গ্লোবালটাইমস-এর তালিকা আধুনিক চীন গড়ায় ভূমিকা রেখেছিলেন নেহরু ও রবীন্দ্রনাথ

আধুনিক চীনের বিবর্তনে স্মরণীয় ভূমিকা রাখা ৬০ জন গুণী বিদেশি ব্যক্তিত্বের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র দ্য গ্লোবাল টাইমস। ওই তালিকায় অন্যান্যের মধ্যে রয়েছেন ভারতের প্রখ্যাত রাজনীতিক জওহরলাল নেহরু ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৯৬২ সালে ভারত-চীন যুদ্ধের সময় জওহরলাল নেহরু ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ওই তালিকায় নেহরুর নাম সংযোজনের ফলে চীন-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কে ১৯৬২-এর সীমান্ত সংঘর্ষের সময় যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল, এখন সেটা দূর হবে বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক।
আগামী ১ অক্টোবর চীনের জাতীয় বিপ্লব দিবসের প্রাক্কালেদ্য গ্লোবাল টাইমস ওই তালিকা প্রকাশ করল। পাঠক জরিপের মাধ্যমে ওই তালিকাটি তৈরি করা হয়েছে বলে টাইমস জানিয়েছে।
স্বাধীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এবং তত্কালীন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী চৌ এন লাই পঞ্চাশের দশকে ‘চীন-ভারত ভাই ভাই’ নীতির প্রবক্তা ছিলেন। ওই নীতিতে সে সময় দুই দেশের মধ্যে চমত্কার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সূচনা হয়। কিন্তু ১৯৬২ সালের সীমান্তবিরোধ নিয়ে সংঘর্ষের পর দুই দেশের সম্পর্কে শীতলতা চলে আসে। তবে আধুনিক চীনের বিবর্তনে অবদান রাখা ৬০ বিদেশি গুণীর তালিকায় নেহরুর নাম সংযোজন এখন ভারত-চীন সম্পর্কে উষ্ণতার হাতছানি কি না, তা অবশ্য পরিষ্কার করেনি টাইমস।
বেইজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জং ইয়াওর উদ্ধৃতি দিয়ে গ্লোবাল টাইমস জানায়, নেহরু, মার্শাল টিটো এবং হো চি মিনের মতো নেতারা চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ওই তালিকায় ঠাঁই পাওয়া একমাত্র কবি হচ্ছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ওই তালিকার একাদশ এবং নেহরু রয়েছেন উনিশতম স্থানে। অন্য এশীয়দের মধ্যে ওই তালিকায় ঠাঁই পেয়েছেন ভিয়েতনামের অবিসংবাদিত নেতা হো চি মিন, বিশ্বখ্যাত ইলেকট্রনিকসামগ্রী নির্মাতা প্রতিষ্ঠান প্যানাসনিকের জনক কনোসুকে মাতসুশিতা, সিঙ্গাপুরের রাজনীতিক লি কাউন ইউক এবং জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুনিচিরো কোইজুমি।
তবে ওই ৬০ জন গুণীর তালিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে কেন রাখা হয়েছে গ্লোবাল টাইমস সে ব্যাপারে ব্যাখ্যা দেয়নি। তবে রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন লেখা চীনা ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এসব লেখা দেশটির বড় বড় গ্রন্থাগারেও পাওয়া যায়। এর পরও ১৯২৪ সালে রবীন্দ্রনাথ তাঁর বেইজিং সফরকালে বিরূপ পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলেন।
গ্লোবাল টাইমস-এর ওই তালিকাকে তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ভাগে রয়েছেন নিউটনের মতো বিজ্ঞানী-দার্শনিকেরা, যাঁদের মাধ্যমে মানবজাতি আলোকিত হয়েছে। দ্বিতীয় ভাগে রয়েছেন সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার এবং জাপানি প্রধানমন্ত্রী কাকুয়ে তানাকার মতো বিশ্বনেতারা, যাঁরা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে চীনের গুরুত্ব বাড়াতে অবদান রেখেছেন। তৃতীয় ভাগে রয়েছেন এমন কয়েকজন বিদেশি ব্যক্তিত্ব, যাঁদের মাধ্যমে চীনের সামাজিক ক্ষেত্রে আধুনিকতার সূচনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস এবং সদ্য প্রয়াত পপসম্রাট মাইকেল জ্যাকসন।

No comments

Powered by Blogger.