অবস্থার খুবই অবনতি হয়েছিল।

No comments

Powered by Blogger.