কায়রোয় গড়ে উঠছে ‘ছোট্ট গাজা’ by শিরিন ফালাহ সাব
ইসরায়েলি বোমা হামলায় নিজেদের ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর তাঁরা খান ইউনিসে আত্মীয়দের সঙ্গে ছিলেন। তখন অবশ্য গাজা ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবতে পারেননি তাঁরা। কিন্তু রাফাহতে আসার পর প্রতিনিয়ত ‘বোমা আর মৃত্যুর ভয়াবহতা নিয়ে তাঁবুতে বাস করা’ রীতিমতো দুঃসহ হয়ে ওঠে। তখনই খুলুদের স্বামী মোহাম্মদ ঠিক করেন যে তাঁরা যেভাবেই পারেন, মিসর যাবেন। তারপর যা হয় হবে।
‘অন্তত বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ একটু যেন ভালো হয়, সেটা ভেবেই এ সিদ্ধান্ত নিতে হয়,’ বলেন খুলুদ। খুলুদ শিক্ষকতার পাশাপাশি গাজায় জাতিসংঘের একটি সংস্থার সঙ্গেও কাজ করতেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলের অভ্যন্তরে হামলা চালানোর পর প্রতিশোধ নিতে ইসরায়েল গাজার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করে। তখন থেকে এ পর্যন্ত আনুমানিক এক লাখ গাজাবাসী মিসরে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে গাজায় প্রতিনিয়ত মৃত্যুর বিভীষিকাকে সাময়িকভাবে পেছনে ফেললেও মিসরে তাঁদের জীবন বড্ড কঠিন ও অনিশ্চিত।
তারপর তাঁরা কেউ পারতপক্ষে এ নিয়ে কথা বলতে চান না পাছে আশ্রয়দাতা দেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার দায়ে খেদিয়ে দেওয়া হয় বা জোর করে গাজায় ফেরত পাঠানো হয়।কিংবা মিসরীয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের হয়রানি করতে পারে আর গাজায় থেকে যাওয়া স্বজনদের মিসরে আসার পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে—এমন আশঙ্কাও প্রবল।
তাই এ প্রতিবেদন তৈরিতে যাঁদের সঙ্গে কথাবার্তা বলা হয়েছে, এখানে তাঁদের পুরো নামধাম উল্লেখ করা হয়নি।
গাজা থেকে প্রাণ নিয়ে পালাতে খুলুদ ও মোহাম্মদকে শিশুদের জনপ্রতি ২ হাজার ৫০০ ডলার ও বড়দের জনপ্রতি ৫ হাজার ডলার করে মোট ১৭ হাজার ৫০০ ডলার দিতে হয়েছে একটি মিসরীয় কোম্পানিকে, যারা রাফাহ সীমান্ত অতিক্রম করে মিসরে প্রবেশের যাবতীয় ব্যবস্থা সম্পন্ন করেছে।
টেলিফোন পাওয়ার কয়েক দিন পর পরিবারটি রাফাহ সীমান্ত অতিক্রম করে মিসরে প্রবেশের মুখে অভিবাসন কর্মকর্তা তাঁদের পাসপোর্টে ৪৫ দিন মেয়াদি পর্যটন ভিসার সিলছাপ্পর মেরে দেন। রাফাহ থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে আরিশ হয়ে সিনাই মরুভূমির ওপর দিয়ে ৩১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে মিসরের রাজধানী কায়রো গিয়ে পরিচিত একটি পরিবারের বাড়িতে ওঠেন খুলুদ-মোহাম্মদ দম্পতি।
ওখানে তিন দিন থেকে কায়রোর দক্ষিণে গিজার উত্তরাঞ্চলে ইমবাবা নামের একটি মহল্লায় ছোট্ট একটি বাসা নেন তাঁরা। প্রতি মাসে ভাড়া গুনতে হয় ১৮৫ ডলার, যা একই ধরনের বাসার জন্য মিসরীয়দের দেওয়া ভাড়ার তিন গুণ। ‘গাজার ভেতরে ও বাইরে সবাই এ যুদ্ধ থেকে মুনাফা লুটতে চায়,’ ক্ষোভের সঙ্গে বলেন খুলুদ।
