গবেষণা থেকে নীতিনির্ধারণ -দরিদ্রবান্ধব প্রবৃদ্ধি অর্জন by ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ

মাঝারি আয়ের দেশগুলোর অন্তর্ভুক্ত হতে হলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা আরও ব্যাপক ও নিবিড়ভাবে গবেষণাভিত্তিক হওয়া উচিত। অর্থনীতিবিদদের সরকারি নীতিনির্ধারণে শুধু অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণে নিজেদের সীমাবদ্ধ না রেখে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক-ব্যবস্থাকেও বিবেচনায় রাখতে হয়। অর্থনীতিবিদেরা যদি নীতিনির্ধারণে মতামত ব্যক্ত করা থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখেন, তাহলে এর ফলাফল হবে মারাত্মক। সরকারের প্রতিশ্রুতি মোতাবেক একটি উচ্চ, টেকসই ও দারিদ্র্য দূরীকরণে সহায়ক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের কথা বিবেচনায় রেখে গবেষণার জন্য কিছু ভালো বিষয়বস্তুর প্রতি আমরা মনোযোগ দিতে পারি।
১. সুশাসন ও প্রবৃদ্ধি: গত ২৫ বছরে বাংলাদেশের নিম্নমানের সুশাসনের তুলনায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি ছিল অনেক সন্তোষজনক। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সুশাসনের হালহকিকত সম্পর্কে আমাদের আরও অনেক বিচার-বিশ্লেষণ করতে হবে।
২. নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরকারি নিয়ন্ত্রণ: প্রকৃতপক্ষে আমাদের বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারের গতি-প্রকৃতির ব্যাপারে পরিপূর্ণ ধারণা না থাকলে সরকারি নিয়ন্ত্রণ আরোপ খুব বেশি কার্যকর হবে না।
৩. সরকার ও বেসরকারি এনজিও অংশীদারি : যেহেতু বাংলাদেশে অসংখ্য এনজিও ব্যাপকভাবে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কার্যক্রমে জড়িত আছে, সেহেতু সরকারকে তাদের সঙ্গে অংশীদারির প্রকৃতি নিয়ে বিভিন্ন বিকল্প ব্যবস্থা বিবেচনায় আনতে হবে। সেই সঙ্গে অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারি পরিপূর্ণ কার্যকারিতা নিশ্চিত সাধনের উপায় নিয়ে চিন্তা করা উচিত।
৪. রপ্তানি অবস্থা: বাংলাদেশ প্রাথমিকভাবে একটি পাট রপ্তানিকারক দেশ থেকে পোশাক রপ্তানিকারক দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের পোশাকশিল্প এখন অনেক সীমাবদ্ধতায় নিমজ্জিত। তাই সার্বিকভাবে বাংলাদেশের রপ্তানি অবস্থা উন্নয়নে বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে বেশ কিছু বিষয় আমাদের গভীর গবেষণার আওতায় আনতে হবে।
৫. জনসংখ্যার ঘনত্ব, নগরায়ণ ও পরিবেশগত টেকসই উন্নয়ন: জায়গাজমির স্বল্পতা ও জনসংখ্যার ঘনত্ব বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সারা পৃথিবীতে একটি অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জ। এ সম্পর্কিত অনেক সমস্যার সমাধান আমাদের করতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের যে পরিচিতি, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বৈশ্বিক উষ্ণতা এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত জলবায়ুগত পরিবর্তন ও সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধির করুণ পরিণতি। এ ব্যাপারে আমাদের গবেষণা করতে হবে।
৬. দারিদ্র্য দূরীকরণে ব্যষ্টিক-সামষ্টিক সমন্নয়সাধন: দারিদ্র্য দূরীকরণ সম্পর্কিত বিভিন্ন কার্যক্রমের অভিজ্ঞতা থেকে ভবিষ্যতে দরিদ্রবান্ধব প্রবৃদ্ধি অর্জনে সর্বস্তরের নীতিনির্ধারণের সঙ্গে থানা স্তরে নিয়ন্ত্রণ আরোপে সমন্নয়সাধনে মনযোগ দিতে হবে।
এ ছাড়া সামাজিক উন্নয়ন সূচকে উন্নতি এবং সামাজিক রূপান্তরের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে অবগত হওয়ার ব্যাপারেও ব্যাপক গবেষণার সুযোগ রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.