আঁতুড়ঘরকে ভুলে গেল যে টুর্নামেন্ট

আইসিসিরই দাবি, এটি বিশ্বকাপের পর ওয়ানডের সেরা টুর্নামেন্ট। তবে ঢাকায় আইসিসি নকআউট টুর্নামেন্ট বা মিনি বিশ্বকাপ নামে আত্মপ্রকাশের ১১ বছর পরও প্রশ্নটা থেকেই গেছে। এটি কি যথার্থই বৈশ্বিক? আইসিসির কোষাগার ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তুললেও ক্রিকেট বিশ্বায়নের নীতি তো এতে প্রতিফলিত নয়! তাই যদি হতো তাহলে আইসিসির দুই পূর্ণ সদস্য বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ে এই টুর্নামেন্টে এবার ‘ব্রাত্য’ হতো না।
বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়েকে সুযোগ দেওয়া হয়নি ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের দোহাই পেড়ে। এরা যে সেরা আট দলের বাইরে। কিন্তু জোহানেসবার্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলা দেখাটা অনেকের জন্যই হবে হতাশার। ফ্লয়েড রেইফারের এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ যখন মাঠের মধ্যে নিগৃহীত হবে, তখন হতাশা থেকে জন্ম নেবে বিশাল প্রশ্ন। যে বাংলাদেশ কদিন আগেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদের মাঠে ‘ধবলধোলাই’ করে এল, তারা নেই কেন? উত্তর একটাই, বাংলাদেশের ওয়ানডে র্যাঙ্কিং ৯!
মাশরাফি, সাকিব, তামিমদের বাংলাদেশ দর্শক সেজে দীর্ঘশ্বাস ফেলবে ঘরে বসে। কিন্তু টুর্নামেন্টে খেলেও হাহাকারে দীর্ণ হবে পাকিস্তানের অন্তর। পরশু থেকে শুরু হতে যাওয়া এই টুর্নামেন্টটা যে হওয়ার কথা ছিল পাকিস্তানেই। নিরাপত্তার অভাবেই আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিকে নিয়ে তুলেছে দক্ষিণ আফ্রিকায়।
পাকিস্তানের দুঃখ আছে আরও একটি। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে যে টুর্নামেন্টের যাত্রা শুরু, সেটি ফরম্যাট আর চরিত্র বদলে এরই মধ্যে ৫টি আয়োজন করে ফেলেছে পাঁচটি আসর। ৫ বারে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ছয়টি দল। অর্থাত্ এবার র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ আটটি দলের এই টুর্নামেন্টে (বাংলাদেশ র্যাঙ্কিংয়ে নয় নম্বরে থাকায় আমাদের স্রেফ দর্শক হয়ে থাকতে হচ্ছে) কেবল পাকিস্তান আর ইংল্যান্ডের এখনো এই ট্রফি জেতা হয়নি। বাকি ছয়টি দলই হাতে তুলেছে রুপালি স্তম্ভের ওপর সোনালি বলের এই ট্রফি।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার, ক্ষয়িষ্ণু ওয়েস্ট ইন্ডিজ আবার এই টুর্নামেন্টে বেশ সফল—দুবার রানার্সআপ, একবার চ্যাম্পিয়ন! প্রথম আসরে ঢাকায় রানার্সআপ হয়েছিল ব্রায়ান লারার ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২০০৪ সালে স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে হারিয়ে তারা জিতে নিয়েছিল শিরোপা। আর সর্বশেষ ২০০৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ফাইনালে হেরেছিল অস্ট্রেলিয়ার কাছে।
স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার অভিজ্ঞতাটা আবার মিশ্র। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তনের পর থেকে বরাবরই সমীহ জাগানো দল তারা। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের বড় শিরোপা বলতে বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাওয়া হানসি ক্রনিয়ের দলের ১৯৯৮ মিনি বিশ্বকাপ শিরোপাটাই। সেই দলটির দুই সদস্য জ্যাক ক্যালিস আর মাখায়া এনটিনি এখনো খেলছেন। এই এক দশকের বেশি সময়ে তাঁরা সাক্ষী হয়েছেন, কীভাবে প্রতিটি বড় টুর্নামেন্টে ফেবারিটের তকমা সেঁটে শুরু করেও চাপের মুখে বারবার দক্ষিণ আফ্রিকা ভেঙে পড়ে। দলটার নামই তাই হয়ে গেছে ‘চোকার’।
অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথকে তাই বলতে হলো, ‘যখনই আমরা কোনো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ হেরে যাই, চোকার শব্দটা উচ্চারিত হয়। তবে গত কয়েক বছরে আমাদের উন্নতির গ্রাফ কিন্তু ছিল ঊর্ধ্বমুখী। দল আরও ভালো, আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে।’ দক্ষিণ আফ্রিকাকে অবশ্য তাতিয়ে দিয়েছে আইসিসির চূড়ান্ত পুরস্কারের তালিকায় তাদের কারোরই নাম থাকার বিষয়টি।
‘বি’ গ্রুপে প্রোটিয়াদের সঙ্গী হচ্ছে ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড আর শ্রীলঙ্কা। ইংল্যান্ড আর নিউজিল্যান্ডের যে দশা, তাতে এই গ্রুপ থেকে শ্রীলঙ্কা আর দক্ষিণ আফ্রিকার সেমিফাইনাল প্রায় নিশ্চিত। নিজেদের মাটিতে ৭-০ ব্যবধানে ধবলধোলাইয়ের লজ্জার সামনে ইংল্যান্ড। আর কমপ্যাক কাপে ব্যর্থতার ধারা দক্ষিণ আফ্রিকাতেও টেনে এনে স্থানীয় দল ওয়ারিয়র্সের কাছে হেরেছে নিউজিল্যান্ড।
‘এ’ গ্রুপ কঠিনই হয়েছে। এখানে মুখোমুখি হবে অস্ট্রেলিয়া, ভারত, পাকিস্তান আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গ্রুপ পর্বে মোট ছয়টি করে ম্যাচ। ‘এ’ গ্রুপের সেরা দুই দল আর ‘বি’ গ্রুপের সেরা দুই দল নিয়ে হবে সেমিফাইনাল। এর ফাইনাল। মোট ১৪ দিনে ১৫ ম্যাচের এই টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে মঙ্গলবার মুখোমুখি হচ্ছে শ্রীলঙ্কা আর দক্ষিণ আফ্রিকা।

No comments

Powered by Blogger.