এখানে আসার পর মোহাম্মদ মাসখানেক কাজ খুঁজেছেন আর খুলুদ বাচ্চাদের নিয়ে বাসায় থেকেছেন। কারণ, বসবাসের পারমিট ছাড়া বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানো যায় না। মোহাম্মদ এরপর তিন সপ্তাহের জন্য দুটি রেস্তোরাঁয় কাজ করেন। তিনি ভোরে বাসা থেকে বেড় হতেন আর রাতে ক্লান্ত-বিধ্বস্ত হয়ে ফিরতেন।
এই দম্পতি অবশ্য সৌভাগ্যবান। কারণ, হাড়ভাঙা খাটুনির তিন সপ্তাহ পর গাজায় যে সংস্থা মোহাম্মদ কাজ করতেন, সেই সংস্থা মিসরের বাইরে তাঁর জন্য একটা কাজের ব্যবস্থা করে দেয়। ফলে খুলুদ ও তাঁর তিন সন্তান মিসরে সাময়িকভাবে বসবাসের অনুমতিপত্র লাভ করেন। ‘অভিবাসীদের তুলনায় আমাদের লড়াইটা ভিন্ন ও কঠিনতর,’ বলেন খুলুদ। এখানে যেসব ফিলিস্তিনি থাকছেন, সবার ক্ষেত্রেই একই কথা প্রযোজ্য।
এখানে প্রধান সমস্যা হলো মিসরে তাঁদের কোনো বৈধ অবস্থান নেই। তাই তাঁরা ফোনের সিম কার্ড কিনতে পারেন না, ব্যাংকে হিসাব খুলতে পারেন না, শিশুদের স্কুলে পাঠাতে পারেন না, এমনি মিসর ছেড়ে অন্য কোনো দেশে যেতেও পারেন না।
দুই.
এখন কায়রোতে বসবাস করছেন ৫৩ বছর বয়সী আয়েশা। তিনি স্বামী ও তিন সন্তান নিয়ে গাজা ছেড়েছিলেন ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে। ‘আমি ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে থাকতে পারি না। যদি যুদ্ধ থেমে যায়, তখন আমাদের কী হবে? আমাদের কি মিসর ছেড়ে চলে যেতে হবে?’ প্রশ্নগুলো করে নিজেই উত্তর দিলেন তিনি, ‘কিন্তু আমি গাজায় ফিরে যেতে চাই না। ওখানে সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। আমরা গৃহহারা হয়েছি, দেশহারা হয়েছি।’
গাজা নগরীতে কনটেন্ট এডিটরের কাজ করতেন ২৪ বছরের মোহানদ। তাঁর মা–বাবা আগেই মিসরে আসতে পেরেছিলেন। মোহানদ তাঁদের একমাত্র সন্তান হওয়ায় অসুস্থ বাবার সেবাযত্ন করার জন্য পরবর্তী সময় কায়রোয় আসার অনুমতি পান। তাঁদের ভ্রমণ ভিসার ৪৫ দিন মেয়াদ অনেক আগেই ফুরিয়ে গেলেও তাঁরা সাময়িক বসবাসের অনুমতিপত্র পাননি এখনো। ‘আর এই অনুমতিপত্র ছাড়া কোনো স্থায়ী বা ভালো কাজ খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। আমি তাই কোনোমতে অনলাইনে কাজ করে আর নিজের জমানো টাকা ভেঙে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি।’
গাজা ছেড়ে চলে আসার আগে মোহানদের প্রতিদিনের কাজ ছিল খাবার-পানি জোগাড় করা। ‘এখানে আমার দৈনিক কাজের অংশ হলো গাজার আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের খবর জানার চেষ্টা করা। তারা খাবার ও পানি পাচ্ছে কি না, নিরাপদে আছে কি না—এসব জানা,’ বলেন তিনি।
আসলে এটা তো শরণার্থী হিসেবে বেঁচে থাকার অনুভূতি। তাঁরা প্রতিনিয়ত অনুভব করেন, যেকোনো সময়ে তাঁদের মিসর থেকে চলে যেতে হতে পারে। মিসর কর্তৃপক্ষ এমন পদক্ষেপ নিতে পারে যে ফিলিস্তিনিদের বসবাস কঠিনতর হয়ে উঠতে পারে।
‘হয়তো আপনাকে সম্মান জানানো হচ্ছে, হয়তো গোটা মিসরবাসী আপনাকে ভালোবাসছে। কিন্তু দিন শেষে আপনি এখানে একজন অতিথি মাত্র,’ মোহানদ বলে চললেন। ‘মিসরীয়রা মেহমানদের সম্মান করে ঠিকই, কিন্তু আমাদের তো ভুললে চলবে না, আমরা কারা ও কোথা থেকে এসেছি। তাই আমাদের সব সময় চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হচ্ছে।’
তিন.
বিদেশিদের বিভিন্ন মেয়াদে অবস্থান করার জন্য মিসর সরকার বিভিন্ন রকম অনুমতিপত্র দিয়ে থাকে। এগুলোর মধ্যে আছে ভ্রমণ ভিসা, শিক্ষা ভিসা, বিনিয়োগ ভিসা, রিয়েল এস্টেট ক্রয়কারী ভিসা ও মিসরীয় নাগরিক বিয়ে করলে বিশেষ অনুমতিপত্র বা পারমিট।
গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে মিসর সরকার নতুন এক নিয়ম চালু করে। এতে বলা হয়, যুদ্ধের কারণে শরণার্থী হিসেবে কেউ সেখানে প্রবেশ করলে ও অনুমতিপত্র ছাড়া অবস্থান করলে এক হাজার ডলার জরিমানা গুনতে হবে। পাশাপাশি শরণার্থীর পক্ষে কোনো মিসরীয় নাগরিক বা বৈধভাবে অবস্থানকারী বিদেশি কাউকে জামিনদার হতে হবে, তা না হলে ওই শরণার্থীকে মিসর ছেড়ে চলে যেতে হবে।
স্বাভাবিকভাবেই এ আইন প্রাণ বাঁচাতে গাজা থেকে পালিয়ে আসা ফিলিস্তিনিদের জন্যও প্রযোজ্য। আয়েশা জানান, তাঁর ২৬ বছর বয়সী মেয়ে নিদ্দা একজন মিসরীয়কে বিয়ে করতে যাচ্ছেন, যদিও এটা তাঁর ইচ্ছা নয়।
‘গাজা থেকে চলে আসার আগে ওখানে এক চিকিৎসকের সঙ্গে ওর সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং ওদের প্রায় বাগ্দান হতে চলেছিল,’ বলেন আয়েশা। ‘কিন্তু যুদ্ধ শুরু হলে আমরা পালিয়ে আসি আর ছেলেটা গাজায় রয়ে যায়।’ ‘এরপর আমরা ওকে মিসরে নিয়ে আসার জন্য যা করা সম্ভব, তা–ই চেষ্টা করেছি, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।
ওদিকে সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। আমরাও কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছি। যুদ্ধ হয়তো শেষ হবে, কিন্তু আমাদের কী হবে? আমি জানি, আমার মেয়ে ওর হৃদয়কে গাজায় ফেলে এসেছে। আর একজন মিসরীয়কে বিয়ে করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা তো আমাদের জন্য, আমার জন্য, এখানে আমাদের ভবিষ্যতে নিশ্চিত করার জন্য,’ ভগ্ন কণ্ঠে বলে গেলেন আয়েশা।
তবে ফিলিস্তিনিদের সবাই যে খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছেন, তা–ও নয়। গাজা ছেড়ে চলে আসা সচ্ছল পরিবারগুলো এখানে ভালোভাবে খাপ খাইয়ে নিয়েছে, এমনকি কায়রোতে তাদের সমৃদ্ধি চোখে পড়ার মতো।
গাজার রিমালে এক বড়সড় রেস্তোরাঁর মালিক ছিলেন বাসসাম আবু আল-কুন। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি মিসর চলে আসেন। দুই মাস পর কায়রোর উত্তর-পশ্চিমের নাসর শহরে একটি রেস্তোরাঁ খুলেছেন। এখানে পালিয়ে আসা অনেক ফিলিস্তিনি জড়ো হয়েছেন। তিনি তাই জায়গার নাম দিয়েছেন রিমাল। ‘এই জায়গা আমাদের গাজার কথা মনে করিয়ে দেয়,’ বলেন আয়েশা। ‘জায়গাটাকে ইতিমধ্যে সবাই “লিটল গাজা” বলে অভিহিত করতে শুরু করেছে।’
এখানে গাজার আরেক ব্যবসায়ী তাঁর বুজা ও বারাদ আইসক্রিম পার্লার খুলেছেন, যা যুদ্ধের আগে উপত্যকায় খুবই জনপ্রিয় ছিল।
আয়েশার ভাষায়, ‘গাজায় যা ছিল মানুষজন এখানে তা আবার গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। ওখানকার আবহ, খাবার, স্বাদ। আর এ দুটি স্থান (রেস্তোরাঁ ও আইসক্রিম পার্লার) আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমরা কারা।’
মোহানদও গাজার অভাব ভীষণভাবে অনুভব করেন। তবে তিনি এটাও বোঝেন যে ওখানে ফিরে যাওয়া আসলে কোনো সমাধান নয়। ‘গাজা অবাসযোগ্য হয়ে গেছে, যা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই,’ হতাশ কণ্ঠে বললেন তিনি। ‘কেউ তো স্বেচ্ছায় শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চায় না। আমি তো নিজেকে জিজ্ঞাসা করি যে কীভাবে আমি ও আমার মতো অন্যরা নিজেদের অন্তরের গভীর ক্ষত আর বেদনাবহ স্মৃতি নিয়ে কোনো ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব।’
‘গাজার যা কিছু ধ্বংস হয়ে গেছে, তার সবকিছুর স্মৃতি আমাদের মনে গেঁথে রয়েছে,’ মোহানদ বলে চললেন। ‘আমরা ফিরে যেতে চাই, ফিরে পেতে চাই সেসব, যা আমাদের ছিল। কিন্তু সবার আগে আমি ওখানকার কবরগুলোর কাছে যেতে চাই, যেখানে আমার প্রিয়জনেরা শুয়ে আছে। আমি আরও চাই, ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া আমার ভালোবাসার মানুষদের দেহগুলোকে বের করে আনতে।’
চার
মিসর সরকারের আমলতান্ত্রিক হয়রানি ও ভীত আর প্রতিনিয়ত অনিশ্চয়তার মধ্যে বাস করতে থাকা ফিলিস্তিনিদের অনেকেই এখন প্রবল অপরাধবোধে ভুগছেন তাঁদের সেসব আত্মীয়-পরিজন, বন্ধু ও অন্য গাজাবাসীর জন্য, যাঁরা তাঁদের মতো সৌভাগ্য নিয়ে পালিয়ে আসতে পারেননি।
‘আমাকে পালাতেই হয়েছে,’ ৩৮ বছর বয়সী কনটেন্ট ক্রিয়েটর মাহা বলেন। ‘গাজা শহর ছেড়ে আমরা দক্ষিণে সরে যেতে বাধ্য হয়েছিলাম। এ সফরে আমি ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়ি। সেই সঙ্গে ভয় সব সময় তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল। তাই আমার স্বামী ঠিক করেন, আমাদের মিসরে চলে যাওয়া উচিত। এখানে আসার পর আমাদের জীবনের সবকিছু বদলে গেছে। তবে আমি এখনো অনুভব করি না যে আমি গাজা থেকে চলে এসেছি।’
‘আমার পুরো পরিবারই তো ওখানে রয়ে গেছে,’ কান্নাভেজা কণ্ঠে মাহা বলে চললেন।
‘শারীরিকভাবে আমি মিসরে থাকলেও মানসিকভাবে, আবেগের সঙ্গে আমি তো গাজায় আছি। মিসর তো আমাদের কাছে গ্রীষ্ম অবকাশ কাটাতে যাওয়ার জায়গা, যদিও আমি এখন তা মোটেও উপভোগ করছি না।’
মাহা এ–ও বলেন, প্রতি মিনিটে তাঁকে তাড়িয়ে বেড়ানো মৃত্যুকে ফাঁকি দিয়ে আসতে পেরেছেন বটে, কিন্তু তাঁকে এখন এক অপরাধবোধ তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। ‘আমি যখন সুউচ্চ ভবন আর সুদৃশ্য ঘরবাড়ি দেখি, তখন আমার খালি মনে হয়, গাজার ঘরবাড়ি ও ভবনগুলো যদি এ রকমই থাকত।’
‘যখন আমি খেতে বসি, আমার পরিবারের লোকজনের কথা মনে হয়’, বলতে বলতে মাহার গলা ধরে আসে। ‘ভীষণ কষ্ট হয় এই ভেবে যে আমি যা খাচ্ছি, তা যদি ওরা খেতে পারত, আমার বাবা যদি তাঁর পছন্দের কফির কাপে চুমুক দিতে পারত, চারপাশে কোনো শব্দ ছাড়াই একটু ঘুমাতে পারত, আর আপনমনে গাছপালা ও ফুলের দিয়ে একদৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকত পারত!’
মাহা জানান, তিনি এখানে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না। একবার একটানা চার রাত নির্ঘুম কাটিয়েছিলেন। কারণ, যখন তিনি ঘুমের কোলে ঢলে পড়েন, তখনই বোমা, পলায়ন আর ছোটাছুটির দুঃস্বপ্ন তাঁকে চেপে ধরে।
মিসরে বা অন্য কোনো দেশে তিনি তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে কী ভাবছেন, জানতে চাইলে মাহা বলেন, এ রকম ভাবা খুব বেদনাদায়ক। ‘আমি এখনো গাজায় ফিরে যেতে চাই,’ তিনি বলেন। ‘যুদ্ধে আমি ভাইকে হারিয়েছি। আমি ওর অভাবটা খুব অনুভব করি। আমি গাজায় গিয়ে ওর কবরটা নিজ চোখে দেখা না পর্যন্ত বিশ্বাস করতে পারছি না যে ও নেই। আশা করি, কবরটা এখনো আছে।’
‘আপনাদের কাছে বড় অদ্ভুত শোনাতে পারে, কিন্তু আমি অনুভব করি যে সবকিছুর পরও গাজায় জীবন সহজ ছিল,’ মাহা বেদনার্ত স্বরে বললেন। ‘সেখানে সবাই প্রতিনিয়ত অনুভব করে যে তারা যেকোনো সময়ে মরতে যাচ্ছে। কারণ, মৃত্যুই তাদের নিয়তি। আমরা ফিলিস্তিনিরা যারা পালিয়ে মিসরে এসেছি, তারা জানি না যে বাঁচতে হবে না মরতে হবে।’
- ইসরায়েলের প্রগতিশীল দৈনিক হারেৎজ থেকে নেওয়া
- ইংরেজি থেকে রূপান্তর: আসজাদুল কিবরিয়া
* শিরিন ফালাহ সাব, আরব-ইসরায়েলি সাংবাদিক।
![]() |
| রাফা সীমান্তে এক ফিলিস্তিনির কাগজপত্র যাচাই করছেন মিসরীয় পুলিশ। ছবি: রয়টার্স |

No comments